লাইলাতুল কদর কত রাকাত? বরকতময় রাতের নামাজ, ফজিলত ও ইবাদতের বিস্তারিত
রমজানের শেষ দশকের রাতগুলোর মধ্যে এক রাত — লাইলাতুল কদর — মুসলিম জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত ইবাদতের সময়। এই রাত সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান, “লাইলাতুল কদর কত রাকাত নামাজ পড়া হয়?” চলুন, কুরআন ও হাদিসের আলোকে এবং উম্মাহর প্রচলিত আমল অনুসারে এর বিস্তারিত জানি।
লাইলাতুল কদর কত রাকাত নামাজ আদায় করা যায়?
লাইলাতুল কদরের নামাজের কোনো নির্ধারিত রাকাত সংখ্যা নেই। লাইলাতুল কদর মূলত নফল নামাজ, তাই মুসল্লি তার সময়, শক্তি ও ইচ্ছা অনুযায়ী রাকাত সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারেন। তবে অধিকাংশ আলেম ও মুসল্লিরা ২ রাকাত করে ৮, ১০ কিংবা ১২ রাকাত পর্যন্ত নামাজ আদায় করে থাকেন। কেউ কেউ ২০ রাকাত পর্যন্ত নামাজ আদায় করেন। রাসুল (সা.) তাহাজ্জুদের নামাজ ২ রাকাত করে পড়তেন, তাই এই নিয়মই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য।
Table of Contents
লাইলাতুল কদরের নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম কী?
নামাজ শুরু করার আগে নিয়ত করতে হয়:
“আমি দুই রাকাত লাইলাতুল কদরের নফল নামাজ আদায় করিতেছি আল্লাহর জন্য।”
প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং এরপর যেকোনো ছোট সূরা (যেমন সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক বা সূরা নাস) পাঠ করা উত্তম। নামাজের পর অন্তর থেকে তাওবা, দোয়া ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এই রাতের মূল বিষয়।
শুধু নামাজই নয়, লাইলাতুল কদরে আরও কী ইবাদত করবেন?
এই রাতের মর্যাদা এতটাই বেশি যে শুধু নামাজ পড়েই থেমে থাকলে চলবে না। বরং কুরআন তিলাওয়াত, ইস্তিগফার, দরূদ শরীফ পাঠ, জিকির এবং সর্বোত্তম দোয়া পাঠ করাও আবশ্যক।
বিশেষ করে, রাসুল (সা.) যেই দোয়াটি শিখিয়েছেন তা হলো:
“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।”
(অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।)
কুরআন তিলাওয়াত ও ইস্তিগফার: এই রাতের আত্মিক শান্তির চাবিকাঠি
লাইলাতুল কদরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত পবিত্র কুরআন, যা এই রাতেই নাজিল হয়েছে। তাই কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত রাতভর। সঙ্গে বারবার “আস্তাগফিরুল্লাহ” বলে ইস্তিগফার করা এবং দরূদ শরীফ পাঠ করা আত্মিক প্রশান্তি এনে দেয় এবং আল্লাহর রহমতের দরজা খুলে দেয়।
দান-সদকার মাধ্যমে হাজার মাসের সওয়াব অর্জনের সুযোগ
লাইলাতুল কদরে দান-সদকার ফজিলত এতটাই ব্যাপক যে এক রাতের দান হয়ে যেতে পারে হাজার মাসের দানের সমতুল্য। এই রাতে গরীব, এতিম ও মিসকিনদের সাহায্য করা, ইফতার করানো কিংবা দানের মাধ্যমে সওয়াব অর্জনের অন্যতম উপায়।
সূরা কদরের ভাষ্যে এই রাতের মহিমা
আল্লাহ তাআলা কুরআনে ঘোষণা করেছেন:
“লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।”
এই এক রাতেই বান্দার ভাগ্য নির্ধারিত হয়, ফেরেশতারা নেমে আসে, এবং ফজরের আগ পর্যন্ত থাকে পরিপূর্ণ শান্তি ও রহমত। যারা এই রাতকে ইবাদতে কাটায়, তারা বিশাল সওয়াব ও ক্ষমা লাভে ধন্য হন।
আপনি লাইলাতুল কদরে কত রাকাত নামাজ পড়বেন?
শেষ কথা হলো — রাকাত সংখ্যার চেয়ে ইবাদতের আন্তরিকতা ও গুরুত্ব বেশি। আপনি ৪, ৮ বা ১২ রাকাত যেটাই পড়ুন না কেন, মনোযোগ, একাগ্রতা ও ইখলাস থাকলে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই রাতে কুরআন পড়ুন, নামাজ পড়ুন, দোয়া করুন, তওবা করুন — যেন এই রাত হয়ে ওঠে আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ ইবাদতের রাত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।