স্পোর্টস ডেস্ক : টাকার শোক বড় শোক। কোনোভাবে টাকা অপচয় হলে বা গচ্চা গেলে আফসোসের সীমা থাকে না। আর সেই গচ্চা যাওয়া টাকার অঙ্কটা যদি হয় বিশাল, হাজার কোটি টাকার, শোক তখন পাথর হয়ে যায়!
রিয়াল মাদ্রিদের অবস্থা এখন ঠিক তাই। শোকে পাথর! ২, ৪ বা ১০০ কোটি নয়, তাদের যে এক ঝটকায় গচ্চা গেছে ২৮৮৫ কোটি টাকারও বেশি!
বড় সখ করে গ্রীষ্মের দলবদলের বাজারে মোট ৩০৫.২ মিলিয়ন ইউরো ঢেলেছে রিয়াল। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা ২৮৮৫ কোটি ৯০ হাজার ৩৯২ টাকা! কিন্তু বিশাল এই বিনিয়োগের পুরোটাই জলে গেছে। মোটা দাগের এই টাকা দিয়ে নতুন যে ৬ খেলোয়াড়কে দলে ভিড়িয়েছে মাদ্রিদ জায়ান্টরা, তাদের একজনও এখন পর্যন্ত জ্বলে উঠতে পারেননি।
আরও একটু স্পষ্ট করে বললে, নতুন কেনা ৬ জনের একজনও রিয়ালকে এখন পর্যন্ত কিছু দিতে পারেননি। মানে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগের পুরো টাকাটাই গচ্চা। গত কয়েক মৌসুমে একের পর এক তারকা খেলোয়াড় কিনে দলে তারার মেলা বসিয়েছে বার্সেলোনা।
বিপরীতে রিয়াল ২০১৪ সালের পর বড় কোনো তারকা খেলোয়াড় তো কেনেইনি, উল্টো আলভারো মোরাতা, গঞ্জালো হিগুয়েইন, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, মতো খেলোয়াড়দের বিক্রি করে দিয়েছে। এমনকি রিয়াল গোল-মেশিন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে বিক্রি করে দেওয়ার মহা বোকামিটা পর্যন্ত করেছে।
নতুন তারকা না কিনে উল্টো পুরোনোদের বিক্রি করে দেওয়ার পরিণতি কতটা করুণ হতে পারে, রিয়াল গত মৌসুমেই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। মৌসুমের তিন মাস বাকি থাকতেই সবকটি শিরোপা দৌড় থেকে ছিটকে পড়ে বিশ্বসেরা রিয়াল। গড়ে ক্লাব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার নজির।
গত মৌসুমের চরম সেই ব্যর্থতাই রিয়ালকে শিক্ষা দেয়, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার সঙ্গে টক্কর দিতে হলে, ইউরোপে আবার রাজত্ব করতে হলে নতুন তারকা কিনতে হবে। বৃদ্ধি করতে হবে দলের শক্তি। মাঠের শিক্ষা পেয়ে রিয়ালও গ্রীষ্মের দলবদলের বাজারে টাকার বস্তা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে।
এক এক দলে দলে ভিড়িয়েছে ৬ জন নতুন খেলোয়াড়। চেলসি থেকে বেলজিয়ান মিডফিল্ডার/ফরোয়ার্ড এডেন হ্যাজার্ডকে কিনেছে পাক্কা ১০০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে। পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকা থেকে সার্বিয়ার তরুণ ফরোয়ার্ড লুকা জভিচকে দলে টেনেছে নগদ ৬০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে। পর্তুগালেরই আরেক ক্লাব এফসি পোর্তো থেকে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার এদের মিলিতাওকে কিনেছে ৫০ মিলিয়ন ইউরোয়।
ফরাসি ক্লাব অলিম্পিক লিঁও থেকে ফরাসি ডিফেন্ডার ফারলান মেন্ডিরে পেছনে ঢেলেছে ৪৮ মিলিয়ন ইউরো। ব্রাজিলিয়ান তরুণ রদ্রিগো গোয়েসকে কিনে এনেছে ৪৫ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে। সঙ্গে বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে পিএসজি থেকে ধারে নিয়ে এসেছে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ী দলের গোলরক্ষক আলফনসে আরেওলাকে। বিনিময় চুক্তি হলেও তাকে এক মৌসুমের জন্য ধারে নিয়ে আসতে রিয়ালকে নগদ ঢালতে হয়েছে ২.২ মিলিয়ন ইউরো।
কিন্তু ৬ জনের কেউই সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এখনো নিজেদের প্রমাণ করতে ব্যর্থ। গ্রীষ্মে রিয়ালের সবচেয়ে বড় সওদা ছিলেন এডেন হ্যাজার্ড। বেলজিয়ান এই তারকা অনেক দিন ধরেই রিয়ালের টার্গেট ছিলেন। অনেক দেন-দরবার করে শেষ পর্যন্ত তাকে কিনতে সক্ষমও হয়েছে মাদ্রিদ জায়ান্টরা। কিন্তু যে প্রত্যাশা নিয়ে তাকে কেনা, হ্যাজার্ড তার ছিটেফোটাও পূরণ করতে পারেননি। রিয়ালের জার্সি গায়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে খেলেছেন ৬টি ম্যাচ। তাতে গোল করেছেন মাত্র একটি। ১০০ মিলিয়ন ইউরোর খেলোয়াড়ের এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখে হতাশায় পাথর হওয়া ছাড়া উপায় কি!
লুকা জভিচের অবস্থা আরও বেশি করুণ। জার্মান ক্লাব ফ্রাঙ্কফুর্টের হয়ে গত মৌসুমটি অবিশ্বাস্য কাটিয়েছেন সার্বিয়ার ২১ বছর বয়সী তরুণ। সব মিলে ৪৮ ম্যাচে করেছিলেন ২৭ গোল। অমিয় আর উড়ন্ত পারফরম্যান্সে তার দিকে হাত বাড়িয়েছিল ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলো। রোনালদোর গোল-ঘাটতি পূরণের আশায় রিয়ালও বড় স্বপ্ন নিয়ে কিনেছে তাকে। কিন্তু বার্নাব্যুতে এসে গোল করাই ভুলে গেছেন সার্বিয়ান তরুণ। সব মিলে ৭ ম্যাচে কোনো গোলই করতে পারেননি!
ফারলান মেন্ডি তো রিয়ালে যোগ দেওয়ার পরই চোটে পড়েন। চোট থেকে ফিরে রিয়ালের হয়ে দুটি ম্যাচ খেলেছেন বটে; তাতে নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে স্বদেশি কোচ জিনেদিন জিদানের আস্থা অর্জন করতে পারেননি।
একই ভাবে কোচ জিদানের আস্থা অর্জন করতে পারেননি ব্রাজিলের প্রতিভাবান তরুণ ডিফেন্ডার এদের মিলিতাওও। যদিও ৪ ম্যাচ খেলে তিনি একটা গোল করেছেন। কিন্তু গোল করার আগে তার প্রধান দায়িত্ব রক্ষণ সামলানো। নিজের সেই দায়িত্ব পালনে এখনো কোচের বিশ্বস্ত হয়ে উঠতে পারেননি। ফলে জিদানকে বাধ্য হয়ে পুরোনোদের ওপরই আস্থা রাখতে হচ্ছে।
ব্রাজিলের তরুণ রদ্রিগোর বয়স সবে ১৮। বয়স কম বলেই কোচ জিদান এখনো তাকে মূল দলে নিয়মিত খেলানোর ঝুঁকি নেওয়ার সাহস দেখাচ্ছেন না। রদ্রিগোও বিশেষ ঝলকে কোচের আস্থা শতভাগ অর্জন করতে পারেননি। যদিও রিয়ালের মূল দলের হয়ে ২ ম্যাচ খেলেই একটি গোল তিনি করেছেন।
ফরাসি গোলরক্ষক আলফনসে আরেওলার অবস্থাও একই। রিয়ালের এক নম্বর গোলরক্ষক থিবো কুর্তোইসের হঠাৎই যেন কি হয়ে গেছে! এ মৌসুমে গ্লাভস জোড়া তার হয়ে কথা বলছে না। মাঠে নেমেই করছেন অমার্জনীয় সব শিশুতোষ ভুল। কিন্তু তার পরিবর্তে যে আলফনসেকে নিয়মিত খেলাবেন, জিদান সেই সাহসও পাচ্ছেন না। রিয়ালের জার্সি গায়ে দুই ম্যাচ খেলে ২৬ বছর বয়সী ফরাসি স্বদেশি জিদানের সেই ভরসা দিতে পারেননি।
বার্নাব্যুতে তাদের পারফরম্যান্সের এই করণ চিত্রই বলছে, দলবদলের বাজারে বিনিয়োগের টাকাটা জলেই গেছে রিয়ালের! কিন্তু রিয়ালের কর্তারা আফসোসে নিজেদের কপাল চাপড়ানো ছাড়া কিছুই করতে পারছেন না!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।