স্পোর্টস ডেস্ক : প্লে স্টেশনের গেম আর সিমুলেটর থেকে মোটর রেসিংয়ের বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন অভীক আনোয়ার। পুরো নাম এইচ এম তৌহিদ আনোয়ার অভীক। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল রেসিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তার গতিময় জীবনের গল্প শোনাচ্ছেন আল সানি।
মাল্টিক্লাস রেসিং প্রতিযোগিতা। শিরোনাম ন্যাশনাল রেসিং চ্যাম্পিয়নশিপ। মোট ছয়টি রাউন্ড। প্রতিটি রাউন্ডে দুটি করে রেস। প্রতি রেসে ১২টি ল্যাপ এবং ১৭ জন প্রতিযোগী। সব কিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মোটর রেসের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন অভীক আনোয়ার। গত শনিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় অভীক প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই সাফল্য পান। নিজের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ মোটর স্পোর্টস দলের হয়ে এই শিরোপা অর্জন করেন তিনি।
এমিরেটস মোটর স্পোর্ট অর্গানাইজেশন (ইএসএমও) আয়োজিত ইএসএমও-ন্যাশনাল রেসিং চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতার ‘৮৬ ক্যাটাগরি’তে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন অভীক। ছয় রাউন্ডে শেষ হওয়া এই প্রতিযোগিতার প্রথম রাউন্ডটি হয়েছিল গত বছরের নভেম্বরে। দুবাই অটো ড্রামের রেসিং ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য সর্বসাকুল্যে ৪.৪ কিলোমিটার। তবে প্রতি রেসে ১২টি করে ল্যাপ সম্পন্ন করতে হয়। রেসের সময়সীমা মাত্র ৩০ মিনিট। গত শনিবারেও হয়েছিল দুটি রেস; দুবাইয়ের স্থানীয় সময় দুপুর ২টায়, অন্যটি বিকেল ৪টায়। শেষ দুটি রেসে অভীক মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলেও ছয় রাউন্ড শেষে সবার ওপরেই ছিল অভীকের নাম। শেষ রাউন্ডে অভীক ট্র্যাকে না নামলেও জয়টা একপ্রকার নির্ধারিতই ছিল। কারণ পঞ্চম রাউন্ড শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রতিযোগীর চেয়ে অভীক এগিয়ে ছিলেন ৫৩ পয়েন্টে। ৮৬ ক্যাটাগরিতে শিরোপা জেতার সময় অভীকের সর্বমোট পয়েন্ট ছিল ৩১০। অন্যদিকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কট ডিমেলারের মাত্র ১৯১!
‘ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশের ১৭ জন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিলেন এই প্রতিযোগিতায়। মাত্র ১১ বছর বয়সেই গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাত, এরপর ফর্মুলা ওয়ান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে মাইকেল শুমাখার ও মিকা হ্যানিকেনের প্রতি টান আর শেষ অবধি ২০০৭ সালে রেসিং ট্র্যাকে।
২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ সালে আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত র্যালি ক্রস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে ব্যাক টু ব্যাক চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। দেশের পাট চুকিয়ে ভিনদেশে গেয়ে নিজের প্রতিভার ঝলক দেখানোর পালা শুরু হয় অভীকের। চলে গেলেন ভারতে। ভারত থেকে পরীক্ষা দিয়ে রেসিংয়ের লাইসেন্স নিয়ে নিলেন। ইন্টারন্যাশনাল মোটর স্পোর্টসের আয়োজনে ২০১৭ সালে ভারতে প্রথম রেসে অংশ নেন অভীক। প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নেমেই চতুর্থ। স্বপ্নের শুরুটা এভাবেই। তবে পরের দুই বছর আবার ছন্দঃপতন। ২০১৯-এর আগস্টে মালয়েশিয়ার ফর্মুলা ওয়ান ট্র্যাক সেপাং আন্তর্জাতিক সার্কিটে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন। অভীকের যাত্রার শুরু এভাবেই।
বিশ্বকাপে মেয়েদের ঐতিহাসিক জয়ে মাশরাফি-সাকিব-তামিমদের উচ্ছ্বাস
অভীকের মতে এখনো বাংলাদেশে একদম অপ্রচলিত খেলা হিসেবে মটর রেসিংয়ে স্পন্সরশিপের সমস্যা আছে। প্রতিটি ইভেন্টে অংশগ্রহণ মানেই প্রায় অর্ধকোটি টাকা খরচ। সেখানে স্পন্সর ও বিভিন্ন বিপণন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অর্থের বাইরেও নিজের পকেট থেকে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। রেসিংয়ে এক নাম্বার হওয়ার পাশাপাশি গাড়ির ব্যবসা ও গাড়ির রিভিউ দুটিতেই অভীক এখন এক নাম্বার। অভীকের দুটি ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ থেকে ঘুরে এসে মোটর কারের বর্তমান হালচাল সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা যে কেউ নিতে পারেন। ফেসবুক পেজে প্রায় তিন লক্ষ অনুসারী। অভীক ছুটে চলছেন তীব্রগতিতে, সাথে গতি যোগ করছেন বাংলাদেশের মোটর কার শিল্পে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।