আর কদিন বাদেই শহরেও হয়তো হাড় হিম করা শীতের দেখা মিলবে। কিন্তু গ্রামে ইতিমধ্যেই প্রচণ্ড শীত পড়ছে। হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন—পত্রিকার পাতায় এমন কথা পড়েছেন নিশ্চয়ই। বাস্তবে শীতের কারণে মানুষের হাড় কাঁপে না। পেশি ভেদ করে হাড়ে শীত পৌঁছে গেলে অবশ্য এমনটা মনে হওয়া স্বাভাবিক। তবে বাস্তবেই দাঁতের কাঁপাকাঁপি দেখা যায়। বলা ভালো, আমাদের প্রায় সবারই এমন অভিজ্ঞতা আছে। ঠান্ডায় দুপাটি দাঁতে ঠোকাঠুকি লেগে গেছে অনেকবার। কখনো ভেবেছেন, কেন হয় এমনটা?
এন্ডোথার্ম বা উষ্ণ রক্তের প্রাণীরা নিজের দেহ উষ্ণ রাখতে শরীরের ভেতরেই তাপ উৎপাদন করতে পারে। মানুষসহ প্রায় সব স্তন্যপায়ী এবং কিছু পোকামাকড় এ ধরনের প্রাণী। এদের দেহ নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ছাড়া ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এই নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ধরে রাখার সক্ষমতাকে বলা হয় থার্মোরেগুলেশন। বাংলায় বলা যায় ‘তাপ নিয়ন্ত্রণ’।
শরীরের তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্য শরীরবৃত্তীয় বিভিন্ন কাজ করি আমরা। এ ছাড়া অভ্যাসগত নানা কাজের মাধ্যমেও আমরা শরীর উষ্ণ রাখতে পারি। যেমন ধরুন, কাঁপুনি। এটাও একধরনের শরীরবৃত্তীয় কাজ। অন্যদিকে শীত থেকে বাঁচার জন্য আমরা যে কাপড় পড়ি, তা অভ্যাসগত কাজ।
ধরা যাক, তীব্র শীতের মধ্যে আপনি ঠিক করলেন, ভারী কাপড় পড়বেন না। শরীরকে উষ্ণ রাখার জন্য কিছুই করলেন না। এরকম পরিস্থিতিতে মস্তিষ্ক তাপমাত্রা ধরে রাখতে কিছু নির্দেশনা পাঠাবে দেহকে। শুধু পাঠাবে না, পাঠাতে বাধ্য হবে। কারণ, তাপমাত্রা অনেকটা কমে গেলে শরীর ঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না। বিপদে পড়বে মস্তিষ্ক।
মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশ সব সময় নিবিড়ভাবে দেহের তাপমাত্রার হিসেব রাখে। শরীরের ঠান্ডা লাগা শুরু হলে হাইপোথ্যালামাস স্নায়ুর মাধ্যমে ত্বকে সংকেত পাঠায়। এ সংকেত পেয়ে ত্বকের লোমকূপের সঙ্গে যুক্ত পেশি সক্রিয় হয়, ফলে দাঁড়িয়ে যায় লোম। শরীরে পর্যাপ্ত লোম থাকলে এটা শরীরের তাপ কিছুটা বাড়াতে বেশ কাজে লাগে। ত্বক থেকে তখন খুব সহজে তাপ পরিবেশে যেতে পারে না। কারণ, ত্বক ও পশমের পর থাকে বাতাসের স্তর।
লোম দাড়িয়ে গেলে এর ফাঁকে ফাঁকে বাতাস ঢুকে ত্বক ও পরিবেশের মাঝখানে একটা তাপ কুপরিবাহী স্তর তৈরি করে। পশমী কাপড় যেভাবে তাপ নিরোধক হিসেবে কাজ করে, বিষয়টা অনেকটা সেরকম। রোমশ প্রাণীরা এভাবেই দেহের তাপ ধরে রাখে।
মানুষ যেহেতু ভালুকের মতো রোমশ নয়, তাই লোম দাঁড়িয়ে গেলেই শীত কমে না। কারণ, আমাদের পশম ওরকম ঘন নয়। ফলে এ সময় দেহের অন্যান্য পেশি সংকুচিত হওয়ার জন্য নতুন সংকেত পায় মস্তিষ্ক থেকে। কারণ, পেশি সংকুচিত হলে দ্রুততম সময়ে তাপ উৎপন্ন হয় দেহে। এই পেশি সংকোচনের ফলেই হাত-পাসহ সবকিছু কাঁপতে শুরু করে। এই কাঁপাকাঁপিতে যোগ দেয় চোয়াল (কিংবা বলতে পারেন, চোয়ালের পেশি)। ফলে দাঁতে দাঁত বাড়ি খায়, শুরু হয় ঠোকাঠুকি।
তার মানে, দাঁতে ঠোকাঠুকি লেগে গেলে শীত ঠেকাতে দ্রুত মোটা কাপড় পরা প্রয়োজন। বিষয়টা অস্বাভাবিক নয়, তবে মস্তিষ্কের সতর্কবার্তায় সাড়া না দেওয়া যে বুদ্ধিমানের কাজ নয়, তা তো আলাদা করে বলার দরকার নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।