মহাবিশ্বের শুরুর মুহূর্তটিকে বলা হয় সিঙ্গুলারিটি বা পরম বিন্দু। মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে ব্যাপকভাবে গৃহীত একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। এই তত্ত্বমতে, প্রায় ১৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন বছর আগে এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে এই মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছিল। মহাবিশ্ব শুরুর সেই মুহূর্তে অতি উত্তপ্ত ও অসীম ঘনত্বের একটি পরম বিন্দুতে সবকিছু ঘনীভূত ছিল।
১৯২০-এর দশকে সেকালের শক্তিশালী দুরবিনে চোখ রেখে জ্যোতির্বিদ এডুইন হাবল আবিষ্কার করলেন, মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠল, তাহলে অতীতে মহাবিশ্বের সবকিছু কি এক জায়গায় ছিল? অর্থাৎ সব গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি কি আদি কোন অবস্থায় একত্রে কাছাকাছি জড়ো হয়ে ছিল? একে সত্য মনে করে ১৯২৯ সালে একটি মডেলের প্রস্তাব করেছিলেন বেলজিয়ামের পাদরি, গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ জর্জেস লেমিত্রি।
তাঁর তত্ত্বমতে, অনেক অনেক আগে এই মহাবিশ্বের সবকিছু একটি ক্ষুদ্র বস্তুর মতো অবস্থায় ছিল। সেই বস্তুটির নাম দিয়েছিলেন কসমিক এগ বা মহাজাগতিক ডিম (নাকি ব্রহ্মাণ্ড!)। হঠাৎ এক বিস্ফোরণে এই ডিম ভেঙেই সেটি নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল।
লেমিত্রি তাঁর তত্ত্বকে সহজভাবে ব্যাখ্যা করতে মহাবিশ্ব সৃষ্টির এই মুহূর্তের নাম দিয়েছিলেন বিগ নয়েজ বা মহাশব্দ। তবে সে সময় মহাবিশ্ব-সম্পর্কিত সবচেয়ে জনপ্রিয় তত্ত্বটির নাম ছিল স্থিতিশীল মহাবিশ্ব তত্ত্ব বা স্টেডি স্টেট থিওরি। আর এর অন্যতম প্রধান সমর্থক ছিলেন ইংরেজ জ্যোতির্বিদ ফ্রেড হয়েল। লেমিত্রির তত্ত্বকে কখনোই মেনে নিতে পারেননি তিনি। তাই ১৯৪৯ সালে বিবিসি রেডিওতে এক সাক্ষাত্কারে লেমিত্রির আর তাঁর তত্ত্বকে আজগুবি বলে ব্যঙ্গ করেন তিনি।
সেদিন হয়েল তত্ত্বটির নাম দিয়েছিলেন বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই নামটিই সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আরও মজার ব্যাপার হলো, ১৯৬৫ সালে মাইক্রোওয়েব ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশনের শনাক্ত করার পর বিগ ব্যাং মডেলের সত্যতার জোরালো প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। সেই সঙ্গে বাতিল হয়ে গিয়েছিল ফ্রেড হয়েলের স্থিতিশীল মহাবিশ্ব মডেল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।