জুমবাংলা ডেস্ক: মেহেরপুর জেলায় ৪শটি বাণিজ্যিকসহ ২৮ হাজার পারিবারিক খামার মালিক। জেলায় পারিবারিক ও বাণিজ্যিক খামারে ১ লাখ ৮৪ হাজার গবাদিপশু পালিত হচ্ছে। এরমধ্যে কোরবাণীর জন্য প্রস্তুত হয়েছে ৭৮ হাজার গবাদি পশু। সারা বছর খামারে পরিশ্রম ও বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করার পর এখন পশুর বাজার ও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
জেলার বেশ কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা গেছে, নেপালী, অস্ট্রেলিয়ান, ফিজিয়ান, হরিয়ানাসহ নানা জাতের গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। বিভিন্ন খামারীর সাথে কথা হয়েছে। তাদের চোখে মুখে দেখা গেছে আনন্দ আবার চিন্তার ভাজ।
দরিদ্র কৃষকের বাড়িতে দুয়েকটি করে গরু পালন হলেও খামারে রয়েছে অনেক। বসতবাড়িতে গরু পালন করা প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক পরিবারে। সারা বছর গরু পালনের পর এখন এসেছে কাঙ্খিত বিক্রির সময়। কোরবানীর চাহিদা লক্ষ্য করেই শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা চলছে। স্বপ্নের গরু বিক্রির টাকায় মিটবে পরিবারের চাহিদা। বাড়তি অর্থ দিয়ে আবারও নতুন গরু কেনার লক্ষ্য রয়েছে গরু পালনকারী পরিবারগুলোতে।
গাংনীর গরুর খামারী এনামুল হক জানান, গ্রাম থেকে শহর গরু পালন হচ্ছে সমানে। গ্রামের একেকটি বাড়ি যেন একেকটি খামার। পরিবার প্রধান নারী-পুরুষ মিলে পরিচর্যা করেন গরুগুলো। পরম যতেœ নিজের সন্তানের মতই আদর করা হয়। এ গরুগুলো যেন তাদের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। পুষ্টিসম্মৃদ্ধ খাবার ও সঠিক পরিচর্যায় গরুগুলো বেড়ে ওঠে কাঙ্খিত মাত্রায়। জেলার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বড় ধরনের ভ’মিকা পালন করছে গরু পালন। তার খামারে আছে ৩৫টি গরু। প্রতিবছর চট্টগ্রামের ব্যাপারীরা কিনে নিয়ে যায়। এবারও অনলাইনে তারা গরু দেখেছে। তিনি আশা করছেন এবারও তিনি লাভবান হবেন।
নানা রঙের স্বপ্নের জাল বোনা সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের রেবেকা খাতুন জানান- তিনি গত কোরবানীর পর ৪০ হাজার টাকায় একটি বাছুর গরু কেনেন। লালন পালনে খরচ গেছে ৩০ হাজার টাকা। তিনি একলাখ টাকায় গরুটি না বিক্রি হবে বলে আশা করছেন। তারমতো ওই গ্রামে অন্তত ৩০টি পরিবারে একটি করে গরু পালন করেছেন কোরবানীর জন্য। এ গরু পালন করেই সফলতার মুখ দেখছেন তারা। করনার কারণে এবার চিন্তায় আছেন সঠিক দাম পাবেন কি না।
সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের খামার মালিক জিল্লুর রহমান জানান, এবার কোরবানী সামনে রেখে লাভের আশায় ৬০টি গরু ও ১শ টি ছাগল প্রস্তুত করেছেন। করোনায় কোরবানীর পশু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় তিনি। তবে প্রশাসন অনলাইনে পশু বিক্রি করার জন্য বলছেন। কিন্তু অনলাইনে তেমন ক্রেতা পাওয়া যায় না। তিনি বলেছেন- এবার বিনিয়োগও করেছেন প্রচুর অর্থ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় এবং লকডাউন শুরু হওয়ায় এখন গরু ও ছাগলের বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
একই কথা জানান উজ্জলপুর গ্রামের প্রান্তিক খামার মালিক তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, কোরবানী সামনে রেখে পরিবারের সর্বস্ব ব্যয় করে তিনি তিনটি গরু মোটাতাজা করেছেন। নিজে ঠিকমতো না খেয়ে গরুর পেছনে ব্যয় করেছেন অর্থ ও শ্রম। এখন দেশের যে অবস্থা, তাতে সঠিক দাম না পেলে পথে বসতে হবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি। তাজুলের মতো শঙ্কা ব্যক্ত করেন মেহেরপুর জেলার খামার মালিকরা।
মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: সাইদুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসনের সাথে খামারীদর বিষয়ে কথা হয়েছে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাট চালু করা হবে। গত বছরও কোরবানীর সময় করোনা পরিস্থিতি ছিল। এবারও তেমন হলে মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের উদ্যোগে ‘অনলাইন পশুর হাট মেহেরপুর’ নামে অনলাইনে পশু বেচাকেনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এতে খামার মালিকরা তাদের প্রস্তুত করা পশুর ন্যায্য দাম পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরো জানান, কোরবানী সামনে রেখে এবার মেহেরপুর জেলার ৪শটি বাণিজ্যিকসহ পারিবারিকভাবে ২৮ হাজার খামারে ১ লাখ ৮৪হাজার পশু পালিত হচ্ছে। এর মধ্যে কোরবাণীর জন্য প্রস্তুত হয়েছে ৭৮ হাজার পশু। জেলার চাহিদা মিটিয়ে ৫০ হাজার পশু দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হবে বলেও জানান তিনি। সূত্র: বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।