রাজধানীতে দিনে ২-৩ ঘণ্টা গ্রামাঞ্চলে ৫-৬ ঘণ্টা লোডশেডিং

রাজধানীতে দিনে ২-৩ ঘণ্টা গ্রামাঞ্চলে ৫-৬ ঘণ্টা লোডশেডিং

জুমবাংলা ডেস্ক : চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ বরাদ্দ পাওয়ায় রাজধানীসহ সারা দেশেই একাধিকবার লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানিগুলো। রাজধানীতে দিনে দুই ঘণ্টার বেশি লোড শেডিং না হলেও বাইরের জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা করে লোড শেডিং করছে বিতরণ কম্পানিগুলো।

রাজধানীতে দিনে ২-৩ ঘণ্টা গ্রামাঞ্চলে ৫-৬ ঘণ্টা লোডশেডিং

জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকার সারা দেশে শিডিউল করে দিনে এক ঘণ্টা লোড শেডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা গত ১৯ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। তবে বাস্তবে এই শিডিউল কোথাও মানা হচ্ছে না।

বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক বেশি সময় লোড শেডিং করা হচ্ছে। এতে গ্রাহকরা ক্ষোভ জানাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানিগুলো বলছে, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় এক ঘণ্টার লোড শেডিংয়ের নির্দেশনা মানা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই তারা একাধিবার লোড শেডিংয়ে যাচ্ছে।

আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, উত্তরা, টঙ্গী, বাড্ডা, বসুন্ধরা আবাসিকসহ রাজধানীর একাংশে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) গতকাল দিনে সর্বোচ্চ ২২১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। এতে ডেসকোকে বিতরণ এলাকায় একাধিকবার লোড শেডিং করতে হয়েছে। রাজধানীতে দিনেরবেলা বেশি থাকলেও রাতের দিকে লোডশেডিং কিছুটা কম থাকে।

ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাওসার আমীর আলী একটি জনপ্রিয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের বরাদ্দ পাচ্ছি না, যার কারণে বাধ্য হয়েই আমাদের শিডিউলে একাধিকবার লোড শেডিং রাখতে হয়েছে। আমাদের বিতরণ এলাকায় দিনেরবেলা চাহিদা বেশি থাকায় এ সময় লোড শেডিং বেশি দিতে হচ্ছে। রাতেরবেলা আবার লোড শেডিং কমে যাচ্ছে। দিনেরবেলা আমাদের সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে ৯৮২ মেগাওয়াট, গতকাল সরবরাহ দিতে পেরেছি ৭৮০ মেগাওয়াট। আমাদের সর্বোচ্চ  ঘাটতি ছিল ২২১ মেগাওয়াট পর্যন্ত। ’

রাজধানীর বাইরে সবচেয়ে বেশি লোড শেডিং হচ্ছে দেশের বৃহত্তর বিতরণ কম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) এলাকায়। আরইবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, ‘মূলত বিদ্যুতের বরাদ্দ কম পাওয়ার কারণেই লোড শেডিং দিতে হচ্ছে। আজ (গতকাল) দিনেরবেলা আমাদের বিতরণ এলাকায় ঘাটতি ছিল এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। সন্ধ্যার পর চাহিদা ছিল প্রায় আট হাজার মেগাওয়াট, সরবরাহ করতে পেরেছি ছয় হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। এ সময় আমাদের ঘাটতি ছিল প্রায় এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট। ’ তিনি জানান, গতকাল ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট জোনে বেশি লোড শেডিং দিতে হয়েছে।

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় দিনে আট থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোড শেডিং হচ্ছে। একই অবস্থা এই জেলার ঈশ্বরগঞ্জ ও গৌরীপুর উপজেলায়ও। গ্রাহকদের অভিযোগ, লোড শেডিং কখনো কখনো আট থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এ কারণে শিক্ষার্থীসহ বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষরা পড়েছে বড় বিপাকে। প্রচণ্ড গরমে বিভিন্ন রোগে অসুস্থ হয়ে গত ১৫ দিনে প্রায় প্রতিদিনই ওই সব উপজেলার হাসপাতালগুলোতে অনেকেই ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এখানকার ওই উপজেলায় গত এক সপ্তাহে কমপক্ষে ১০ জন ভর্তি হয়েছে। এসব এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ করছে পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ। বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চাহিদার তুলনায় তারা বিদ্যুৎ খুবই কম পাচ্ছে। যার কারণে এভাবে লোড শেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। গৌরীপুরে চাহিদা ১০ মেগাওয়াট, দিতে পারছে পাঁচ মেগাওয়াট। ঈশ্বরগঞ্জে চাহিদা ২৩ মেগাওয়াট, সরবরাহ দিতে পারছে মাত্র আট থেকে ১০ মেগাওয়াট। নান্দাইলে চাহিদা ২৯ মেগাওয়াট, সরবরাহ দিচ্ছে মাত্র আট থেকে ১২ মেগাওয়াট।

চা-বাগানের কারখানাগুলো চলছে জেনারেটরে

লোড শেডিংয়ে মৌলভীবাজারের ৯৩টি চা-বাগানের কারখানাগুলোতে প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যাহত হচ্ছে। সময়মতো চা কারখানা চালু করতে না পারায় চায়ের গুণগত মান পড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন  সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চা-শিল্প এলাকায় লোড শেডিং না করার সরকারি সিদ্ধান্ত থাকলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। লোড শেডিংয়ের কারণে চায়ের কারখানাগুলোতে জেনারেটর দিয়ে চা প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে, এতে ব্যয় বেড়ে গেছে।

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সদর শ্রীমঙ্গলের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চাহিদামতো বিদ্যুৎ না পাওয়ায় আমরা এলাকাভিত্তিক লোড শেডিং দিয়ে দিচ্ছি। তার পরও চা-বাগানের বিষয়ে আলাদা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি। ’

আমন আবাদে বাড়ছে খরচ

নীলফামারীতে লোড শেডিংয়ে আমন আবাদে বাড়ছে খরচ। ভরা বর্ষায় শুকিয়ে আছে বৃষ্টির পানি নির্ভর আমন আবাদের জমি। আমন আবাদে নিরুপায় কৃষকদের এখন ভরসা সেচযন্ত্র; কিন্তু লোড শেডিংয়ের কারণে চলছে না বিদ্যুত্চালিত সেচযন্ত্র, আমন আবাদের মাঠে নামানো হয়েছে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র। এতে কৃষকদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে।

নীলফামারী জেলার কৃষক এনামুল হক বলেন, ‘আকাশের পানিত হামেরা আমন আবাদ করি। এইবার পানি নাই, বিদ্যুৎ পাইছি না পুরা সময়। সূত্র : কালের কণ্ঠ

ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ, কেজিতে কমেছে ৩০০- ৪০০ টাকা