সকালবেলা ছোট্ট মিমির মুখে এক চামচ দুধ তুলে দিতেই সে মুখ ফিরিয়ে নিল, ঠোঁট চেপে রইলো অনড়। নবম মাসের রিফাতের মা শারমিনের চোখে জল। “এক গ্লাস দুধ তো দূরের কথা, এক চামচও ঢোকানো দায়,” তাঁর কণ্ঠে হতাশার ছাপ। এই দৃশ্য কত বাংলাদেশী মা-বাবার কাছে অপরিচিত? দুধ—প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি’র অফুরন্ত উৎস, শিশুর হাড়, দাঁত ও মস্তিষ্কের বিকাশের চাবিকাঠি। কিন্তু এই পুষ্টির ঝর্ণাকে অনেক শিশুই সহজে গ্রহণ করে না। কেন? আর শিশুর দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার এই যুদ্ধে মা-বাবা কীভাবে জিতবেন? চিন্তা করবেন না। এই লড়াই একার নয়। শিশু বিশেষজ্ঞ, পুষ্টিবিদ এবং অসংখ্য অভিভাবকের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে রইলো সহজ, কার্যকর ও আবেগকে স্পর্শ করা সমাধানের পথ। এখানে কঠোরতা নয়, বরং ধৈর্য, বোঝাপড়া ও ছোট্ট বিজয়ের গল্পই মুখ্য।
শিশুর দুধ পান অভ্যাস গড়ে তোলার সেরা উপায় কী? (বিজ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে)
শিশুর দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার ভিত্তি হলো ধারাবাহিকতা এবং ইতিবাচক অভিজ্ঞতা। ঢাকার শিশু হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ডা. ফারহানা ইসলাম বলছেন, “দুধ শুধু পুষ্টি নয়, এটি একটি সংবেদনশীল অভিজ্ঞতা। অনেক শিশুর জন্য গরুর দুধের স্বাদ বা গন্ধ প্রথমে অপরিচিত ও প্রত্যাখ্যানের কারণ হতে পারে। জোর করা নয়, বরং ধীরে ধীরে, আনন্দের সঙ্গে পরিচয় করানোই সফলতার মূলমন্ত্র।” ইউনিসেফের ২০২৩ সালের গাইডলাইনও একই কথা বলছে: ছোট পাত্রে, দিনে একবার দিয়ে শুরু করুন, শিশুর প্রতিক্রিয়া লক্ষ করুন, তারপর ধাপে ধাপে বাড়ান।
ধাপে ধাপে অভ্যস্ত করানোর কৌশল
- মিশ্রণের মাধ্যমে শুরু করুন: শিশু যদি মায়ের দুধ বা ফর্মুলা খায়, তাতে অল্প পরিমাণে গরুর দুধ (১-২ চা-চামচ) মিশিয়ে দিন। ধীরে ধীরে এই পরিমাণ বাড়ান। এতে স্বাদের পার্থক্য কমবে।
- প্রিয় খাবারের সঙ্গী করুন: ওটমিল, সুজি, কর্নফ্লেকস, ফলমূলের স্মুদি বা পুডিংয়ে দুধ মিশিয়ে দিন। প্যানকেক বা ডিমের ভাজিতেও দুধ ব্যবহার করুন। ঢাকার বাসিন্দা সুমাইয়া আক্তার (৩ বছর বয়সী সাফিনার মা) শেয়ার করেন, “আমি প্রথমে কলা আর মিষ্টি আমের স্মুদিতে সামান্য দুধ দিতাম। ওর প্রিয় স্বাদে দুধের উপস্থিতি সে সহজেই মেনে নিল।”
- তাপমাত্রায় খেলাপনা: কিছু শিশু ঠান্ডা দুধ পছন্দ করে, কিছু শিশু হালকা গরম। পরীক্ষা করে দেখুন আপনার শিশু কোনটা পছন্দ করে। গরম দুধে সামান্য এলাচ বা দারুচিনি গুঁড়ো দিলে সুগন্ধ ও স্বাদ বাড়ে (১ বছরের পর)।
পরিবেশ ও উপস্থাপনার জাদু
- রঙিন ও মজার পাত্র: শিশুর প্রিয় কার্টুন চরিত্র আঁকা কাপ, স্ট্র লাগানো গ্লাস বা ফান শেপের মগ ব্যবহার করুন। খাওয়াটাকে ‘গেম’ বানিয়ে ফেলুন। “দুধ দিয়ে গোসল করাও দাদুর গরু!”—এমন গল্প বলতে বলতে খাওয়ান।
- রোল মডেল হোন: শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। পরিবারের অন্য সদস্যরা যখন আনন্দের সাথে দুধ পান করবেন, শিশুও আগ্রহী হবে। একসাথে বসে ‘দুধ পার্টি’ করুন!
- ছোট লক্ষ্য, বড় উৎসব: এক চামচ দুধ খেলেই জোরালো প্রশংসা করুন, হাততালি দিন, স্টিকার দিন। “ওহ! তুমি তো বাঘের মতো শক্তিশালী হয়ে গেলে!”—এমন উৎসাহ দিন। এভাবেই শিশুর দুধ খাওয়ার অভ্যাস ইতিবাচক অনুভূতির সাথে জড়িয়ে যাবে।
দুধ না খাওয়ার পিছনে কারণ চেনা ও সমাধান খোঁজা
শিশুর দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার পথে বাধা আসবেই। সঠিক কারণ চিনতে পারলেই সমাধান সহজ। পুষ্টিবিদ ড. শাহিনা ফেরদৌসি (বিএসএমএমইউ) সতর্ক করেন, “প্রথমেই নিশ্চিত হতে হবে শিশুর দুধে অ্যালার্জি বা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের মতো শারীরিক সমস্যা নেই কিনা। বারবার বমি, পেট ফাঁপা, তীব্র ডায়রিয়া বা চুলকানির মতো লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।”
সাধারণ প্রতিবন্ধকতা ও মোকাবিলার উপায়
- স্বাদ বা গন্ধের অপছন্দ: এটাই সবচেয়ে সাধারণ কারণ। সমাধান: উপরে বর্ণিত মিশ্রণ বা উপস্থাপনার কৌশল প্রয়োগ করুন। চিনি বা মধু দিয়ে মিষ্টি করার আগে মনে রাখুন, WHO ১ বছরের কম বয়সী শিশুকে চিনি না দেয়ার পরামর্শ দেয়। ১ বছরের পর সামান্য গুড় বা খেজুরের রস ব্যবহার করা যেতে পারে (কিন্তু নিয়মিত অভ্যাস না করাই ভালো)।
- পেটে অস্বস্তি (ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স): কিছু শিশুর পরিপাকতন্ত্রে ল্যাকটোজ হজমের এনজাইম কম থাকে। সমাধান: ল্যাকটোজ-ফ্রি দুধ ব্যবহার করুন। দই, চিজ, লাচ্ছি (যাতে ল্যাকটোজ কম থাকে) দিতে পারেন। পুষ্টিবিদরা প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দইকে দুধের বিকল্প হিসেবে উল্লেখ করেন।
- ক্ষুধা না থাকা / স্ন্যাকসে পেট ভরা: দুধ খাওয়ার আগেই অন্য খাবারে পেট ভরে থাকলে শিশু দুধ খেতে চাইবে না। সমাধান: দুধ দেয়ার সময়টা এমন বেছে নিন যখন শিশু ক্ষুধার্ত কিন্তু খুব বেশি ক্লান্ত বা খিটখিটে নয় (যেমন সকালের নাস্তা বা বিকেলের স্ন্যাকস টাইম)।
- নেতিবাচক অভিজ্ঞতা: জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা, বকাঝকা বা অসহিষ্ণুতা শিশুর মনে দুধের বিরুদ্ধে দৃঢ় অনীহা তৈরি করে। সমাধান: ধৈর্য ধরুন। জোর করবেন না। কয়েক দিন বিরতি দিন। তারপর নতুন কৌশলে, নতুন উৎসাহে আবার চেষ্টা শুরু করুন।
বয়সভিত্তিক কৌশল: ছোট্ট শিশু থেকে স্কুলগামী পর্যন্ত
শিশুর দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার পদ্ধতি বয়স অনুযায়ী ভিন্ন হয়। জাতীয় পুষ্টি সেবার (এনএনএস) ২০২৪ সালের হালনাগাদ পরামর্শ অনুযায়ী:
১ বছর বয়সের আগে
- প্রধান খাবার মাতৃদুগ্ধ/ফর্মুলা: এই বয়সে গরুর দুধ প্রধান পানীয় নয়। শুধুমাত্র স্বাদ পরিচয় ও প্রস্তুতির জন্য অল্প পরিমাণে (দিনে ১-২ আউন্স) দেয়া যেতে পারে খাবারে মিশিয়ে বা আলাদাভাবে।
- ফোকাস পুষ্টিকর সলিড ফুড: আয়রন সমৃদ্ধ খাবার (লিভার, মাংস, ডাল), ফল, শাকসবজির পিউরি।
- গুরুত্বপূর্ণ: গরুর দুধ দেয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন, বিশেষ করে পারিবারিক অ্যালার্জির ইতিহাস থাকলে।
১-৩ বছর (টডলার)
- ধীরে ধীরে প্রবর্তন: এই বয়সে গরুর দুধ প্রধান ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি উৎস হতে শুরু করে। পুরো ফ্যাট দুধ (Whole Milk) দিন (দিনে ১৬-২৪ আউন্সের বেশি নয়)।
- কাপে পান করানোর অভ্যাস: বোতল ছাড়াই কাপ বা গ্লাসে দুধ পান করতে উৎসাহিত করুন। এটি দাঁতের ক্ষয় (বেবি বোটল কারিজ) রোধ করে।
- খাবারে সৃজনশীল অন্তর্ভুক্তি: দুধ দিয়ে রান্না করা খাবার (কাস্টার্ড, পায়েস, পুডিং, প্যানকেক), দই, পনির প্রচুর দিন।
৩-৫ বছর (প্রি-স্কুল)
- নিয়মিত রুটিন: দিনে দুবার (সকালের নাস্তায় ও রাতের খাবারে বা স্ন্যাকস টাইমে) দুধ দেয়ার চেষ্টা করুন। মোট ২-২.৫ কাপ (১৬-২০ আউন্স) লক্ষ্য রাখুন।
- পছন্দের স্বাধীনতা দিন: কখনো স্ট্রবেরি মিল্কশেক, কখনো চকোলেট মিল্ক (পরিমিত), কখনো ঠান্ডা, কখনো সামান্য গরম – পছন্দের কিছুটা সুযোগ দিন (সুস্থ বিকল্পের মধ্যে)।
- শিক্ষা ও উৎসাহ: “দুধ তোমার হাড়গুলোকে দানবের মতো শক্ত করবে!” বা “এটা তোমার মস্তিষ্ককে সুপারহিরোর মতো চালাবে!”—এমন মজার তথ্য দিন।
৬ বছর ও তার ঊর্ধ্বে (স্কুলগামী)
- সক্রিয় অংশগ্রহণ: তাদেরকে নিজের গ্লাসে দুধ ঢালতে দিন, ফল মিশিয়ে স্মুদি বানাতে সাহায্য করুন। মালিকানা বোধ আগ্রহ বাড়ায়।
- পুষ্টির গুরুত্ব বোঝানো: সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করুন দুধ কেন তাদের ক্রীড়া, পড়ালেখা ও বৃদ্ধির জন্য জরুরি।
- বিকল্পের প্রস্তুতি: যদি দুধ একেবারেই পছন্দ না হয়, তবে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি’র অন্যান্য ভালো উৎস (দই, চিজ, টফু, সবুজ শাকসবজি, ফর্টিফায়েড সয়া বা বাদাম দুধ) সম্পর্কে জানুন এবং নিশ্চিত করুন সেগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে খাচ্ছে। তবে প্যাকেটজাত ফলের জুস বা কোমল পানীয় কখনই বিকল্প নয়।
দুধ ছাড়াও পুষ্টি: বিকল্পের খোঁজে
কিছু শিশু সত্যিই দুধ সহ্য করতে পারে না বা পছন্দ করে না। শিশুর দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টার পরেও যদি সফল না হওয়া যায়, হতাশ হবেন না। পুষ্টিবিদ ড. শাহিনা ফেরদৌসির পরামর্শ, “দুধই একমাত্র পুষ্টির উৎস নয়। লক্ষ্য হলো পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও প্রোটিন নিশ্চিত করা।” বিকল্প উৎসগুলো হলো:
- দই ও চিজ: এগুলোতে ল্যাকটোজ কম থাকে, প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, এবং ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের দুর্দান্ত উৎস। গ্রিক ইয়োগার্টে প্রোটিন বেশি।
- সবুজ শাকসবজি: পালং শাক, ব্রকলি, কলমি শাক, ডাঁটায় প্রচুর ক্যালসিয়াম (যদিও শোষণ দুধের তুলনায় কম)।
- মাছ: ছোট মাছ (মলা, ঢেলা, চাপিলা) হাড়সহ খাওয়ালে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি মেলে।
- বাদাম ও বীজ: তিল, আখরোট, আমন্ড, চিয়া সিডসে ক্যালসিয়াম ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট আছে। বাটার (তাহিনি, আঁখরোটের মাখন) দেয়া যেতে পারে।
- ফর্টিফায়েড খাবার: বাজারে অনেক সিরিয়াল, ওটমিল, সয়া দুধ, বাদাম দুধ বা কমলার জুসে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি যোগ করা থাকে। লেবেল দেখে নিশ্চিত হোন।
- ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট: যদি খাদ্যের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন ডি নিশ্চিত করা কঠিন হয়, ডাক্তার সাপ্লিমেন্ট লিখে দিতে পারেন।
গুরুত্বপূর্ণ: বিকল্প উৎসগুলোর পুষ্টিমান দুধের সমান নাও হতে পারে। তাই কোন বিকল্পগুলো দিচ্ছেন এবং সেগুলো থেকে কতটুকু পুষ্টি পাচ্ছে, তা নিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ বা পুষ্টিবিদের সাথে আলোচনা করুন।
মায়ের ডায়েরি: বাস্তব জীবনের সফলতার গল্প
শিশুর দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার এই যাত্রায় একা নন আপনি। শুনুন ঢাকার ডেমরার রুবিনা আক্তারের অভিজ্ঞতা (৪ বছর বয়সী আরিয়ানের মা): “আরিয়ান দুধের নাম শুনলেই পালাতো। আমি হাল ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। তারপর পুষ্টিবিদের পরামর্শে শুরু করলাম ‘দুধের আস্তে আস্তে গেম’। প্রথম দিন শুধু তার প্রিয় প্লেটে এক চামচ দুধ রাখলাম। কিছু না বললাম। সে অবাক হল। দ্বিতীয় দিনে বললাম, ‘বলো বাঘ! তুমি কি এক চামচ দুধ খেয়ে বাঘের মতো গর্জন করতে পারবে?’ সে হেসে খেয়ে ফেলল ‘রোওয়ার’! প্রতিদিন এক চামচ বাড়ালাম। এখন সে নিজেই বলে, ‘মা, আমার বাঘের দুধ দাও!’ ধৈর্য আর খেলার ছলে জয়ী হলাম।”
খুলনার মো. সাকিব (৬ বছরের রাইয়ানের বাবা) যোগ করেন, “আমরা পরিবারে ‘দুধের চ্যালেঞ্জ’ শুরু করেছি। সন্ধ্যায় সবাই একসাথে দুধ খাই। কে কত জোরে ‘আহ!’ শব্দ করতে পারে! রাইয়ান এখন এটার জন্য উন্মুখ থাকে।”
এই গল্পগুলোর মর্মকথা? জোর নয়, সৃজনশীলতা। হতাশা নয়, ধৈর্যশীলতা। প্রত্যাখ্যান নয়, ইতিবাচক শক্তিবৃদ্ধি (Positive Reinforcement)।
জেনে রাখুন (FAQs)
১. শিশু একেবারেই দুধ খেতে চাইছে না, কী করব?
- জোর করবেন না। কয়েক দিন বিরতি দিন। তারপর নতুনভাবে চেষ্টা শুরু করুন (ভিন্ন পাত্র, তাপমাত্রা, খাবারের সাথে মিশ্রণ)।
- নিশ্চিত হোন অন্য স্ন্যাকস বা জুসে পেট ভরে আছে কিনা। ক্ষুধার সময় বেছে নিন।
- দুধের বিকল্প পুষ্টির উৎস (দই, চিজ, ফর্টিফায়েড খাবার) দিতে থাকুন।
- যদি দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা থাকে বা অন্য লক্ষণ (ওজন না বাড়া, ক্লান্তি) দেখা দেয়, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
২. আমার শিশুর দুধে অ্যালার্জি আছে বলে সন্দেহ হয়। লক্ষণগুলো কী?
- ত্বকে: চুলকানি, ফুসকুড়ি (হাইভস), ফুলে যাওয়া (বিশেষ করে মুখ, ঠোঁট, জিহ্বা)।
- পেটে: বমি, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া (রক্ত থাকতে পারে), পেট ফাঁপা, গ্যাস।
- শ্বাসতন্ত্র: নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি, শ্বাসকষ্ট, কাশি, গলায় আওয়াজ বদলে যাওয়া।
- দ্রুত ব্যবস্থা নিন: এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবিলম্বে নিকটস্থ হাসপাতালে নিন। দুধের অ্যালার্জি গুরুতর হতে পারে।
৩. শিশুকে দই বা চিজ দিলে কি দুধের মতোই পুষ্টি পাবে?
- হ্যাঁ, অনেকাংশেই। দই ও চিজে দুধের মতোই উচ্চমানের প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস থাকে। দইয়ে আছে উপকারী প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া যা হজমে সাহায্য করে।
- বেশি সুবিধা: এগুলোর ল্যাকটোজ কম থাকে, তাই যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে, তাদের জন্য সহজে হজমযোগ্য।
- মাত্রা: পুষ্টিবিদেরা প্রায়ই দই ও চিজকে দুধের চমৎকার বিকল্প হিসেবে সুপারিশ করেন। তবে পরিমাণ সম্পর্কে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৪. শিশুর দুধে চিনি বা মধু মিশিয়ে দেব কি?
- ১ বছরের কম বয়সী শিশুকে: কখনই নয়। চিনি, মধু, গুড় – কোনোটাই দেবেন না। মধুতে বোটুলিজমের ব্যাকটেরিয়ার স্পোর থাকতে পারে, যা শিশুর জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। চিনি দাঁতের ক্ষয় ও অস্বাস্থ্যকর ওজন বাড়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
- ১ বছরের বেশি বয়সী শিশুকে: খুব প্রয়োজন হলে অতি অল্প (১ চা-চামচের কম) চিনি বা গুড় দেয়া যেতে পারে শুধুমাত্র স্বাদ পরিবর্তনের জন্য এবং ধীরে ধীরে তা কমিয়ে আনতে হবে। মধু দেয়া যেতে পারে, তবে তা খুবই পরিমিত। নিয়মিত মিষ্টি করে খাওয়ানোর অভ্যাস করাবেন না।
৫. কতটুকু দুধ প্রতিদিন প্রয়োজন?
- ১-২ বছর: দিনে ১৬-২৪ আউন্স (প্রায় ২-৩ কাপ) পুরো ফ্যাট দুধ।
- ২-৫ বছর: দিনে ১৬-২০ আউন্স (প্রায় ২-২.৫ কাপ) লো-ফ্যাট (১%) বা স্কিম দুধে স্যুইচ করার কথা ভাবতে পারেন, তবে পুরো ফ্যাট দুধও চলতে পারে ডাক্তারের পরামর্শে।
- ৬ বছর ও ঊর্ধ্বে: দিনে ৩ কাপ (২৪ আউন্স) কম ফ্যাট বা ফ্যাট-ফ্রি দুধ বা সমতুল্য দুগ্ধজাত পণ্য। মনে রাখুন, এই পরিমাণ শুধু পানীয় দুধ নয়, দই, চিজ, দুধ দিয়ে রান্না খাবার সব মিলিয়ে।
৬. ফ্লেভার্ড মিল্ক (চকোলেট/স্ট্রবেরি) দেয়া কি ঠিক?
- সতর্কতার সাথে: ফ্লেভার্ড মিল্কে সাধারণত প্রচুর চিনি যোগ করা হয়। তাই নিয়মিত দেয়া উচিত নয়।
- কৌশল হিসেবে: যদি শিশু একেবারেই সাদা দুধ না খায়, তাহলে অল্প পরিমাণে ফ্লেভার্ড মিল্ক দিয়ে শুরু করতে পারেন, কিন্তু লক্ষ্য রাখুন ধীরে ধীরে ফ্লেভারের পরিমাণ কমিয়ে সাদা দুধের দিকে নিয়ে আসতে।
- ঘরে বানানো: বাসায় ফলের স্মুদি বা কোকো পাউডার মিশিয়ে বানালে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
(Final Paragraph – No Heading)
শিশুর দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার এই অভিযাত্রায় প্রতিটি ছোট পদক্ষেপই এক একটি বড় বিজয়। মনে রাখবেন, প্রতিটি শিশুই অনন্য। কারো কাছে সাদা দুধের গ্লাস আনন্দের প্রতীক, কারো কাছে তা প্রথমে এক অচেনা স্বাদ। এখানে কোনো জোরজবরদস্তির স্থান নেই, আছে শুধু অফুরন্ত ধৈর্য, সৃজনশীলতা আর অটুট বিশ্বাস। ডাক্তারদের পরামর্শ, গবেষণার আলো, এবং লক্ষ-লাখ মা-বাবার বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে—ধারাবাহিক ইতিবাচক উদ্যোগই শেষ পর্যন্ত সফলতার দিকে নিয়ে যায়। আপনার ছোট্ট সোনামনিটির হাড়ের শক্তি, দাঁতের উজ্জ্বলতা, আর মস্তিষ্কের প্রখরতার ভিত্তি রচিত হতে পারে এই সহজ অথচ অমূল্য অভ্যাসের মধ্য দিয়েই। আজ থেকেই শুরু করুন—এক চামচ দুধ দিয়ে, একটু ধৈর্য ধরে, একটু হাসি মুখে। আপনার শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এই ছোট্ট বিনিয়োগই সবচেয়ে মূল্যবান। শিশুর দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার এই যাত্রায় আপনি একা নন, আমরা আছি আপনার সাথে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।