ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি ও ইরাকি কমান্ডার আবু মাহদি আল-মুহান্দিস শুক্রবার এক মার্কিন হামলায় নিহত হয়েছেন। বাদদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে বিমান হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করেছে মার্কিন সেনাবাহিনী।
নিহত এই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাদের হত্যার জন্য ইতিপূর্বেও একাধিকবার চেষ্টা হয়েছে।
ইতোমধ্যে অনেকে হয়তো জেনেছেন তিনি আসলে কে? কিন্তু জানেন কী, তিনি কেন যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট কিলিং পরিকল্পনায় ছিলেন?
ইরানের বিশেষ গোপন অভিযানিক দল কুদস ফোর্স। ‘অপ্রচলিত যুদ্ধের’ জন্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে এটি। ইতোমধ্যে এর সামরিক অবদান ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে। ইরানের বৈশ্বিক উত্থানের পেছনেও এই ফোর্সের কাজ অপ্রতিরোধ্য। যা কি-না প্রতিষ্ঠা করে আবার সুচারু পরিচালনা করছিলেন কাসেম সোলেমানি। আর তিনি এই বাহিনীর পুরো কাজের জন্য জবাবদিহি করতেন শুধু দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান যে সামরিক প্রভাব তৈরি করতে চাইছ, তার মূল কারিগর এই কুদস ফোর্স। অর্থাৎ ইরাকে এক ধরনের প্রভাব তৈরি করা, সিরিয়াতে প্রভাব তৈরি করা, লেবাননে প্রভাব তৈরি করা, বিভিন্ন জায়গায়, এমনকি ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইরানের যে যোগাযোগ আছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, সেখানেও সোলেমানির একটা বড় ধরনের ভূমিকা ছিল বলে পশ্চিমারা ধারণা করে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, ইরানের পররাষ্ট্রনীতি কী হবে, ইরান কোন দেশের সঙ্গে কী আচরণ করবে, কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, সেখানে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের কোনো দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও শেষ কথাটি কিন্তু জেনারেল সোলেমানিই বলতেন। অর্থাৎ তিনি যে মতামত দিতেন, সেটিই গ্রহণ করা হতো এবং সে অনুযায়ীই ইরানের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করা হতো।
সোলেমানিকে ইরানের জাতীয় বীর মনে করা হয়। তিনি ইরান কর্তৃপক্ষের অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন। তার নেতৃত্বেই দেশের সামরিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হতো। এছাড়া তিনি গত মার্চেও ইরানের সর্বোচ্চ সামরিক পদক ‘অর্ডার অব জুলফিকার’ এ ভূষিতে হয়েছিলেন। পাশাপাশি ইরানের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে কিছুক্ষণ পরপরই তার ছবি আসতো এবং তাকে নিয়ে নানা সংবাদ থাকতো।
এ কারণেই সোলেমানি বহুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের টার্গেট কিলিং পরিকল্পনায় ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের মনে ছিল, ইরানের বিপ্লবী গার্ড এবং এই চৌকস কুদস ফোর্স যদি থামানো না যায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, সামরিকভাবে এবং অন্যভাবে, সেটিকে থামানো যাবে না।
এছাড়া কয়েকদনি আগে রাজধানী বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা হয়েছিল। সেখানে উত্তেজিত জনতা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করেছে। সেটিকে অবরুদ্ধও করে রেখেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তখন বলেছিলেন, ইরানের মদদেই ইরাকের মার্কিন দূতাবাসে হামাল হয়েছে। কারণ ইরানের শিয়াপন্থী মিলিশিয়ারা এই হামলা চালিয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ।
এরপরই সোলেমানির ওপর ড্রোন হামলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সোলেমানি সিরিয়া অথবা লেবানন থেকে ইরাকে এসেছিলেন। এবং তখনই তাকে হত্যা করা হয়। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছু দিন ধরেই তার ওপর গোপন নজর রাখছিল। এবং সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই এ হমালা চালিয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।