জুমবাংলা ডেস্ক: সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে সামুদ্রিকের পাশাপাশি উৎপাদন করা হচ্ছে মিঠাপানির শুঁটকি। তিন-চার বছর ধরে এ শুঁটকি উৎপাদন হচ্ছে। এসব শুঁটকি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রফতানি হচ্ছে পাশের দেশ ভারতে। এছাড়া উত্তরবঙ্গ ও চট্টগ্রামে পাঠানো হচ্ছে এ অঞ্চলের শুঁটকি। ফলে একদিকে মাছ চাষীরা যেমন ভালো দাম পাচ্ছেন, অন্যদিকে শুঁটকি উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিস জানায়, চলতি বছর জেলার সাতটি উপজেলায় ৬৩ হাজার জলাশয়ে (পুকুর, ঘের, খাল ইত্যাদি) ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে মিঠা পানির মাছ চাষ করা হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার টন। ২০০ টাকা কেজি দরে যার বাজার মূল্য দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
কার্প জাতিয় মাছের শুঁটকি উৎপাদনে সাতক্ষীরার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জেলায় বছরে বিপুল পরিমাণ মিঠাপানির মাছ উৎপাদন হয়। যা থেকে শুঁটকি উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। তবে তথ্য সংরক্ষণ না থাকায় জেলায় কি পরিমাণ শুঁটকি উৎপাদন হয় তা মৎস্য অফিস জানাতে পারেনি।
শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আনুমানিক এক হাজার টন শুঁটকি প্রতিবছর সাতক্ষীরায় উৎপাদিত হয়। সাধারণত সিলভার কার্প, বাটা, তেলাপিয়া, পুঁটি ও মৃগেল মাছের শুঁটকি উৎপাদন করা হয় এ জেলায়।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার শুঁটকি উৎপাদনকারী সাধন চন্দ্র রায় জানান, তিনি গত পাঁচ বছর ধরে মাছের শুঁটকি তৈরি করছেন। তিনি সাধারণত সিলভার কার্প, মৃগেল, বাটা, তেলাপিয়া ও পুঁটি মাছ কিনে এনে বেতনা নদীর ধারে তার খামারে শুকিয়ে থাকেন।
তিনি জানান, প্রতি মাসে তিনি প্রায় আট হাজার কেজি শুঁটকি মাছ উৎপাদন করেন। আর এসব শুঁটকি তিনি চট্রগ্রাম ও উত্তরবঙ্গের সৈয়দপুরে সরবরাহ করেন। প্রতি মণ শুঁটকির পাইকারি দর সাধারণত ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা।
জেলার তালা উপজেলার ত্রিশমাইল এলাকায় শুঁটকি খামার মালিক রমেশ চন্দ্র খাঁ জানান, দুই বছরের বেশি সময় ধরে তিনি শুঁটকি মাছের আড়ৎ বানিয়েছেন। তিনি প্রতি মাসে চার হাজার কেজির মতো শুঁটকি বানিয়ে থাকেন। বিনেরপোতায় আরও একটি খামারে স্থানীয়ভাবে কম দামের ছোট তেলাপিয়া দিয়ে তিনি শুঁটকি তৈরি করেন। পরে এসব শুঁটকি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পোল্ট্রি ও মাছের ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেন।
তিনি আরও জানান, মিঠা পানির মাছের শুঁটকি উৎপাদনে সাতক্ষীরা খুবই সম্ভাবনাময় একটি জেলা। কারণ এ জেলায় প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির মিঠা পানির মাছ উৎপাদিত হয়। এসব মাছের শুঁটকি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।
সৈয়দপুরের বৃহৎ শুঁটকি আড়তের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জানান, প্রতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শুঁটকি মাছ তিনি সংগ্রহ করেন। এসব শুঁটকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি সরবরাহ করেন। আমাদের দেশের লোকজন সিলভার কার্প মাছের শুঁটকি খায়। তাই উত্তরাঞ্চলে এই মাছের শুঁটকির চাহিদা বেশি। তেলাপিয়া মাছের শুঁটকি কাঁকড়ার খাবার হিসেবে চাহিদা বেশি। আর পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পুঁটি মাছের শুঁটকির চাহিদা রয়েছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গে পুটি শুঁটকি রপ্তানি করেন বলে জানান।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিছুর রহমান জানান, মিঠাপানির শুঁটকি মাছ উৎপাদনে খুবই সম্ভাবনাময় জেলা সাতক্ষীরা। বছরে প্রায় দুই লাখ টন সাদা মাছ উৎপাদন হয় উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায়। স্থানীয় আমিষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।
তিনি আরও জানান, এ জেলায় শুঁটকি উৎপাদনেও রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বছরে একটি সময় ঘেরে ধান চাষ করার জন্য খুবই কম মুল্যে মাছ বিক্রি করেন চাষিরা। এসময় ওই মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি তৈরি করতে পারলে ব্যাপক লাভবান হতে পারেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। তবে জেলায় কি পরিমাণ শুঁটকি মাছ উৎপন্ন হয় তার পরিসংখ্যান জেলা মৎস্য অফিসে নেই বলে জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।