জুমবাংলা ডেস্ক : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আলাইয়াপুর ইউনিয়নে মাদ্রাসা ছাত্রীকে একাধিক বার গণধর্ষণ, ভিডিও ধারণ ও অপহরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী বিউটি আক্তারের বিরুদ্ধে উল্টো এবার মামলা করেছেন বেগমগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ।
অভিযোগ রয়েছে, বিউটি নিজের মেয়েকে (১৭) জোরপূর্বক যৌন ব্যবসায় বাধ্য করে। মামলায় বিউটি ছাড়াও আলাইয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানসহ আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন।
মঙ্গলবার (২ মার্চ) দুপুরে বেগমগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।
পুলিশ জানান, মামলায় অভিযুক্ত ১নং আসামি গত বৃহস্পতিবার রাতে তার মেয়েকে (১৭) ধর্ষণ, বিবস্ত্র করে ছবি ধারণ ও অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে চারজনের বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। মামলার সূত্র ধরে অভিযান চালিয়ে আসামি ফয়সাল, সাইফুল ইসলাম ইমন ও জোবায়েরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার সাভারের পূরগাঁও এলাকার রুবি নামের একজনের বাসা থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন ভিকিটিম অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৩ এ বিচারকের কাছে স্বেচ্ছায় ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।
আরো জানান, জবানবন্দি ও মামলার তদন্ত করতে গিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সাথে ভিকটিম ধীতপুর দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ালেখা করত। ২০১৭ সাল থেকে ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ সাল পর্যন্ত ভিকটিমকে দিয়ে তার মা বিউটি আক্তার জোরপূর্বক টাকার বিনিময়ে দেহ ব্যবসা করাত। বিভিন্ন লোকের থেকে টাকা নিয়ে নিজের মেয়েকে কখনো নিজ বাড়িতে, কখনো ঢাকা চট্টগ্রামে যৌনকাজের জন্য পাঠাতো বিউটি। বিষয়টির প্রতিবাদ করলে কয়েকবার ভিকটিমের হাত-পা বেঁধে মারধর করে বিউটি। আগের মামলার সাক্ষী ও বর্তমান মামলার আসামি মোজ্জামেল হোসেন বিউটিকে টাকা দিয়ে ঘরে এসে ওই ছাত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করত।
একরাতে মোজাম্মেলের সাথে যৌনকাজে লিপ্ত হলে স্থানীয় ফয়সাল ও জোবায়ের দেখে তাদের দুজনের বিবস্ত্র ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে। পরে তার মোজাম্মেলকে বের করে দিয়ে ওই রাতে ভিকটিমকে গণধর্ষণ করে ফয়সাল ও জোবায়ের। পরে বিউটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের থেকে টাকা নিয়ে তার বাড়িতে পাঠায় ওইছাত্রীকে। চেয়ারম্যান আনিস নিজ বাড়িতে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে ভিকটিমকে।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার বিকালে আলাইয়াপুর ৬নং ওয়ার্ড নাফিতের পোল এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও হীরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মনববন্ধন করে স্থানীয় এলাকাবাসী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভিকটিম ও গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জবানবন্দির আলোকে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে ওই ছাত্রীকে শারীরিক নির্যাতন, আটক রেখে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্যকরণ, অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে যৌন শোষণ ও স্থানান্তরিত করে যৌনকর্ম করার অপরাধে বিউটি ও আলাইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিসসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মানব পাচার ও দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত বিউটি কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান আনিসসহ মামলার অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরো জানান, ঢাকার সাভারের পূরগাঁও এলাকার রুবি নামের একজনের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া ভিকটিমকে বর্তমানে চট্টগ্রামের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে।
বেগমগঞ্জ থানার ওসি কামরুজ্জামান সিকদার জানান, মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণ, অপরহণ, নগ্ন ভিডিও ধারণের ঘটনায় আগে দুটি ও মানব পাচার দমন আইনে আরও একটি মামলা হয়েছে। মামলায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।