শেখ দিদারুল আলম, ইউএনবি: খুলনার বিনোদন কেন্দ্রগুলো যখন সংকুচিত হয়ে আসছে, নগরীর পুকুর-নালাগুলো যখন ভরাট হয়ে উঁচু ভবনে পরিণত হয়েছে ঠিক তখনই খুলনা শহরের একটু দূরে রূপসা সেতু থেকে দেড় কিলোমিটর দক্ষিণে খুলনা-মংলা রেল লাইনের রেল সেতু সংলগ্ন কাজীবাছা নদীর তীর ঘেষে গড়ে তোলা হয়েছে শেখ রাসেল ইকোপার্ক।
ইতোমধ্যেই দর্শনার্থীদের জন্য পার্কটি হয়ে উঠছে নান্দনিক। বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তত্ত্বাবধানে শেখ রাসেল ইকোপার্কের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। তবে এটির মূল বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান খুলনা জেলা প্রশাসন।
৪৩ দশমিক ২৯ একর সরকারি জমিতে ইকোপার্ক করার জন্য ইতোমধ্যেই সেখানকার অবৈধ দখলদারদের পার্শ্ববর্তী আশ্রয়ন প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়েছে। পুরো জায়গাটিকে নদীর তীর দিয়ে উঁচু বাঁধ দিয়ে বেষ্টিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এখন কিছু স্থাপনা ও বনায়ন করার মধ্যদিয়ে পার্কটিকে করা হবে আরও দৃষ্টিনন্দন।
২০১৮ সালের ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্যদিয়ে পার্কটির নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। তবে খুলনার তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কলবাড়ির আকাশলীনার আদলে কিছু বাঁশ-কাঠের ঝুলন্ত ব্রিজ করেন তার অতীত অভিজ্ঞতা দিয়ে।
শ্যামনগরের আকাশলীনা করার সময় তিনি সেখানকার উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে যিনি রয়েছেন ‘খুলনা শহরে এডমিনিস্ট্রেটিভ কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ’ প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক হিসেবে।
খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সারোয়ার আহমেদ সালেহীন বলেন, পার্কটিতে থাকবে মিনি সুন্দরবন, ফিশিং জোন, টয় ট্রেন, ঝুলন্ত ব্রিজ, ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, ফুড জোন, অবজারভেশন টাওয়ার, পিকনিক স্পট, কিডস কর্নার, অডিটরিয়াম, এম্ফিথিয়েটার, ফুট ট্রেইল, পার্কিং জোন, ওয়াকওয়ে, রেস্ট হাউজ, সুইমিং পুল, মেরিন ড্রাইভ, প্লে গ্রাউন্ড, জগিং ট্র্যাক, জিমনেশিয়াম ও রিভার ক্রুজ।
পার্কের বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, শেখ রাসেল ইকোপার্ক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০ সদস্যবিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি বাস্তবায়ন এবং মনিটরিং উপ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ম্যানগ্রোভ কালচারাল সেন্টার নির্মাণের জন্য ট্যুরিজম বোর্ড থেকে প্রথম কিস্তিতে এক কোটি টাকা দেয়া হয়েছে এবং এজন্য ইতোমধ্যে ই-জিপি পদ্ধতিতে ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়েছে। চুক্তিপত্রও স্বাক্ষর হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ইকোপার্কে আগত দর্শনার্থীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দ্বিতীয় কিস্তিতে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা দিয়ে ম্যানগ্রোভ সেন্টারের অবশিষ্ট অংশের কাজ বাস্তবায়নের প্রাক্কলন, ডিজাইন ও ড্রইং প্রস্তুত করে দাখিল করার জন্য প্রকল্পের কনসালটেন্টকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কনসালটেন্ট খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অপূর্ব কুমার পোদ্দার ও তার টিম ইতোমধ্যে এ কাজ শুরু করেছে।
পাশাপাশি বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড প্রকল্পটির উন্নয়নে খুলনা বন বিভাগের অনুকূলে আট কোটি ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জানিয়ে সারোয়ার আহমেদ সালেহীন বলেন, খুলনা আঞ্চলিক বন সংরক্ষককে ওই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিও। এজন্য দরপত্র আহবানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, পার্কের ফুড জোনে ভাসমান জাহাজে থাকবে হোটেল। যেখানে দেশীয় পিঠা বিক্রি করবেন নারীরা। নারীদের তৈরি বিভিন্ন হাতের কাজের পণ্য সামগ্রীও এ পার্ক থেকে কিনতে পারবেন দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকসহ খুলনার সাধারণ মানুষও। থাকবে অর্গানিক পণ্য সামগ্রীও। যেটি কীটনাশকের এই যুগে মানুষের নিরাপদ খাদ্যের জন্য একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।
নয়নাভিরাম নান্দনিক এ পার্কটির এক স্থানে থাকবে নানা প্রজাতির গাছের ছায়াঘেরা সুশীতল পরিবেশ। যেখানে থাকবে লেক, মিনি সুন্দরবন, পশুপাখির অভয়াশ্রম, শিশুপার্ক, রিসোর্ট ইত্যাদি।
পার্কটি চারটি জোনে বিভক্ত থাকবে। যার একাংশে থাকবে প্রকৃতির অবিকল রূপ, একাংশে থাকবে সবার প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত এবং কিছু এলাকা থাকবে একেবারে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের টি.আর প্রকল্প থেকে দেয়া ১৬টি সোলার বাতি শেখ রাসেল ইকোপার্কে স্থাপন করা হয়েছে। পাউবো’র বাঁধ নির্মাণের পর আরও অন্তত ৫০টি সৌর বিদ্যুত স্থাপন করা যাবে।
পার্কের অগ্রগতি সম্পর্কে বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহমদ জিয়াউর রহমান বলেন, শেখ রাসেল ইকোপার্কের মোট ৪৩ দশমিক ২৯ একর জমির মধ্যে বটিয়াঘাটা অংশে পড়েছে ২৯ দশমিক ৬০ একর এবং ১৩ দশমিক ৬৯ একর পড়েছে রূপসা উপজেলার জাবুসা মৌজায়।
খুলনা নগরবাসীর বিনোদনের জন্য এ পার্কটি একটি অন্যতম মডেল পার্ক হতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।
সরকারি জমি হলেও সেখানে দীর্ঘদিন ধরে যারা বসবাস করে আসছেন তাদের জন্য পার্শ্ববর্তী তিনটি আশ্রয়ন প্রকল্পে সরকারের পক্ষ থেকে জায়গা করে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেক পরিবারকে চার শতক করে জমি লিখে দেয়া হবে। সর্বমোট দুইশ’ পরিবারের জন্যই সরকার এমন ব্যবস্থা করেছে। যেখানে রাখা হয়েছে সেটিও সরকারি জমি।
মাটি ভরাট থেকে শুরু করে পার্কটির প্রাথমিক কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন পাউবো’র বাধ নির্মাণের কাজটিও সমাপ্তির পথে। এছাড়া ট্যুরিজম বোর্ড এবং সুন্দরবন বিভাগ থেকে যে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়েছে সেগুলো দিয়েও পর্যায়ক্রমে বাকী কাজ সম্পন্ন করে পার্কটি শিগগিরই নান্দনিক করা হবে।
সম্প্রতি সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ে মূলত সন্ধ্যায়। কিন্তু সন্ধ্যার সাথে সাথেই পার্কটি বন্ধ হয়ে যায় নিরাপত্তাজনিত কারণে। জেলা প্রশাসন থেকে সর্বমোট পাঁচজন কর্মচারী সেখানকার দেখাশোনার জন্য নিয়োজিত রাখা হয়েছে।
দর্শনার্থীদের জন্য কোনো টিকিট না নেয়া হলেও শুধুমাত্র জলবোটের ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ১০ টাকা এবং মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের জন্য রাখা হচ্ছে ১০ টাকা করে। পাবলিক টয়লেট না থাকায় এটি আপাতত একটি সমস্যা বলেও দর্শনার্থীরা জানিয়েছেন। পার্ক অভ্যন্তরে আপাতত দু’টি দোকান রয়েছে। একটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপরটি একজন বেসরকারি উদ্যোক্তা চালাচ্ছেন।
বেসরকারি উদ্যোক্তা হোটেল পরিচালক কাজী ফজলে রাব্বী শান্ত বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে বিকাল থেকে সন্ধ্যার পরই দর্শনার্থীরা আসতে চান বেশি। কিন্তু প্রয়োজনীয় আলোর ব্যবস্থা না থাকাসহ নিরাপত্তাজনিত কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে সন্ধ্যার পরও পার্কটি উন্মুক্ত করা দরকার বলেও তিনি মনে করেন। সূত্র: ইউএনবি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।