ধর্ম ডেস্ক : লাইলাতুল কদর হল ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে মহিমান্বিত ও গুরুত্বপূর্ণ রাত। এই পবিত্র রজনী রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে কোনো একটিতে সংঘটিত হয়। মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই রাতে আল্লাহ তাআলা মানবজাতির ভাগ্য নির্ধারণ করেন এবং এই রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশি সওয়াব বহন করে।
লাইলাতুল কদরের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কোরআনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা সূরা কদরে ইরশাদ করেছেন:
“নিশ্চয় আমরা একে নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আর তুমি কি জানো লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।” (সূরা কদর: ১-৩)
এই রাতের মাহাত্ম্য এই কারণে অনন্য যে, এ রাতে ফেরেশতারা দুনিয়ায় অবতরণ করেন এবং বিশেষভাবে রহমতের দরজা উন্মুক্ত হয়। বিশেষ করে জিবরাইল (আ.) আল্লাহর নির্দেশ নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন। এই রাতে কোরআন মাজিদ নাজিল হয়েছিল, যা মুসলমানদের জন্য চিরন্তন হিদায়াতের উৎস।
লাইলাতুল কদরের সম্ভাব্য তারিখ ও গুরুত্ব
হাদিস অনুযায়ী, লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে—২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯তম রাত। তবে অধিকাংশ ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, ২৭তম রজনীতে এই রাত সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। মহানবী (সা.) বলেছেন:
“তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।” (বুখারি: ২০২০, মুসলিম: ১১৬৯)
এই রাতে যারা আন্তরিকভাবে ইবাদত করে, তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত লাভ করে এবং তাদের অতীত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। এ কারণেই মুসলমানরা এই রাতে বেশি করে নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও জিকিরে মগ্ন থাকে।
লাইলাতুল কদরে করণীয় ইবাদত
লাইলাতুল কদর উপলক্ষে মুসলমানদের কিছু বিশেষ আমল ও ইবাদত রয়েছে, যা এই রাতের ফজিলতকে আরও বাড়িয়ে তোলে:
নফল নামাজ: এই রাতে দুই রাকাত বা তার বেশি নফল নামাজ আদায় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোরআন তেলাওয়াত: এই রাতে কোরআন পড়া ও এর অর্থ বোঝার চেষ্টা করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
দোয়া ও ইস্তেগফার: মহানবী (সা.) শিখিয়েছেন, লাইলাতুল কদরে এই দোয়া পড়া উচিত: “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি” (হে আল্লাহ, তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসো, আমাকে ক্ষমা করো)।
ইতিকাফ: অনেকে এই রাতের ফজিলত পাওয়ার জন্য শেষ দশকের পুরো সময় মসজিদে ইতিকাফ করেন।
লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও রহমত
লাইলাতুল কদর এক বিশেষ রহমতের রাত। এই রাতে আল্লাহর রহমত পুরো পৃথিবী জুড়ে বিস্তার লাভ করে এবং মুসলমানদের গুনাহ মাফ হয়। হাদিসে বর্ণিত আছে:
“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সাথে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ইবাদত করবে, তার অতীত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারি: ২০১৪, মুসলিম: ৭৬০)
এই রাতে আল্লাহর রহমত লাভের জন্য বেশি বেশি দোয়া, তওবা ও কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত।
লাইলাতুল কদর একটি অমূল্য রজনী, যার প্রতিদান হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। মুসলমানদের উচিত এই রাতে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা, গুনাহ থেকে মুক্তি কামনা করা এবং নেক আমল করার মাধ্যমে এই রাতের ফজিলত অর্জনের চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে লাইলাতুল কদরের বরকত লাভের তৌফিক দান করুন। আমিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।