শাহাদুল ইসলাম সাজু, বাসস: বরই বাগান করে সফল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নূর ইসলাম। বাড়ি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ঝামুটপুর গ্রামে। করোনা প্রাদুর্ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় যেন সময় কাটছিলনা । বাড়িতে এসে পড়ালেখার পাশাপাশি ’সখের বরই বাগান’ করে এখন সফলতার শীর্ষে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নূর ইসলামের জমতে উন্নত জাতের দেশী আগাম টক বরই ও উন্নত জাতের বিদেশী বল সুন্দরী, কাশ্মীরী বরই থোকাই থোকাই দুলছে। ইতোমধ্যে তার নিবেদিত শ্রম, সততা আর ঘামের প্রতিফলন সুরভিত হয়ে তার বাগান থেকে কাঙ্খিত বরই বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রি শুরু হয়েছে। বর্তমানে বাজারে ওই বরই বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি। কীটনাশক ছাড়াই বরই চাষে ভালো ফলনের পাশাপাশি দামও পাচ্ছেন ভালো।
কালাই সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার উত্তর দিকে উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের ঝামুটপুর গ্রামের পাকা রাস্তার সংলগ্ন জমিতে ঢাবি শিক্ষার্থী নূর ইসলাম “সখের বরই বাগান” নামে প্রায় তিন বিঘা উচু জমিতে ২০২০ সালে এপ্রিল মাসে কলমের উন্নত জাতের দেশী আগাম টক বরই গাছ প্রায় ৫০টি ও উন্নত জাতের বিদেশী বল সুন্দরী বরই গাছ প্রায় তিনশটি ও কাশ্মীরী বরইয়ের ৫০টি চারা রোপোণ করে। সেই সখের বরই বাগান এখন বাণিজ্যিক রুপ নিয়েছে। উন্নত জাতের দেশী আগাম টক বরই ও উন্নত জাতের বিদেশী বল সুন্দরী, কাশ্মীরী বরই চাষ করে সফলতার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছে নূর ইসলাম । তার বাগানের যেদিকে চোখ যাচ্ছে থোকায় থোকায় দুলছে শুধু বরই আর বরই। এছাড়াও বাগানে গোল্ডেন-৮ জাতের পেয়ারা একশটি, উন্নত জাতের বারি মাল্টা একশটি, সিডলেস লেবু ১০০ টি ও উন্নত জাতের পেঁপে একশটি গাছ রয়েছে।
নূর ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে উন্নত জাতের দেশী আগাম টক বরই প্রায় ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। আগামী জানুয়ারী মাস পর্যন্ত ওই বরই থাকবে এবং আরও ২০ হাজার টাকার বরই বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে জানা যায় । উন্নত জাতের বিদেশী বল সুন্দরী বরই ও কাশ্মীরী বরই বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি শুরু হবে আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। অনুকূল আবহাওয়া আর যথাযথ পরিচর্চার কারণে তার বাগানে বরইয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে।
এ “সখের বরই বাগান” এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার কৃষক, বৃক্ষপ্রেমি ও ফল চাষিরা আসেন। ঢাবি শিক্ষার্থী নূর ইসলামের ’সখের বরই বাগান’ এর নাম এখন এলাকার মানুষের মুখে মুখে।
উপজেলার ঝামুটপুর গ্রামের সফল বরই চাষি নূর ইসলাম বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমার সময় কাটছিল না। তখন আমি গ্রামের বাড়িতে এসে কি করা যায় সে চিন্তায় ছিলাম। অন্যান্য ফসলের তুলনায় বরই উৎপাদন খরচ কম এবং বাজারে বরই ভালো দাম থাকার কারণে নিজেই সিদ্ধান্ত নিলাম বরই চাষ করবো। ইউটিউবে বিভিন্ন বরই চাষের উদ্যোক্তা বিষয়ক ভিডিও দেখার মাধ্যমে অনুপ্রেরণা নিয়ে সরাসরি কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা এবং ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর বরই বাগান পরিদর্শন করে মনের মধ্যে ইচ্ছে জাগে বাগান করার। পড়ালেখার খরচের টাকা থেকে কিছু বাচিয়ে ও বাবার কাছ থেকে বাকি টাকা ধার নিয়ে বাড়ির পাসে উঁচু জমিতে তেমন কোন ফসল উৎপাদন হতোনা এমন প্রায় তিন বিঘা জমিতে গত ২০২০ সালে এপ্রিল মাসে বরইয়ের বাগান তৈরী করি। পরে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর এর একটি বাগান থেকে কলমের উন্নত জাতের দেশী আগাম টক বরই গাছ প্রায় ৫০টি ও উন্নত জাতের বিদেশী বল সুন্দরী বরই গাছ প্রায় তিনশটি, কাশ্মীরী বরই গাছ প্রায় ৫০টি চারা এনে রোপোণ করে নিজেই তদারকি করি। এ বাগান করতে খরচ হয় প্রায় ৮০ হাজার টাকা। আমার বাগানে এখন ভরপুর ফল এসেছে। ইতোমধ্যে উন্নত জাতের দেশী আগাম টক বরই প্রায় ৩০হাজার টাকা বিক্রি করেছি। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বল সুন্দর বরই ৩শ টি গাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা এবং কাশ্মীরী বরই গাছ প্রায় ৫০টি গাছ থেকে প্রায় ৭০ হাজার টাকার ফলন পাবো বলে আশা করছি। এছাড়া বরই গাছের পাশাপাশি এ বাগানে গোল্ডেন-৮ জাতের পেয়ারা একশটি, বারি মাল্টা একশটি, সিডলেস লেবু ১শ টি ও উন্নত জাতের পেঁপে একশটি গাছ রয়েছে। আশা বাদি আগামী এপ্রিল-মে মাস থেকে গোল্ডেন-৮ জাতের পেয়ারার একশটি গাছ থেকে প্রায় ৪০হাজার টাকা, উন্নত জাতের বারি মাল্টা একশটি গাছ থেকে প্রায় এক লাখ টাকা এবং বিদেশী সিডলেস জাতের লেবু ১শ টি গাছ থেকে প্রায় ২০হাজার টাকার ফলন পাবো। এ বাগান থেকে সব খরচ বাদ দিয়ে আমার প্রায় তিন লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা প্রকাশ করে নূর ইসলাম।
বরই বাগান দেখতে আসা মুনিরুল ইসলাম স্বপন ও এনামুল হক জানান, শিক্ষিত তরুণ নূর ইসলাম-এর বরই বাগান এলাকাতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে তাই দেখতে এসেছি। আগামীতে এ ধরনের বরই বাগান করবেন বলে তারা জানান।
কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নীলিমা জাহান বলেন, এ এলাকার কৃষকেরা ধান ও আলুর চাষ করতে বেশী অগ্রহী। নানা ফল চাষ করে আধিক লাভবান হওয়া যায়, এলাকার কৃষকেরা তা বুঝতে চায়না। তবে তরুণ নূর ইসলামের বরই বাগান তৈরিতে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করেছে। তার বরইয়ের বাগানের পাশাপাশি তিনি মিশ্র বাগান হিসেবে পেয়ারা, মাল্টা, লেবু ও পেঁপের গাছও রোপণ করেন। আমরা তাকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করছি। এছাড়াও নিয়মিত তার বাগানের খোঁজখবর রাখছি। আশা করছি, তার বাগান নিয়মিত পরিচর্যা করেন, তাহলে সময়মতো ভালো ফলন পাবেন এবং দামও ভালো পাবেন। সেই সঙ্গে তিনি আর্থিক ভাবে অনেক লাভবান হবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।