জুমবাংলা ডেস্ক : ভারতের সঙ্গে চুক্তি নয়, সমঝোতা হয়েছে বলে জানিয়েছেন করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের করা মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সিটিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটি আয়োজিত এক কর্মশালায় কাদের এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, “ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অসাংবিধানিক চুক্তি হয়েছে।” বাস্ততে কোনো চুক্তিই হয়নি, হয়েছে সমঝোতা।’
সমঝোতা আর চুক্তি এক নয় উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘বিষয়টার গভীরে না গিয়ে তিনি নেতিবাচক সমালোচনা করলেন। এই নেতিবাচক রাজনীতির জন্য বিএনপি ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। ক্রমেই তারা জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে।’
মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ্যে করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘মেমোরেন্ডাম (সমঝোতা) কোনো চুক্তি নয়। এটা বোধহয় দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকার কারণে আপনারা বিষয়টি সম্পর্কে ভুলে গেছেন। মেমোরেন্ডাম অব আন্ডার স্ট্যার্ন্ডিং কোনো চুক্তি নয়। মেমোরেন্ডাম অব আন্ডার স্ট্যার্ন্ডিং আমিও করেছিলাম মালয়েশিয়ার সঙ্গে, কিন্তু পদ্মা সেতু মালয়েশিয়া করেনি। সেই মেমোরেন্ডাম অব আন্ডার স্ট্যার্ন্ডিং রক্ষা হয়নি। অবশেষে শেখ হাসিনার অসীম সাহসে আমাদের রিসোর্সে, আমাদের ফান্ডে আমাদের পদ্মা সেতু হচ্ছে। কাজেই মেমোরেন্ডাম অব আন্ডার স্ট্যার্ন্ডিংকে চুক্তি বলে অসাংবিধানিক চুক্তির যে কথা তিনি বলেছেন তা ভিত্তিহীন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাতটি সমঝোতা স্মারক হয়েছে। তিনটা প্রজেক্টের বিষয়ে কথা হয়েছে। কোথায়, কোন লাইনে অসাংবিধানিক কিছু আছে, অগণতান্ত্রিক কিছু আছে? এটা তথ্য-প্রমাণসহ মির্জা ফখরুল সাহেব আপনাকে দেখাতে হবে। অন্ধকারে ঢিল ছুড়বেন না। আগে বলতেন, দেশ বিক্রি হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা ভারতে গেলেই দেশ বিক্রি হয়ে যাওয়ার খবর আপনারা বলতেন। চুক্তি করলে আগে বলতেন গোলামীর চুক্তি হয়েছে। এখন বলছেন সংবিধান লঙ্ঘন হয়ে গেছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কন্যা, তিনি আর যাই করুন না কোনো দেশের স্বার্থ বিকিয়ে গিয়ে কারও সাথে তিনি বন্ধুত্ব করেন না। দেশের স্বার্থ সমুন্নোত করেই তিনি চুক্তি করেন। শেখ হাসিনা সেই প্রধানমন্ত্রী নন, যিনি দিল্লি গিয়ে কোনো কথা না বলে বাংলাদেশে ফিরে এসে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে বলেছিলেন, “আমি গঙ্গার পানি চুক্তির কথা ভুলে গেছি।” সেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নন। আজকে যা হচ্ছে আমি লাভবান হচ্ছি। আমার জাতীয় স্বার্থ, অর্থনতি উপকৃত হচ্ছে। ভারতের সেভেন সিস্টার্সে ট্রাকে করে এলপিজি যাবে এবং সেখানে বাংলাদেশের প্রচুর আয়ের উৎস আমরা পাচ্ছি। ভারত যদি আমাদের মোংলা বন্দর ব্যবহার করে, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে, বিনা-পয়সায় ব্যবহার করবে না। আমাদের যা পাওনা সেই আর্থিক সুবিধা আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়ে মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে হবে।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তর পরবর্তীকালে সবাই নতজানু ছিল ভারতের প্রতি। শত্রুতা করে কিছুই আনতে পারেনি। আমরা শত্রুতা চাইনি। শেখ হাসিনা বন্ধুত্বের পথে গিয়েছেন। গিয়েছেন বলেই ৬৮ বছরের সীমান্ত সমস্যা বাস্তবায়ন হয়েছে। এত বছরের এই চুক্তি বাস্তবায়ন একমাত্র শেখ হাসিনাই করেছেন। পৃথিবীর কোথাও সিটমহল নিয়ে এমন শান্তিপূর্ণ সমাধান হয় নাই। শেখ হাসিনাই একমাত্র ছিটমহল নিয়ে এক ঐতিহাসিক নজির স্থাপন করেছেন।’
তিস্তা চুক্তির বিষয়ে কাদের বলেন, ‘তিস্তা নিয়ে আলোচনার দ্বার বন্ধ ছিল। তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অগ্রগতি হয়েছে। যিনি গঙ্গা পানিবন্টন চুক্তি করেছেন তিনি তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে সফল হবেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তিস্তাসহ সব নদীর পানি বন্টন করব। কাজেই আপনারা শুধু সমালোচনার জন্য, বিরোধীতার জন্য বিরোধীতা করছেন বিষদগার করছেন। বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ, রাজপথে ব্যর্থ। সব জায়গায় ব্যর্থ হয়ে তারা অসংগগ্ন কথা বলছেন, অন্তঃসার শূন্য প্রলাপ বকছেন।’
রংপুর-৩ উপনির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রংপুর-৩ উপনির্বাচনে যে ভাবসাব তারা দেখিয়েছিল তাতে মনে হয়েছিল বিশাল এক বিজয় তারা পেয়ে যাবে। কিন্তু কী হলো? কত ভোট পেলেন; ধারণারও কম। সবখানে তো আওয়ামী লীগ অংশ নেয়নি, আপনারা নিয়েছেন। এত জনপ্রিয় আপনারা বলেন, কিন্তু ভোটার উপস্থিতি কেন কম হলো, মির্জা ফখরুল সাহেবরা করে আপনি বলবেন কি?’
গত শনিবার রাতে সাংবাদিক কাজী মোবারকসহ বেশকজন সাংবাদিকের সঙ্গে লালবাগ থানা পুলিশের অপ্রীতিকর আচরণের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যার (সাংবাদিক কাজী মোবারক) সঙ্গে পুলিশের ঝামেলা হয়েছে, তার বিয়ের অনুষ্ঠানে কাল আমি ছিলাম। এই খবরটি শুনে আমার খারাপ লেগেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি এ বিষয়টি জানেন। আমি এ বিষয়টি তাদের সঙ্গে মনিটর করব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন, তিনি ফিরে আসুক। আমি পুলিশের আইজির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। সেটার যাতে একটা সম্মানজনক সুরাহা হয়, তা আমি দেখব।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুরের সভাপতিত্বে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, ঢাকা মহানগর ক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাক শাহে আলম মুরাদ, ছাত্রলীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদকরা। সূত্র : আমাদের সময়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।