আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নতুন করে সহিংসতার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তান। দেশটি নিরাপত্তা ও মানবাধিকারসহ তেহরিক-ই-তালেবানের (টিটিপি) সহিংসতা বৃদ্ধির মতো নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ‘আর্লি ওয়ার্নিং প্রজেক্ট’ নামে একটি গবেষণা সংগঠনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়্যা জানিয়েছে, বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সহিংসতার ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা ‘আর্লি ওয়ার্নিং প্রজেক্ট’ তার প্রতিবেদনে বলছে- স্থানীয় সশস্ত্র সংগঠন টিটিপির সহিংসতা পাকিস্তানের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। আর দেশটি ইতোমধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে।
গত জুনে টিটিপি পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে সংঘাতবিরতির চুক্তি করলেও তারা সেখান থেকে সরে এসেছে। ফলে পাকিস্তানের জন্য ফের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। গত সপ্তাহে সংঘাত বিরতির চুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়ে সহিংসতা চালানোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছে আফগানিস্তান তালেবানের মিত্র টিটিপি।
টিটিপি এক বিবৃতি জানিয়েছে- ‘যেহেতু দেশের বিভিন্ন এলাকায় মুজাহিদিনদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চলছে…। তাই গোটা দেশের যেখানে পারেন আক্রমণ চালানো আপনার জন্য অপরিহার্য।’
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গতি পেয়েছে জঙ্গি সংগঠনটির সহিংস ক্যাম্পেইন। এরমধ্যে গত মাসে খাইবার পাখতুনখোয়ার লাকি মারওয়াত জেলায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হামলার ঘটনা ঘটে। ওই আক্রমণে কমপক্ষে ছয় পুলিশ সদস্য নিহত হন।
ডন জানিয়েছে, উত্তর বেলুচিস্তানে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত এলাকার কোয়েটায় সাম্প্রতিক হামলা টিটিপির যুদ্ধবিরতি পরবর্তী নতুন সহিংস ক্যাম্পেইন হতে যাচ্ছে, যদি না নিরাপত্তা সংস্থা ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই শক্তিকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করে। টিটিপি মূলত আফগান তালেবানের মিত্র পাকিস্তান তালেবান গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীকে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, আফগানিস্তানে টিটিপির চার থেকে পাঁচ হাজার যোদ্ধা রয়েছে। গোষ্ঠী অঞ্চল ছাড়িয়ে পাকিস্তানের শহরগুলোতেও তাদের তৎপরতা রয়েছে।
গত ১৬ নভেম্বর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা খাইবার পাখতুনখোওয়ার একটি পুলিশ টহলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ছয় পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। স্থানীয় কর্মকর্তারা আল জাজিরাকে জানান, পেশোয়ারের প্রাদেশিক রাজধানী থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে লাক্কি মারওয়াত শহরে পুলিশের গাড়িতে গুলি চালিয়ে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
অন্য একটি ঘটনায় বাজাউরের হিলাল খেলা এলাকায় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই সেনা নিহত হন। ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর রাইটস অ্যান্ড সিকিউরিটি (ইফরাস) এর মতে, আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এই ধরনের সংঘর্ষ নিত্যনৈমিত্তিক। জঙ্গিবাদ দমনে ফেডারেল ও প্রাদেশিক সরকারের ব্যর্থতা জনগণের জীবনকে অস্থির করে তুলেছে। আর টিটিপির এই সহিংসতায় শান্তিকামীরা বিক্ষোভ জানিয়ে প্রতিবাদ করেছে।
কিন্তু শেহবাজ শরীফ সরকার আবার সেই প্রতিবাদকারীদের গ্রেফতার করে জেলে ঢুকিয়েছে। জনগণের অভিযোগ- সরকার টিটিপি ক্যাডারদের দমনে ব্যর্থ হয়েছে। আর বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও সন্ত্রাসী ও সরকারের মধ্যে যোগসাজশের কথা জানিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ইফরাস।
আর্লি ওয়ার্নিং প্রজেক্ট হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামের ‘সাইমন-স্কজড সেন্টার ফর দ্য প্রিভেনশন অব জেনোসাইড’ এবং ডার্টমাউথ কলেজের ডিকি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর যৌথ উদ্যোগ।
গণহত্যার ঝুঁকিতে থাকা শীর্ষ ১০ তালিকায় রয়েছে এশিয়ার দুটি দেশ রয়েছে। এর মধ্যে একটি মিয়ানমার, যেখানে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।