জুমবাংলা ডেস্ক : বগুড়ার শেরপুরে অটোরিক্সা চালক মিনহাজকে (২২) খুনের পর গুম করে রাখা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ছিনতাই নাটক সাজাতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়া খুনি ফজলে রাব্বির দেখানো মতে পুলিশ শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের জোড়গাছা গ্রামের একটি ধান ক্ষেতে গুম করে রাখা মরদেহ উদ্ধার করে। বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) দুপুর ১টায় গ্রেফতারকৃত ফজলে রাব্বিকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে মিনহাজের মরদেহ উদ্ধার করে। রাব্বি সিরাজগঞ্জ ইসলামিয়া ডিগ্রী কলেজের ইতিহাস বিষয়ে অনার্স শেষ বর্ষে পড়ুয়া ছাত্র
পুলিশ জানান, দু্ই বন্ধু তাদের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। মিনহাজ রাব্বিকে খুব বিশ্বাস করত। তারা একত্রে অনেক জায়গায় গিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কাজিপুর থানার সোনামুখীতে এক মেয়ের কাছে মিনহাজ এবং রাব্বি গিয়েছিল। মিনহাজ ঐ মেয়ের সাথে রাব্বির অন্তরঙ্গ অবস্থার একটি ছবি তুলে। এ ছবি নিয়ে মিনহাজ রাব্বিকে ব্ল্যাকমেল করে টাকা নিত। রাব্বি বিবাহিত কিন্তু বেকার, তার কিছু টাকার প্রয়োজ হয়। টাকার জন্য সে মিনহাজকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় সে গত ২৭ সেপ্টেম্বর শেরপুর শেরুয়া বটতলার সুমনের অটোরিকশা মেরামতের দোকানে এসে একটি পুরাতন অটোরিকশা বিক্রয় করলে তারা কিনবে কিনা তা জানতে চায়। সুমন কিনতে চাইলে রাব্বি সেদিন চলে যায় এবং মিনহাজকে খুন করে তার অটোরিকসা বিক্রির পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাব্বি ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিশ্বহরিগাছা বাজার থেকে ঘুমের ট্যাবলেট কিনে। এরপর বিকেল পৌনে ৪টায় তার মোবাইল থেকে সিম খুলে মোবাইল বন্ধ করে যাতে ট্র্যাকিং করে তাকে ধরা না যায়। সে বিকেল সাড়ে ৪টায় ধুনটে এক ঔষধের দোকানদারের মোবাইল থেকে মিনহাজকে ডেকে নেয়। এরপর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রাত ৮টায় শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের জোরগাছা এলাকায় পৌছে। সেখানে দোকান থেকে স্পিড (কোল্ড ড্রিংকস) কিনে নেয়। এরপর একজনের বাড়িতে অটোরিকশা রেখে ধান ক্ষেতের ভিতর দিয়ে মাঠের অন্য প্রান্তে যাওয়ার কথা বলে। এক পর্যায়ে সে মিনহাজকে ঘুমের ট্যাবলেট মিশানো স্পিড খাওয়ায়। এরপর ক্ষেতের আইলে ১০ মিনিট বসে থাকে যাতে মিনহাজ ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। যখন মিনহাজ ঘুমে টলানো শুরু করে তখন রাব্বি আচমকা তাকে চাকু দিয়ে আঘাত করে। মিনহাজ চিৎকার করলে রাব্বি ডান হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে। মিনহাজ রাব্বির আঙুলে কামড় দেয়। রাব্বি তখন চাকু দিয়ে মিনহাজের মুখে এলোপাথাড়ি আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে রাব্বি চাকু এবং মিনহাজের মোবাইল ঘটনাস্থলের পাশে ফেলে দিয়ে অটোরিকশা কাছে আসে। এরপর অটোরিকশা নিয়ে শেরপুর বটতলা সুমনের দোকানে আসে। রাতে সুমন অটোরিকশা কিনতে অস্বীকার করায় সে সুমনের দোকানে কর্মরত মিরাজকে সাথে নিয়ে অটোরিকশা বিক্রির চেষ্টা করে। বিক্রি না হওয়ায় অটোরিকশাটি ধুনট থানার আওলাকান্দির একটি নির্জনস্থানে ফেলে রাব্বি শেরপুর হাসপাতালে ভর্তি হয়।
৩০ সেপ্টেম্বর সকালে রাব্বি ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে সে এবং অটোরিকশা চালক মিনহাজ ছিনতাই এর কবলে পড়েছিল এবং মিনহাজকে তার পূর্ব পরিচিত শত্রুরা ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করে। তার এ রকম অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেরপুর সার্কেল মোঃ গাজিউর রহমানের নেতৃত্বে শেরপুর এবং ধুনট থানা পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ শুরু করে। পুলিশ সুপার মোঃ আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) স্যারের নির্দেশে রাব্বিকে নিয়ে শেরপুর সার্কেল অফিসার ঘটনাস্থলে যায়। রাব্বির কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হয়। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মুখে রাব্বি মিনহাজকে হত্যা করে লাশ জোড়গাছার ধানের ক্ষেতে ফেলে রাখার কথা স্বীকার করে। তাকে নিয়ে পুলিশ সুপার বগুড়া মোঃ আলী আশরাফ বিপিএম (বার) মহোদয়ের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোঃ আব্দুর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেরপুর সার্কেল মোঃ গাজিউর রহমান, শেরপুর থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও ভারপ্রাপ্ত ওসি আবুল কালাম আজদসহ শেরপুর থানার ফোর্সের সহায়তায় উপস্থিত হাজার হাজার লোক এবং সাংবাদিকগণের সামনে আসামী রাব্বির দেখানোমতে আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১২টায় শেরপুরের জোড়গাছা ধান ক্ষেত থেকে মিনহাজের মৃত দেহ উদ্ধার করে। লাশ পোস্ট মর্টেমের জন্য শহীদ জিয়া হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা হয়নি, মামলা প্রক্রিয়াধীন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।