স্পোর্টস ডেস্ক : ক্যারিয়ারের যে কোনো অর্জন বা সাফল্যে নিয়মিতই সিনিয়র ক্রিকেটারদের বড় একটা কৃতিত্ব দিয়ে থাকেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অফস্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ। দলের অভিজ্ঞ তারকাদের সঙ্গে তার সখ্যতাও অন্যদের চেয়ে বেশি।
সবসময় মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের আশপাশেই দেখা যায় তাকে। তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু নেয়ার চেষ্টাও বোঝা যায় ভালোভাবে।ব্যতিক্রম হলো না আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম সেঞ্চুরির ক্ষেত্রেও।
বর্তমান টেস্ট দলে থাকা তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের কাছ থেকেই ভিন্ন ভিন্ন টিপস নিয়ে নিজের ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিং ও সেঞ্চুরি করেছেন মিরাজ। আজ (বৃহস্পতিবার) ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে মিরাজ নিজেই জানিয়েছে এ কথা। তিন বড় ভাই তামিম, সাকিব ও মুশফিককে দিয়েছেন প্রাপ্য কৃতিত্ব।
ওয়ানডে সিরিজ শেষে টেস্ট খেলতে চট্টগ্রাম আসার পর নেট সেশনে ব্যাটিং প্র্যাকটিসের সময় তামিম ইকবালের সঙ্গে কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলেন মিরাজ। যেগুলো কাজে লেগেছে আজ শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, কেমার রোচদের গোলার মতো আসা বলগুলো মোকাবিলা করার সময়।
শরীর বরাবর ধেয়ে আসা বল খেলতে তামিমের পরামর্শ কাজে লাগিয়েছেন মিরাজ। মুশফিক তাকে দিয়েছে দূরের বল তাড়া না করার পরামর্শ।নিজের সেঞ্চুরির পেছনে বড় ভাইদের অবদানের কথা স্বীকার করে মিরাজ বলেন, ‘আমি যখন নেটে ব্যাটিং করছিলাম, তখন তামিম ভাই আমাকে ২-১টা পরামর্শ দিচ্ছিলেন।
তার আগেও আমি যখন ব্যাটিং অনুশীলন করেছিলাম, মুশফিক ভাই অনেক পরামর্শ দিয়েছিলেন। উনি যখন প্র্যাকটিসে ব্যাটিংয়ে আসতেন আগে আগে, আমাকেও নিয়ে আসতেন। উনিও ব্যাটিং করতেন, আমাকেও ব্যাটিং করাতেন। এক সপ্তাহ আগেও আমি তার সাথে ব্যাটিং নিয়ে অনেক কাজ করেছি।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘তামিম ভাই সেদিন আমাকে একটা পরামর্শ দিয়েছেন, জোরে বলগুলো কীভাবে খেলতে হবে, শরীরের দিকে আসা বলগুলো কীভাবে খেলতে হবে। তামিম ভাই শুধু একটা কথা বলেছেন যে, শরীরের দিকে আসা বলগুলো সোজা রাখার জন্য, ব্যাট যেন না ঘুরিয়ে দেই। আজকে এটা মানার চেষ্টা করে করেছি।
গ্যাব্রিয়েল যখন আমাকে শরীর বরাবল বল করেছে, যতটা সম্ভব সোজা রাখতে পেরেছি এবং লিভ করে দিয়েছি।মুশফিকের কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শের কথা জানিয়ে মিরাজ বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে মুশফিক ভাইয়ের সঙ্গে যে ট্রেনিং করেছি, তখন মুশফিক ভাই একটা কথা বলেছেন, সোজা ব্যাটে খেলতে হবে এবং বাইরের বলে যেন খোঁচা না দেই, এটা যেন লিভ করে দেই। পাশাপাশি সবসময় যেন মনোযোগ ধরে রাখি এবং বল টু বল খেলার চেষ্টা করি। দুজনের পরামর্শই অনেক কাজে লেগেছে।’
তামিম ও মুশফিক অনুশীলনের সময় পরামর্শ দিলেও, সাকিবের পরামর্শটা এসেছে আজ ব্যাটিং করার সময়। দিনের তৃতীয় ওভারে লিটন আউট হওয়ার পর উইকেটে যান মিরাজ। সপ্তম উইকেটে সাকিবের সঙ্গে গড়েন ৬৭ রানের জুটি। তখন সাকিব বলেছিলেন, ঝুঁকিপূর্ণ স্লগ সুইপ না খেলে যেন প্যাডল সুইপ খেলেন মিরাজ। যা কাজে লাগিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মিরাজ।
মিরাজ ৩৮ রানে থাকতে সাকিব আউট হয়ে গেলেও, লেজের সারির ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে নিয়ে সেঞ্চুরি পূরণ করেন। ইনিংসের ১৪৮তম ওভারে জোমেল ওয়ারিকানের বলে প্যাডল সুইপ করেই সেঞ্চুরির আনন্দে মাতেন মিরাজ। সাকিবের কাছ থেকে পাওয়ার পরামর্শের ব্যাপারে তার ভাষ্য, ‘আমি যখন উইকেটে এসেছি, তখন একটু নার্ভাস ছিলাম। সাকিব ভাইয়ের সাথে আমি কথা বলছিলাম যে, ভাই কী করলে ভালো হয়।’
মিরাজ যোগ করেন, ‘সাকিব ভাই বলেছেন স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলতে এবং যদি আত্মবিশ্বাস থাকে যে মারলে পার হয়ে যাবে… যে শটই খেলি, যেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলি। যেমন- মাঝখানে হয়তো আমি নিজের ওপর থেকে চাপ সরাতে একটা স্লগ সুইপ চেষ্টা করব, তখন সাকিব ভাই আমাকে বলেন যে, এখানে স্লগ সুইপের চেয়ে প্যাডল সুইপ করলে ভালো। তখন আমার মাথায় চিন্তাটা কাজে লেগেছে যে, আমি যদি স্লগ সুইপের বদলে প্যাডল সুইপ খেলি, তাহলে হয়তো ভালো হবে, আউট হওয়ার চান্স কম থাকবে।’
এসময় সিনিয়রদের কাছ থেকে পাওয়া এসব পরামর্শের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মিরাজ বলেন, ‘এসব ছোট ছোট জিনিস অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাকে হয়তো সাহস দিয়েছে। যেমন- নামার আগে মুশফিক ভাই হয়তো দুই-একটা কথা বলেছে যে, এ উইকেটে অনেক সুযোগ আছে, ভালো কিছু যেমন ৭০ রানে নটআউট থাকতে পারবি। এ জিনিসগুলো… ড্রেসিংরুমে সিনিয়র প্লেয়াররা যখন ব্যাকআপ করে জুনিয়র প্লেয়ারকে, তখন কিন্তু আমাদের বুক অনেক বড় হয়ে যায় এবং ভালো করতে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।