স্কুল বা মহল্লা বা অ্যাপার্টমেন্টের অন্য শিশুদের দ্বারা খুব বাজেভাবে বুলিংয়ের শিকার হওয়া শিশুরা ক্ষতিগ্রস্থ। বুলিং একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা, যা সারা বিশ্বেই শিশুদের জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে কাজ করছে। কিছু শিশু অন্য শিশুদের নিপীড়ন, হাসি-ঠাট্টা এবং শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করে অনেক বিকৃত আনন্দ পায়। বুলিংয়ের ফলে অনেক শিশু মানসিক চাপ, জটিলতা এবং পিটিএসডিতে (পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার) আক্রান্ত হয়।
বুলিং হলো এমন আচরণ, যেখানে একজন বা একটি দল অন্যজনকে নিয়মিত এবং উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে নির্যাতন করে। এটি শারীরিক, মানসিক বা সামাজিক আক্রমণের মধ্যে পড়ে। বুলিংয়ের শিকার শিশুরা একাকিত্ব, অসহায়ত্ব, উদ্বেগ, আতঙ্ক, ভীষণ ভয়, উৎকণ্ঠা, অবিচার, নিজের অক্ষমতার অনুভূতি নিয়ে ধুঁকতে থাকে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে দীর্ঘ মেয়াদে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ, আতঙ্কের কারণে শিশুদের অ্যামিগডালা বেড়ে যায়। অ্যামিগডালা মস্তিষ্কের সেই অংশ, যা ভয় ও উদ্বেগ তৈরি করে। বুলিংয়ের কারণে উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ার ফলে অ্যামিগডালার কার্যকলাপ বেড়ে যায়, যা তাদের ভয় এবং উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া বাড়ায়। ভয়ানক বুলিংয়ের শিকার শিশুরা প্রায়ই তাদের মস্তিষ্কের মধ্যে স্নায়বিক সংযোগে পরিবর্তন অনুভব করে।
দীর্ঘস্থায়ী চাপ মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। শিশুরা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। তারা ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন ও ভয়ার্ত হয়ে পড়তে পারে; এতে করে তাদের দুঃখ বা রাগ প্রকাশ করতে সমস্যা হয়। মানসিক চাপের কারণে শিশুদের শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা এবং পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ শারীরিকভাবে অসুস্থতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
শিশুদের সাথে মন খুলে কথা বলতে হবে। কিছু বিষয় আছে তারা অনন্যোপায় না হলে বলে না। এটা অভিভাবক এবং শিক্ষকদের মাথায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে যথাযথ ইনভেস্টিগেশন করতে হবে। এ ছাড়া শিশুরা যেন সহজে এসে মা–বাবাকে যেকোনো কিছু বলতে পারে, এতটুকু আস্থার সম্পর্ক শিশুর জন্য তৈরি করে দিতে হবে। শিশুটি যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ অনুভব করলে, তার কথা শোনার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদানের মাধ্যমে তার পাশে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হবে। স্কুলে কাউন্সেলিং সেবার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করলে তারা আরো আত্মবিশ্বাসী হতে পারে।
শিশুদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এর মাধ্যমে তারা একে ওপরের আবেগ বুঝতে সক্ষম হবে, একে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে শিখবে। তাদের অনুভূতিকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে এবং সেগুলোকে স্বাস্থ্যকর উপায়ে প্রকাশ করতে শেখাতে হবে।
এ জন্য স্কুলে বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন হতে পারে যথার্থ; তাহলে তারা এসব কর্মশালায় অংশ নিয়ে অভিনয়, শিল্পকর্ম, সৃজনশীল লেখালেখি ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের আবেগ প্রকাশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারবে। মোদ্দা কথা হলো, শিশুরা নিজেদের অনুভূতি যথার্থভাবে প্রকাশ করার মধ্যে তাদের নিজেদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার শক্তি অর্জন করবে। আমরা সবাই যে মুক্ত সমাজ চাই, সেটা তখনই সম্ভব যদি ছোট থেকে শিশুদের মানসিকভাবে সুস্থ করে গড়ে তোলা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।