নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শোক প্রকাশ করার অভিযোগে এক মাদরাসা শিক্ষক হারিয়েছেন চাকরি আর পদ হারিয়েছেন তিন ছাত্রলীগ নেতা।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসার ইবতেদায়ী গণিত বিষয়ের শিক্ষক (অস্থায়ী) আবু ছালেহ মো. যোবায়ের উক্ত মাদ্রাসার নীতিমালা ভঙ্গ করে তিনি যুদ্ধাপরাধী বিষয়ক ট্রাইব্যুনালের সাজাপ্রাপ্ত আসামী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুতে ফেইসবুকে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেন।
গতকাল (১৬ আগস্ট) মাদরাসাটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন আযহারীর সই করা একটি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আপনি (যোবায়ের) ইবতেদায়ী শিক্ষক (গণিত) হিসাবে ১২ মার্চ ২০২৩ সাল থেকে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসায় অস্থায়ীভাবে কর্মরত। মাদরাসার কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। আপনি নিয়োগপত্রের চার ও ছয় নম্বর শর্ত ভঙ্গ করেছেন এবং আপনি জামায়াতে ইসলামি নামের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছেন। তাই আপনাকে ইবতেদায়ী শিক্ষক (গণিত) পদ হতে ১৬ আগস্ট থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।’
এ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন আযহারী বলেন, ‘এটা আমাদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কীভাবে বাইরে প্রকাশ হয়ে গেল বুঝতে পারছি না। তারপরও বলি- উনি নিজেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চেয়ে অব্যাহতি পত্র দিয়েছেন। আমরা সেই অব্যাহতি পত্র গ্রহণ করেছি। তার ফেসবুক আইডি তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন।’
অপরদিকে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় লোহাগাড়া উপজেলার তিন ছাত্রলীগ নেতাকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বুধবার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এ. কে. এম আসিফুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এরশাদুর রহমান রিয়াদের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
অব্যাহতি পাওয়া তিন ছাত্রনেতা হলেন— উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি গাজী আমজাদ, মো. তাউসিফ এবং উপ-দফতর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুম।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া অসাম্প্রদায়িক চেতনা বহন করা একটি সংগঠন। এই সংগঠনে নীতি-আদর্শ ভুলে নৈতিক অবক্ষয় হওয়া কারও স্থান নেই। সম্প্রতি নীতি-আদর্শ ও সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলার তিনজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছ, পিতা-মাতা, ভাইকে হত্যা করেছে, মা-বোনকে নির্যাতনের জন্য পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছে, তাদের মৃত্যুতে ফেসবুকে শোকবার্তা দিয়ে কেউ ছাত্রলীগের কর্মী থাকতে পারে না।’
উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি গাজী আমজাদ, ‘আমরা মিটিং করে তিন ছাত্রলীগ নেতাকে উপজেলা ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। তাদের দায়ভার উপজেলা ছাত্রলীগ নেবে না। তাদেকে স্থায়ী বহিষ্কার করার জন্য দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ বরাবরে লিখিত জানানো হয়েছে।’
জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বোরহান উদ্দিন জুমবাংলাকে বলেন, ‘একজন রাজাকারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর মৃত্যুতে ফেসবুকে শোক প্রকাশ করায় লোহাগাড়া ছাত্রলীগের তিন নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করার জন্য আমরা সেটা কেন্দ্রে জানাব। এরকম আরও আছে। আমরা এদের সবার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।