নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: ঢাকা থেকে গাজীপুর হয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে যাতায়াতের জন্য এবারও যাত্রীদের স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রার কথা বলা হচ্ছে। তবে যানজটের শঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
তারপরও এবার গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত চলাচলকারী যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ট্রাফিক পুলিশ ও প্রশাসনের সঠিক তদারকি এবং কঠোর অবস্থান থাকলে এবং পরিবহন চালক ও শ্রমিকরা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ হয় এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকলে এবারও ঈদযাত্রা স্বস্তির হতে পারে।
রাজধানীর আবদুল্লাহপুর পার হলেই গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা শুরু। ঢাকা ও গাজীপুর এ দুই জেলার সংযোগ ঘটিয়েছে টঙ্গী সেতু। এ সেতুর দুই দিকেই চলছে র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ। তবে এ পথে উড়ালসড়ক নির্মাণ হওয়ায় ওপর দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করা যাচ্ছে। এরপরও গাজীপুর জেলার মধ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের অন্তত সাতটি স্থানে এবার ঈদে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে করে পবিত্র ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গাজীপুর জেলায় যানজটের এসব পয়েন্ট চিহ্নিত করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থাগুলো। অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চিহ্নিত পয়েন্টগুলোতে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
যানজটের সম্ভাব্য স্থানগুলো হচ্ছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে এখন কাজ চলছে। তবে এখন এ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে শুরু করে ময়মনসিংহের ভালুকা পর্যন্ত কোথাও খানাখন্দ বা ভাঙাচোরা নেই। তবে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যত্রতত্র বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করানোর কারণে যানবাহনের জটলার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর বাজার বাসস্ট্যান্ড, হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড, বাঘের বাজার বাসস্ট্যান্ড, শ্রীপুর উপজেলার মাস্টারবাড়ী বাজার, সিডস্টোর বাজার ও ময়মনসিংহের ভালুকা বাসস্ট্যান্ড এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকা।
ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তায় নির্মাণ করা হয়েছে গোলাকার উড়ালসড়ক। ওই উড়ালসড়ক দিয়ে ময়মনসিংহ ও জয়দেবপুরের দিকে যাতায়াত করা যাচ্ছে। ময়মনসিংহের দিকে যাওয়ার পথে উড়ালসড়কটি সেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে নিচের যানবাহন চলাচলের জন্য জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে। স্বল্প দূরত্বে চলাচল করা গণপরিবহনগুলো সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করাচ্ছে। এতে করে উড়ালসড়ক থেকে নেমেই গতি কমাতে হচ্ছে।
অন্যদিকে ময়মনসিংহের দিক থেকে যারা ঢাকা বা জয়দেবপুরের দিকে যাতায়াত করছেন, তাদের পড়তে হচ্ছে যানজটের কবলে।
চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বলাকা পরিবহনের চালক আব্দুল আলী বলেন, চৌরাস্তা এলাকায় উড়ালসড়ক চালু করা হলেও নিচে এখনও বিআরটির কাজ চলমান। আমাদের যাত্রী ওঠাতে হয়, তাই নিচ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে যানজটে পড়তে হচ্ছে। নিচের কাজ ঈদের আগে শেষ করা গেলে ভালো হতো।
ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপে গাজীপুরের মহাসড়কের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে হোতাপাড়া এলাকায় পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দুটি বড় পার্শ্ব রাস্তা আছে। বড় বড় শিল্পকারখানার যানবাহনগুলো এসব পার্শ্ব রাস্তা দিয়ে মূল সড়কে প্রবেশ করার ফলে এখানে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে।
গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকার বাসিন্দা ইকবাল মাহমুদ বলেন, সড়কে অনেক কাজ হচ্ছে কিন্তু সড়কের বেশিরভাগ অংশে নানা ধরনের জঞ্জাল হয়ে থাকে। যেখানে সেখানে অবৈধ পার্কিং করে রাখা হয়। এতে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এসব পরিষ্কারে পুলিশকে কঠোর হতে হবে।
ভবানীপুর এলাকায় একটি ইউটার্ন আছে। এই সড়কের সঙ্গে যুক্ত পশ্চিম দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক ও পূর্বদিকে নলজানি। ইউটার্ন থাকায় স্বল্প দূরত্বের গাড়িগুলো ভবানীপুর চৌরাস্তায় মোড় নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। ফলে ভবানীপুর চৌরাস্তার যানজট প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা।
ময়মনসিংহ মহানগরের দিকে যেতে যানজটের আরেকটি পয়েন্ট বাঘের বাজার। পশ্চিমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের মূল সড়ক ও পূর্বদিকে শ্রীপুর সংযোগ সড়ক। দুই পাশের সড়কগুলো ব্যস্ত থাকায় বাঘের বাজারে প্রায়ই যানজট দেখা যায়। ঈদে ঘরমুখো মানুষের জন্য এ স্থানটিও হতে পারে ভোগান্তির আরেক কারণ।
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের উপ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ, থানা পুলিশ ও মোবাইল টিম থাকবে। এছাড়া ১০টি রেকার রিজার্ভে রাখা হবে, কোনো কারণে যানবাহন বিকল হলে যাতে দ্রুত সেগুলি সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়। মহাসড়কের সবগুলো উড়ালসড়ক আমরা ব্যবহার করবো। এ কারণে আশা করছি এবার ঘরমুখো মানুষ আরও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকা প্রতিবছরই ঈদে ঘরমুখো মানুষের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়।
পলাশ পরিবহনের যাত্রী মজিবুর রহমান বলেন, ঈদ আসলেই চন্দ্রা এলাকায় যানজটের একটা আতঙ্ক সবার মধ্যে থাকে। এতে যানবাহনের চাপে আমাদের যানজটে পড়তে হয়।
গাজীপুরের নাওজোড় হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহদত হোসেন বলেন, চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যানজট নিরসনে প্রতিবছরের মতো এবারও বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। আশা করছি এবারও যানজটমুক্ত পরিবেশে ঈদে যাত্রীরা নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।