অর্থনীতি ডেস্ক : এবারের মৌসুমে কৃষকের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে এসেছিলো ঘুর্ণিঝড় বুলবুল। বুলবুলের কারণে সারাদেশে ভারী বৃষ্টিপাত আর বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করায় ৫০ হাজার ৫০৩ জন কৃষকের প্রায় ৭২ হাজার ২১২ টন ফসল ক্ষতি হয়েছে। তবে ধানের ব্যাপক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকের জন্য সুফল বয়ে এনেছে শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন।
চলতি বছর লাউ, শিম, পটল, শসা ও করলা বেগুন, কপি, লাল শাকসহ অন্যান্য সবজির ভালো ফলন হয়েছে। দেশের শস্যভাণ্ডার নওগাঁর মান্দা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে আগাম সবজি চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন অনেক কৃষক। তবে, এ বছর অসময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে অনেকে আবার পড়েছেন ক্ষতির মুখে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫ শ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বেগুন ৮৫ হেক্টর, ফুলকপি ৯০ হেক্টর, বাঁধাকপি ৬৫ হেক্টর, মুলা ৪০ হেক্টর, শিম ৫০ হেক্টর, মিষ্টি কুমড়া ২০ হেক্টর, ক্ষিরা ৩০ হেক্টরসহ অবশিষ্ট জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করেছে কৃষক। এ ছাড়া ৬৫০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু ও ১৮০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে তোড়া পেঁয়াজের।
কৃষকরা বলছেন, চলতি বছর বুলবুল ছাড়াও অন্য সময়ের আবহাওয়াও কৃষি খাতে আঘাত করেছে। সবজির জমি তৈরিকালে গত ২৬ সেপ্টেম্বর অসময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে আগাম সবজিসহ তোড়া পেঁয়াজ ও সরিষার চাষ পিছিয়ে যায়। এ বৃষ্টিপাতের আগে যেসব কৃষক আলু, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করেছিলেন তারাও পড়ে ক্ষতির মুখে।
কৃষকরা জানান, এবারে তোড়া পেঁয়াজের বীজের দাম অনেক চড়া। এক বিঘা জমিতে এ মৌসুমে রোপণের জন্য অন্তত ২৮ হাজার টাকার বীজ পেঁয়াজের প্রয়োজন হবে। এত চড়া দামে বীজ কিনে লোকসানে পড়ার শঙ্কায় আবাদ কম হয়েছে। এ ছাড়া অসময়ে বৃষ্টিতে তৈরি জমি নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই সব জমিতে আবারও হালচাষ করতে হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের নতুন সবজি বেগুন ৫০ টাকা, ফুলকপি ৭০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, শিম ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, পালং শাক ৪০ টাকা, গাঁজর ১০০ টাকা, শসা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে এ অঞ্চলের কৃষকদের বোরো ধান ছেড়ে অন্য ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন কৃষি বিভাগ। কৃষিবিদরা বলছেন, পানিসাশ্রয়ী ফসলের চাষ বাড়ানো গেলে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন কমে যাবে। এতে রক্ষা পাবে পরিবেশের ভারসাম্য। এ জন্য সবজি, গমসহ পানিসাশ্রয়ী ফসল চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান জানান, এ উপজেলার কুসুম্বা, মান্দা, নুরুল্লাবাদসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মাটিতে প্রচুর পরিমাণে সবজির চাষ হয়ে থাকে। কৃষকরা তাদের জমি থেকে টাটকা সবজি তুলে স্থানীয় হাটবাজারে প্রতিদিন বিক্রি করছেন। কৃষকদের উৎপাদিত সবজি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন শহরে চলে যাচ্ছে। অল্প জমিতে সবজি চাষ করে বেশি আয় হওয়াই দিনদিন বাড়ছে এর পরিধি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।