জুমবাংলা ডেস্ক : ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার কোভিড-১৯ সংক্রমণের নমুনা পরীক্ষার জন্য কেবল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে স্থাপিত একমাত্র পিসিআর ল্যাবই ভরসা। প্রায় দেড় কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ বিভাগে করোনার নমুনা পরীক্ষা আপাতত আর অন্য কোনো স্থানে হচ্ছে না।
ফলে শুরু থেকে এই ল্যাবে দিনরাত পরিশ্রম করেও হাতে আসা নমুনা সময়মতো পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ওই ল্যাবের চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানরা। প্রতিদিন দুটি শিফটে ৯৪টি করে মোট ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। ইদানিং কোভিড-১৯ নমুনা বেশি সংখ্যক আসায় সাত শতাধিক নমুনা এখনো পরীক্ষার জন্য অপেক্ষমান।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে শেরপুর জেলার কোনো নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। ওই এলাকার রোগীদের চিহ্নিত করতে না পারায় সংক্রমণের ঝুঁকির সঙ্গে সঙ্গে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। জামালপুর মেডিকেল কলেজে আরও একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এখনো এর অনুমোদন মেলেনি।
বিষয়টি নিয়ে ময়মসনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর চিত্তরঞ্জন দেবনাথ জানান, কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে পিসিআর ল্যাবে প্রতিদিন দুই শিফটে ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তবে ইদানিং বেশি সংখ্যক নমুনা আসায় ইতিমধ্যেই সাত শতাধিক নমুনা পরীক্ষার জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। অধিক চাপের কারণে আরও পাঁচশত নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেগুলোর রিপোর্ট দু-এক দিনের মধ্যে চলে আসবে বলে আশা করছেন করেন তিনি।
প্রফেসর চিত্তরঞ্জন দেবনাথ বলেন, ‘এ সমস্যার কারণে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি পিসিআর মেশিন আনা হয়েছে। ওই মেশিনটির জন্য ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ল্যাব স্থাপন কাজ সম্পন্ন হলেই তা চালু করা হবে এবং এতে প্রতিদিন আরও ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। ময়মনসিংহ মেডিকেলে বসানো পিসিআর ল্যাবে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৭১৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যার মধ্যে করোনা পজিটিভ এসেছে ২০৩টি।’
শেরপুরের সিভিল সার্জন একেএম আনওয়ারুর রউফ বলেন, ‘ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাবে ২১ এপ্রিল থেকে শেরপুর জেলার কোনো নমুনার পরীক্ষা করা হচ্ছে না। এ পর্যন্ত আমাদের ১৭০টি নমুনা পরীক্ষা আটকে আছে। জেলা থেকে পাঠানো ৫৫৬টি নমুনার মধ্যে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে ৩৮৬টির। তার মধ্যে পজিটিভ এসেছে ২৪টি। অপেক্ষমাণ নমুনার ফল নিয়ে আমরা অনেক টেনশনে আছি।’
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. এবিএম মসিউল আলম জানান, ময়মনসিংহ জেলা থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ১৭৮টি নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তন্মধ্যে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে ৯১৮টির। এতে পজিটিভ এসেছে ৯১টি। আরও ২৬৭টি নমুনার পরীক্ষা অপেক্ষায় রয়েছে।
নেত্রকোণার সিভিল সার্জন ডা. মো. তাজুল ইসলাম জানান, এ জেলা থেকে এখন পর্যন্ত ৯৮৪টি নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তন্মধ্যে পজিটিভ এসেছে ৩৩টি। কিন্তু জেলা থেকে মোট কতটি নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং কতটি পরীক্ষার জন্য বাকি রয়েছে, তার সঠিক তথ্য দিতে পারেননি তিনি।
জামালপুরের সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মো. মাহবুবুর রহমান জানান, এ জেলা থেকে এখন পর্যন্ত ৯০৩টি নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তারমধ্যে পজিটিভ এসেছে ৪৪টি। কিন্তু জেলা থেকে মোট কতটি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং কতটি পরীক্ষার জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে, তার সঠিক তথ্য দিতে পারেননি তিনি।
তিনি বলেন, জামালপুর মেডিকেল কলেজে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এর অনুমোদন চলে আসবে এবং ল্যাব স্থাপন সম্পন্ন হবে।
বিষয়টি নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি ডা. মতিউর রহমান ভূইয়া বলেন, জনসংখ্যার দিক থেকে ময়মনসিংহ বিভাগ অন্যতম। চট্টগ্রাম নগরীতে চারটি স্থানে পিসিআর ল্যাব স্থাপন ও পরীক্ষার কাজ চলেছ। ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আরও একটি পিসিআর মেশিন রয়েছে। বাকৃবির ওই ল্যাবটিকে করোনা পরীক্ষার উপযোগী করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হলে সেখানে অনেক নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা হতে পারে।
এ ছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগের করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য জামালপুর ও নেত্রকোণা মেডিকেল কলেজে আরও দুটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।