জুমবাংলা ডেস্ক : আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা জয় করা সম্ভব বলে মনে করেন দিনাজপুরের সীমান্তঘেঁষা বিরামপুর উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের করোনা যুদ্ধে জয়ী হওয়া ১০ বছরের শিশু আল-আমিন ও তার পিতা মো.আলম হোসেন (৩৫)। গত চারদিন আগে তারা করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছেন।
শুক্রবার দেশের জনপ্রিয় একটি দৈনিক পত্রিকার কাছে জানালেন তাঁদের করোনা রোগমুক্তির কথা। গাজীপুর থেকে শরীরে করোনা উপসর্গ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এসে করোনা শনাক্ত হন পিতা-পুত্রের। টানা ২৩ দিন ধরে করোনা বিরামপুর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে আইসোলেশনে থাকার পর একই দিনে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন দুজনে।
মো.আলম হোসেন জানান, করোনার কারণে মে মাসের ১৭ তারিখে আবারো নিজ গ্রামে সপরিবারে ফিরে আসেন আলম হোসেন। পরদিন নমুনা দেন তিনি। গত ২২ মে তার করোনা শনাক্ত হয়। পরে পরিবারের নমুনা পরীক্ষা করে ছেলে আল-আমিন (১০) এর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।
আলম হোসেন বলেন, আমার শরীরে করোনা শনাক্তের পর প্রথমে মৃত্যুভয়ে খুব আতঙ্কে ছিলাম। কিন্তু ডাক্তাররা আমাদের শারীরিক অবস্থার ও খাবারের বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর নেন এবং সাহস দেন। ডাক্তাররা আমাদেরকে সবসময় হাসি খুশিতে থাকতে ও সবার সাথে খোশগল্প করার পরামর্শ দেন। আর তখন আমরা বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পেয়েছিলাম। পরের সপ্তাহে আমার দশ বছরের ছেলে করোনায় আক্রান্ত হয়। তাকে আমার পাশের বেডে রাখা হয়। তাকে দেখে আমি অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলাম। ডাক্তারসহ অন্যান্য রোগীরা আমাকে সাহস দেন। পরে আমি ভেঙে পড়লে আমার ছেলেও ভেঙে পড়বে এবং তাকে হয়তো বাঁচানো যাবে না এই ভেবে নিজের মনকে শক্ত করি। তারপর থেকে আমি সবসময় ছেলেকে সাহস দেই, সান্তনা দেই।
আলম হোসেন আরো বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে গাজীপুর থেকে গ্রামের বাড়িতে আসার পর প্রতিবেশিরা আমাকে নিয়ে কটুক্তি ও সমালোচনা করলে প্রথম প্রথমঅনেক খারাপ লেগেছিল। তবে পরে বুঝেছি, এমন পরিস্থিতিতে গাজীপুর থেকে এভাবে এসে গ্রামের মানুষদেরকে করোনার ঝুঁকিতে ফেলা ঠিক হয় নাই। এজন্য আমি নিজেও অনুতপ্ত। তবে করোনা আক্রান্ত হবার পরে গ্রামে করোনা প্রতিরোধ কমিটি ও গ্রামের অনেক মানুষ আমার পরিবারকে সহযোগিতাও করেছেন।
শিশু আল-আমিন বলেন, আমার শরীরে করোনা হয়েছে জানতে পেরে আমি ভুব ভয় পাই। আমি বুঝি আর বাঁচব না, এই ভেবে খুব কান্নাকাটি করি। কিন্তু পরে যখন হাসপাতালে আব্বুর কাছে আমাকে রাখে তখন ডাক্তার চাচ্চুরা আব্বুকে ও আমাকে সাহস দেয়, তখন আর ভয় পাই নাই।
বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে আইসোলেশন ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার ফেরদৌস হিমেল বলেন, দেশের এ ক্রান্তিকালে ডাক্তারদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলেও করোনা আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে আমাদের ডাক্তার ও নার্সরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন। করোনা আক্রান্ত রোগীরা আমাদের সেবা পেয়ে সুস্থ হয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন এটি ডাক্তারদের জন্য সবচেয়ে বড় গর্ব।
বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো.সোলায়মান হোসেন মেহেদী বলেন, বিরামপুর উপজেলায় এ পর্যন্ত ৩৯ জন ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্টাফদের আন্তরিক সেবায় প্রাতিষ্ঠানিক আইশোলেশন থেকে ১৯ জন এবং নিজ বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে ২ জনসহ মোট ২১ জন ব্যক্তি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।