জুমবাংলা ডেস্ক: চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেছেন, ‘সরকারের রূপকল্প-২০৪১ অনুসরণ করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে চুয়েট প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি চুয়েটে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দেশের প্রথম শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের উদ্বোধন করেছেন। আমরা আশা করব, এই ইনকিউবেটরের সুবিধা কাজে লাগিয়ে চুয়েটের তরুণ প্রজন্ম চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার চুয়েটে ২০তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য এসব কথা বলেন। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে এ অনুষ্ঠান হয়।
রফিকুল আলম আরও বলেন, নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও জনকল্যাণমূলক গবেষণাই হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ। গবেষণা ক্ষেত্রে চুয়েট নিজস্ব অবস্থান থেকে অবদান রেখে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে চুয়েটের অগ্রযাত্রায় যাঁরা বিভিন্নভাবে ভূমিকা রেখেছেন এবং বর্তমানে যাঁরা নিরলসভাবে এ অগ্রযাত্রা অব্যাহতভাবে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন, আমি তাঁদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি। পারিবারিক বন্ধনও আলগা হয়ে আসছে। প্রযুক্তি আমাদের বশীভূত করে রেখেছে। আমাদের সামাজিকতা বিঘ্নিত হচ্ছে। সামাজিক মিথস্ক্রিয়া হ্রাস পাচ্ছে। আমাদের সামাজিক মনন ও মনোজগতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’
আবুল মোমেন আরও বলেন, ‘আমরা শুধু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে প্রবেশ করেছি সেটাই নয়, একইসাথে আমাদের বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন প্রকট হয়েছে, খরা, অতিমারি ও বন্যা বেড়েছে। কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। মানবজাতি ও সভ্যতা এখন বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান বাস্তবতায় আমাদের এটা নিয়ে ভাবতে হবে। ভবিষ্যত প্রযুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা কেবলই জ্ঞান ও উদ্ভাবনের ভোক্তা হয়ে থাকলে হবে না। আমাদেরকেও নির্মাতার ভূমিকায় আসতে হবে। সে জন্য প্রকৌশলী সমাজ ও বিজ্ঞানীদের মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি চুয়েটে সে ধরনের দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির সুযোগ রয়েছে।’
সভায় চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম সভাপতিত্ব করেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সুনীল ধর, পুরকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মইনুল ইসলাম, তড়িৎ ও কম্পিউটারকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মশিউল হক, স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল হাছান।
অনুষ্ঠান স্বাগত বক্তব্য দেন যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। সঞ্চালনা করেন পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আয়শা আখতার, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এটিএম শাহজাহান এবং ইইই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সম্পদ ঘোষ।
আলোচনার শুরুতে বিশ্বদ্যিালয়টির তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফজলুর রহমান চুয়েটের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করেন। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম চুয়েটের পক্ষ থেকে আবুল মোমেনের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
সভা শেষে চুয়েট মেডিকেল সেন্টারে রক্তদান কর্মসূচি পালিত হয়। পরে শিক্ষক বনাম ছাত্র এবং কর্মকর্তা বনাম কর্মচারী প্রীতি ফুটবল ম্যাচ এবং পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে বেলা পৌনে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-২ এর সামনে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে উপাচার্য রফিকুল আলম দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন। এরপর আনন্দ র্যালি রেব করা হয়। এতে রঙ-বেরঙের প্ল্যাকার্ড ও ফ্যাস্টুন সহকারে চুয়েটের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেন। পরে ইএমই ভবনের উত্তর পাশে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের স্মারক হিসেবে বৃক্ষরোপণ করা হয়।
২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণার একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে চুয়েট প্রতিষ্ঠিত হয়। চুয়েটে বর্তমানে ১২টি বিভাগে ৯৩১টি আসনের বিপরীতে প্রায় ৬ হাজার ২০০ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১০০জন পিএইচডি ডিগ্রিধারীসহ প্রায় ৩৪০ জন শিক্ষক, ১৬০ জন কর্মকর্তা এবং ৪৩৫ জন কর্মচারী রয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।