জুমবাংলা ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা করেও আশাহত দলটির নেতারা। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে টেলিফোন করার বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় বিব্রত বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতে বিএনপির দুর্বলতাই প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করছেন তারা। সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে এখন আইনি লড়াই শেষ ভরসা দলটির সামনে।
আজ সোমবার জামিন আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তবে জামিন আবেদনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে না পারায় জমা দেওয়ার তারিখ এক দিন পেছাতে পারে। এ পরিস্থিতিতে দু-এক দিনের মধ্যেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জন্য ফের জামিন আবেদন করবেন তার আইনজীবীরা। জামিন আবেদনে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা উল্লেখ করে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি চাওয়া হবে বলে সংশ্নিষ্ট আইনজীবীরা জানিয়েছেন। গত শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে হাইকোর্টে ফের জামিন আবেদন করার সিদ্ধান্ত হয়।
মির্জা ফখরুল বলেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। আমরা বারবার তার মুক্তির দাবি করেছি, জামিন চেয়েছি এবং মুক্তির মধ্য দিয়ে তার চিকিৎসার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে কোনো রকমের সাড়া পাইনি। মানবিক কারণে দ্রুত খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান তিনি।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে সমঝোতায় ব্যর্থ হয়ে নিজেদের করণীয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। আন্দোলন কিংবা আপসরফা কোনো পথেই সফল হতে পারছে না বিএনপি। এখন আইনি পথেই চলতে চাইছেন শীর্ষ নেতারা।
অবশ্য দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, যে মামলায় আপিল বিভাগ জামিন খারিজ করেছেন, সে মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। ইতোমধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টে দু’বার, আপিল বিভাগে একবার জামিন আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া। তিনবারই তার জামিন আবেদন খারিজ হয়।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, এর আগে জামিন নাকচ হয়েছে ঠিকই, তবে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে জামিন আবেদন খারিজ হওয়ার পর আবারও জামিন চাইতে আইনগত বাধা নেই। তিনি আরও বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করা যায়।
দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার মুক্তির জন্য কার্যত কিছুই করতে পারছে না দলটি। নিয়মমাফিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করার কৌশল কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। শেষ মুহূর্তে সরকারের সঙ্গে পর্দার অন্তরালে আপসরফার মাধ্যমেও একটি সুরাহা করতে চেয়েছিলেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার মুহূর্তে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পরামর্শ দিয়ে যান দলের শীর্ষ নেতাদের। তার নির্দেশনায় এবং ক্ষমতাসীন দলকে না চটিয়ে আইনিভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেন বিএনপির হাইকমান্ড। তারা মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান, স্বাক্ষর অভিযান, কালো পতাকা মিছিল ও বিক্ষোভ মিছিলের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেন। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগের কৌশলও নেন তারা। তবে কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি নেতাকর্মীদের মতো হতাশা বিরাজ করছে দলটির সিনিয়র নেতাদের মধ্যেও। তারা বুঝতে পারছেন না কোন প্রক্রিয়ায় তাদের দলের প্রধান মুক্তি পেতে পারেন? তদ্বির আর আন্দোলনের হুঙ্কারে কোনো কাজ হচ্ছে না, এটিও বুঝতে পারছেন তারা। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির ফলে রাজনৈতিক দায়বদ্ধতায়ও অনুভব করছেন নেতারা। তবে কী ধরনের কার্যক্রম কিংবা কর্মসূচি নেবেন তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে রয়েছে মতপার্থক্য। কেউ বলছেন, তাদের আর হারানোর কিছু নেই। তাই ‘ডু অর ডাই’ পথ বেছে নিতে হবে। অন্যপক্ষ মনে করছে, বৈশ্বিক রাজনীতি পরিবর্তনের কারণে আত্মঘাতী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। তাদের সুদিনের রাজনীতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
জানা গেছে, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির একটি বড় অংশ মনে করছে সারাবিশ্বেই গণতন্ত্র এখন হুমকির মধ্যে রয়েছে। আগে যেসব শক্তিশালী রাষ্ট্র গণতন্ত্রের পক্ষে সোচ্চার ছিল, সেসব দেশেও এখন ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র। ফলে প্রভাবশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর তেমন একটা সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।
অন্যদিকে স্থায়ী কমিটির দু-একজন নেতার সঙ্গে দলের মধ্যম সারির নেতারা মনে করছেন, তাদের নেত্রীর কারামুক্তির জন্য জোরালো আন্দোলন দরকার। তবে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পাহাড়, অর্থনৈতিক সংকট আর সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে সেদিকেও যেতে চাইছেন না বিএনপি হাইকমান্ড।
খালেদা জিয়ার স্বজনদের মধ্যেও বিরাজ করছে নানা শঙ্কা। এভাবে চলতে থাকলে জীবিত অবস্থায় খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন তারা। এ জন্য রাজনীতির বাইরে নানা পদক্ষেপও নিয়েছেন তারা। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সংবাদমাধ্যমে আবেদন-নিবেদন করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আজ বাংলাদেশের বাস্তবতাকে অস্বীকার করে আমার বিশ্বাস হয় না খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারব। এটাই বাস্তবতা, এটাই কঠিন সত্যি।
সূত্র : সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।