লাইফস্টাইল ডেস্ক : ১০ সেপ্টেম্বর ছিল বিশ্ব আত্ম*হত্যা প্রতিরোধ দিবস। প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ আত্মহ*ত্যা করেন। অর্থাৎ প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহ*ত্যা করেন। এই সংখ্যাটা ক্রমশই বাড়ছে। আত্মহ*ত্যা মানে একটি সম্ভাবনা আর স্বপ্নের অকালমৃত্যু। মেয়েদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে আত্মহ*ত্যার হার তিন থেকে চার গুণ বেশি। প্রশ্ন হল, কেন আত্মহ*ত্যার ঘটনা বাড়ছে? কোনওভাবেই কি এই দুঃখজনক ঘটনা ঠেকানো যায় না?
অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, বাড়ির একমাত্র রোজগেরে মানুষটির আত্মহ*ত্যার কারণে কত পরিবারে অকালেই অন্ধকার নেমে এসেছে। মায়ের আত্মহ*ত্যার কারণে ভেসে গিয়েছে কত শিশুর ভবিষ্যৎ। তবে একটু চেষ্টা করলে আত্মহ*ত্যা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। আত্মহ*ত্যার মতো ঘটনা ঠেকিয়ে একটি স্বপ্নের অকালমৃত্যু রোধ করা অসম্ভব কিছু নয়। একজনের জীবন রক্ষা করে একটি পরিবারকে বাঁচিয়ে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কীভাবে? কিছু মানুষ আছেন আত্মহ*ত্যা প্রবণ। আত্মহ*ত্যার মতো দুঃখজনক ঘটনা প্রতিরোধ করতে হলে প্রথমে এ ধরনের মানুষকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। যাঁরা আত্মহ*ত্যা করতে চান তাঁদের শরীরি ভাষায় তার আগাম একটা আভাস মেলে। একটু সতর্ক হলেই সেটা বোঝা যায়। তাই একটু সতর্ক থাকলেই একজনের জীবন বাঁচিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
কিন্তু সেই সব আগাম ইঙ্গিতগুলি কেমন হবে? সাধারণত যে ব্যক্তি আত্মহ*ত্যা করবেন বলে ভেবেছেন তিনি কথায় কথায় বলবেন, সংসারে তার প্রয়োজন শেষ হয়ে গেছে। সংসার থেকে তাঁর আর কিছু পাওয়ার বা দেওয়ার নেই। সংসারে তিনি থাকলেই বা কি, না থাকলেই বা কী। খুঁজে দেখলে অনেক সময় ওই ব্যক্তির কাছ থেকে আত্মহ*ত্যা সংক্রান্ত চিরকুটও মিলতে পারে। আত্মহ*ত্যার আগে প্রায় সকলেই আত্মহ*ত্যার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এবং কোথায় পাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে খোঁজখবর করেন। যেমন- দড়ি, ঘুমের ওষুধ, কীটনাশক প্রভৃতি। আত্মহ*ত্যা করার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মনে করেন, তিনি আর সকলের অবহেলার বা উপেক্ষার পাত্র। তাই নিজেকে ক্রমশ অন্যদের কাছ থেকে গুটিয়ে নেন। একা থাকতে শুরু করেন। ঘন ঘন মৃত্যুর কথা চিন্তা করেন ও অন্যদের সে কথা বলেন। চূড়ান্ত কাজটি করার আগে জমিজমা, ব্যাঙ্ক, বিমা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি সেরে ফেলেন। এমনকী, অনেক সময় নিজের মুখে প্রিয়জনদের কাছে আত্মহ*ত্যা করার কথা বলেও ফেলেন। নিকটাত্মীয়, বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে অযাচিতভাবেই যোগাযোগ করে বলেন, কে কত দিন বাঁচে তা কে বলতে পারে। আমি মরে গেলে কোনও ভুল করে থাকলে ক্ষমা করে দিও। সকলে ভাল থেক।
তবে আত্মহ*ত্যা প্রতিরোধ করতে হলে পরিবারের সকলকেই উদ্যোগী হতে হবে। পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব, নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী, সহকর্মী, সহপাঠী সকলকেই একে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। সকলেরই উচিত, অপরের কথা মন দিয়ে শোনা। একে অপরকে উপযুক্ত সম্মান দেওয়া। সংসারে প্রতিটি মানুষ যেন উপযুক্ত ভালবাসা ও সম্মান পান সে বিষয়টি নিশ্চিত করা। সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় সহজেই আত্মহ*ত্যা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। আত্মহ*ত্যাপ্রবণ ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতি ও ভালবাসার যেন অভাব না হয় সে বিষয়টি সর্বাগ্রে নিশ্চিত করতে হবে। তাঁর দুঃখ কষ্টের কারণ বুঝে তা দূর করার চেষ্টা করে তাঁর জীবনে নতুন আশার আলো ফিরিয়ে দিতে হবে। ভবিষ্যতের সুন্দর দিনগুলির কথা পৌঁছে দিতে হবে তাঁর কানে। সাধারণত মনোবিকারের কারণেই অধিকাংশ মানুষ আত্মহ*ত্যা করেন। তাই সঠিকভাবে মনোরোগের চিকিৎসা করা হলে আত্মহ*ত্যা প্রতিরোধ সম্ভব। বাড়াতে হবে সামাজিক সচেতনতাও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।