জুমবাংলা ডেস্ক : বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা সামছ আরা জাহান। রাজধানীর ইডেন সরকারি মহিলা কলেজে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ছিলেন। সেখানে চাকরিরত অবস্থাতেই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। পরে তাকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) সংযুক্তি দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১২ মে তিনি মারা যান।
এর চার মাস পর ১৭ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার সামছ আরা জাহানকে (আইডি-১৮১৬২) ফরিদপুরের সদরপুর সরকারি কলেজে সহকারী অধ্যাপক (উদ্ভিদবিদ্যা) পদে বদলির আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সরকারি কলেজ-১ শাখা থেকে উপ-সচিব ফরহাদ হোসেনের স্বাক্ষরে এ আদেশ জারি করা হয়।
শুধু মৃত শিক্ষককে বদলি নয়, নিয়মে না থাকলেও প্রেষণে এবং অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (পিআরএল) থাকা শিক্ষককেও বদলির আদেশ জারি করা হয়েছে একই স্মারকে।
মৃত শিক্ষককে বদলি করার ঘটনায় শিক্ষা ক্যাডারে কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। সামছ আরা জাহানের স্বামী বিসিএস অডিট ক্যাডারের কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলমের সঙ্গে শুক্রবার দেশের জনপ্রিয় একটি দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদকের কথা হয়। মাহবুবুল আলম বর্তমানে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের লগ এরিয়ায় ফাইন্যান্স কন্ট্রোলার (আর্মি) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ক্যান্সারে ভুগে আমার স্ত্রী গত ১২ মে মারা যান। তাকে বদলির বিষয়টি বিস্ময়কর। কারণ নিয়মমাফিক আমি স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে লিখিতভাবে জানিয়েছি। মাউশি থেকে গত ৬ জুলাই আমার স্ত্রীর ল্যাম্পগ্র্যান্ট ইতিমধ্যে মঞ্জুর করা হয়েছে।’
মাহবুবুল আলম জানান, তাদের দু’টি সন্তান। কন্যা এ বছর অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। একটি পুত্রসন্তান হওয়ার পর সাড়ে সাত মাসের মাথায় মারা যায়। এরপরই সামছ আরা জাহানের ক্যান্সার ধরা পড়ে।
সামছ আরা জাহানের প্রাপ্য পাওনা পরিশোধ সংক্রান্ত মাউশির সাধারণ প্রশাসন শাখার উপ-পরিচালক মো. রুহুল মমিনের স্বাক্ষরিত পত্রটিও হাতে এসেছে। ১২ মে সামছ আরা জাহান মারা গেছেন মর্মে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে তাতে।
সামছ আরা জাহানসহ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের মোট ৫৭জন কর্মকর্তাকে একযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার বদলি করা হয়। তাদের মধ্যে ১৩ জন অধ্যপক, ২৭ জন সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৭ জন সহকারী অধ্যাপক রয়েছেন।
সামছ আরা জাহানের সঙ্গে একই স্মারকে বদলি করা হয়েছে সহকারি অধ্যাপক (ভূগোল) নিগার সুলতানা পারভীনকে (আইডি-১৩৬১৬)। ওএসডি থাকা এই কর্মকর্তাকে ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে সহকারী অধ্যাপক (ভুগোল) পদে বদলি করা হয়। জানা গেছে, এই কর্মকর্তা এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে পিএইচডি করার অনুমতি পেয়েছেন। প্রাইম মিনিস্টার ফেলোশিপ নিয়ে তিনি অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার অনুমতি পান। এরই মধ্যে তার ভিসা হয়েছে এবং করোনার কারণে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ফ্লাইট অ্যাভেইলেবল না থাকায় তিনি আটকা পড়েছেন। নিয়মানুযায়ী, প্রেষণ মঞ্জুর হওয়ায় তার বদলি হওয়ার কথা নয়। এরপরও তাকে বদলি করা হয়েছে।
একই দিন সরকারি কলেজ-২ শাখা থেকে নীলফামারি সরকারি কলেজের অধ্যাপক (বাংলা) পদে বদলি করা হয়েছে অধ্যাপক সৈয়দ মো. মোজাম্মেল হককে (আইডি-৮১০৬)। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই শিক্ষক চলতি বছরের মার্চ মাসে অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (পিআরএল) গেছেন। পিআরএলে থাকা এই কর্মকর্তাকেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বদলি করেছে।
ভূতুড়ে এসব বদলি প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চেষ্টা করেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি কলেজ-১ শাখার উপ-সচিব ফরহাদ হোসেনকে পাওয়া সম্ভব হয়নি। তার শাখা থেকে মৃত ও প্রেষণে থাকা শিক্ষকদের বদলি করা হয়েছে। তবে সরকারি কলেজ-২ শাখার উপ-সচিব শ্রীকান্ত কুমার চন্দ শুক্রবার বিকেলে বলেন, ‘বিষয়গুলো আমার জানা নেই। আমার শাখা থেকে পিআরএলে থাকা শিক্ষক বদলি হয়ে থাকলে তার জন্য মাউশি দায়ী। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আমরা কর্মকর্তাদের বদলি করেছি।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘মৃত, প্রেষণে ও পিআরএলে থাকা কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়ে থাকলে তা খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাজনক কাজ হয়েছে। মাউশির দেওয়া তালিকা অনুসারে আমরা বদলি করেছি। মাউশির দায়িত্ব ছিল সঠিক তথ্য দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করা।’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বিস্তারিত তথ্য আমাকে দিন।আমি কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
সূত্র : সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।