আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ডা. লিওনিড রোগোজোভ নামের এক সোভিয়েত হিরো নিজেই নিজের পেট কেটে অ্যাপেনডিক্স অপাসারণ করেছিলেন। ১৯৬১ সালে ঘটে এই অভূতপুর্ব ঘটনা। তার অ্যাপেনডিক্সের ব্যথা শুরু হওয়ার সময় তিনি যে স্থানে অবস্থান করছিলেন তার ১ হাজার মাইলের মধ্যে দ্বিতীয় কোনো ডাক্তার ছিলেন না। কোনো ডাক্তারকে ডেকে আনতে হলে ১ হাজার মাইল দূর থেকে আনতে হবে। কিন্তু ১ হাজার মাইল দূর থেকে আসতে যে সময় লাগতো ততক্ষণ দেরি করলে তিনি হয়তো মারাই যেতেন। তাই সঙ্গে থাকা লোকদের নিয়ে নিজেই নিজের অপারেশন করে ফেলেন ডা. লিওনিড রোগোজোভ। যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক বিস্ময়কর রেকর্ড।
তার ব্যক্তিগত ডায়রিতে তিনি ওই ঘটনার বিবরণ লিখে গেছেন। যেখানে তিনি লেখেন…
“মনে হচ্ছিল আমার অ্যাপেনডিসাইটিস হয়েছে। কিন্তু আমি কাউকে তা জানাইনি। এমনকি সারক্ষণ হাসিখুশি ছিলাম। বন্ধুদের আমি আতঙ্কিত করতে চাইনি। কেননা, তাদের কেউ তো আর আমাকে সহযোগিতা করতে পারবে না। সেসময় যারা আমার সঙ্গে ছিলো তারা ছিলো সব মেরু অভিযাত্রী। একজন মেরু অভিযাত্রী বড়জোর হয়তো ডেন্টিস্টের চেয়ারে বসে অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতি দেখেছেন…
গত রাতে আমি একফোঁটাও ঘুমাতে পারিনি। মনে হচ্ছিলো যেন শয়তান আমার ওপর হামলে পড়েছে। আমার আত্মায় যেন তুষার ঝড় আছড়ে পড়ছিল, একসঙ্গে ১০০ শেয়ালের মতো আর্তনাদ করছিলো…
ভয়ানক বিপদের আঁচ করছিলাম আমি। আর এ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় নিজেই নিজের অপারেশন করা। যা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো আর চলবে না…
জীবনে আর কখনো এতটা ভয় পাইনি আমি। যন্ত্রণা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে আমার মনে হচ্ছিল পুরো ভবনটা যেন ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে একটা খেলনার মতো ঝাঁকুনি খাচ্ছে। অবশেষে বন্ধুরা বিষয়টি টের পায় এবং আমাকে শান্ত করতে আসে। আর আমি নিজেকে ধিক্কার জানাচ্ছিলাম সবার ছুটি কাটানোর আমেজ আমি মাটি করে দিয়েছি। এরপর বিছানাটি জীবাণুমুক্ত করে আমরা অপারেশন করার প্রস্তুতি নিলাম…
আমার অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছিল। বিষয়টি আমি তাদেরকে বলি। তারা ঘর থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বাইরে বের করছিল…
আমার নবিশ সহকারীরা! শেষবার আমি তাদের দিকে তাকালাম। তাদের পরনে অপারেশন থিয়েটারে ডাক্তারের সহকারীদের মতোই সাদা পোশাক। যা সাদাদের থেকেও সাদা। আমি একটু ভয়ও পাই। তবে যখনই আমি সিরিঞ্জে নভোকেইন ভরে নিজেকে প্রথম ইনজেকশনটি দেই সঙ্গে সঙ্গেই আমি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অপারেশন মুডে চলে যাই। এরপর আমি আর কোনো তাকাইনি।
অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, কিন্তু আমি আমার কাজ করতেই থাকি… পেরিটোনিয়াম সরাতে গিয়ে আমি বৃহদন্ত্রের নালিতে আঘাত করে বসি। যেটি আমাকে সেলাই করতে হয়। আমি দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম। প্রতি ৪/৫ মিনিট পরপর আমাকে ২০-২৫ সেকেন্ড করে বিশ্রাম নিতে হচ্ছিল।
অবশেষে আমি অভিশপ্ত অ্যাপেনডিক্স অপসারণ করি। সেটির তলায় কালো দাগ পড়ে গিয়েছিলো। তার মানে আর একদিন দেরি হলেই সেটি বিস্ফোরিত হত। এবং আমি হয়তো বাঁচতাম না। ভয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আমার হাতগুলোকে রাবারের মতো মনে হচ্ছিল। আমি ভেবেছিলাম খারাপ কিছু হয়তো ঘটে যেতে পারে। কিন্তু সফলভাবেই আমি অ্যাপেনডিক্সটিকে কেটে অপসারণ করি।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।