স্পোর্টস ডেস্ক: সদ্য সমাপ্ত অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম তিন টেস্টে জিতে সিরিজ নিশ্চিত করেছিল অস্ট্রেলিয়া। শেষমেশ পঞ্চম টেস্টেও জিতল প্যাট কামিন্স বাহিনী। রবিবার (১৬ জানুয়ারি) তাদের জয় ১৪৬ রানে। তবে বৃষ্টিবিঘ্নিত চতুর্থ টেস্টটি ড্র হওয়ায় হোয়াইটওয়াশ থেকে রক্ষা পেল ইংল্যান্ড।
অথচ কে বলবে এই দলটাই অ্যাশেজ শুরুর আগে যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রবল বিতর্কে পড়েছিল। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের অধিনায়ক টিম পেইনকেও কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল। পর্যুদস্ত দলটাই অভিজ্ঞ পেসার প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, দীর্ঘদিন থেকে চালু থাকা প্রথা অনুযায়ী ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের পর শ্যাম্পেন নিয়ে উৎসবে মাতে ক্রিকেটররা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডকে নাকানিচুবানি খাইয়ে সিরিজ জেতার পরও এমন উদযাপন ছিল অবধারিত। কিন্তু এবার সেই চিরচেনা চিত্র পাল্টে গেল।
সিরিজ জয়ের অন্যতম কারিগর মুসলিম ক্রিকেটার উসমান খাজার প্রতি সম্মান প্রদর্শনে শ্যাম্পেন নিয়ে উদযাপনে বাধ সাধেন খোদ অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। কারণ এভাবে উদযাপন করলে ঐতিহাসিক মুহূর্তটির অংশ হতে পারবে না খাজা। কামিন্সের এমন নজিরবিহীন আচরণ এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভক্তদের মন জয় করে নিয়েছে।
শিরোপা জেতার পর পডিয়ামে উল্লাস করছিল টিম অস্ট্রেলিয়া। রীতি অনুযায়ী তখন শ্যাম্পেনের বোতল এনে উদযাপন করার পরিকল্পনা করছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু উসমান খাজা অ্যালকোহল থেকে নিজেকে দূরে রাখার জন্য পডিয়ামের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেটা খেয়াল করে কামিন্স সঙ্গে সঙ্গে বোতল সরিয়ে নিতে বলেন এবং খাজাকে পডিয়ামে ডেকে তোলেন। আর এ দৃশ্যটাই হৃদয় ছুঁয়ে গেছে ক্রীড়ানুরাগীদের।
এদিকে, খাজার সঙ্গের এ ঘটনাটি শুধু মাঠের খেলায় নয় বাইরেও সতীর্থদের দেখভাল করতে পারার ক্ষমতা কামিন্সের অধিনায়কত্বের দক্ষতা হিসেবে সবার সামনে তুলে ধরছে যেন। এর আগেও অধিনায়ক হিসেবে বেশ কয়েকবার নিজের বড় মানসিকতার জানান দিয়েছিলেন কামিন্স।
প্রথাগতভাবেই মদপ্রিয় অস্ট্রেলিয়ানরা এই মুসলিম ক্রিকেটারের জন্য শিরোপা হাতে ছবি তোলে শ্যাম্পেইনের বোতল দূরে রেখে। খাজা যেন দলীয় ছবিতে থাকতে পারেন সেজন্যেই এই পদক্ষেপ অজিদের। অবশ্য এরপরই পোডিয়াম থেকে নেমে সতীর্থদের শ্যাম্পেইন হাতে উদযাপনের সুযোগ করে দেন এই মুসলিম ক্রিকেটার।
কামিন্সের এমন দৃষ্টান্ত সাড়া ফেলেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অস্ট্রেলিয়া দলের নেতৃত্ব যোগ্য হাতে রয়েছে বলে মত অনেকের। কেউ বা প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন উসমান খাজার ধর্মের প্রতি আনুগত্যকে। তবে সব ছাপিয়ে অস্ট্রেলিয়ানরা যে দলগতভাবে কতটা ঐক্যবদ্ধ, তা ফুটে উঠল আরেকবার।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত খাজার ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে ওঠার যাত্রাটা সহজ ছিল না। অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার পথে বাধা হয়ে উঠেছিল তার ধর্মীয় বিশ্বাস। একবার তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সবাই বলতো, আরে আয় একবার টেস্ট (মদ) করেই দেখ। আমি কখনোই মনোবল হারাইনি। তবে শুধু এ বিষয়টি ছাড়া আর সব ক্ষেত্রেই আমি সাধারণ অস্ট্রেলিয়ানের মতো হয়ে উঠতে চেয়েছি।
তবে একসময় খাজার কাছেও মনে হয়েছিল, হয়ত সবার সঙ্গে মদ্যপানের সেই আড্ডায় না যেতে পেরে অনেক কিছু মিস হয়ে যাচ্ছে। কেবল ভাবতাম, আহা আমি তাদের একজন হওয়ার সুযোগ হারাচ্ছি হয়ত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।