শুক্রবার মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের অভিজাত বাহিনী রেভল্যুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) কুদস ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার ঘটনায় ইরানিদের জন্য সমবেদনা জানিয়েছে রাশিয়া।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এ ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়াবে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ওই বিবৃতিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি বলেন, ‘ইরানের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন সুলাইমানি। ইরাকের বাগদাদ শহরে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় জেনারেল তিনি নিহতের ঘটনায় আমরা ইরানিদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। এই দুঃসাহসিক পদক্ষেপ ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়াবে।’
সুলাইমানির ওপর হামলার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের একটি ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন রাশিয়ার বিশিষ্ট সিনেটর কনস্টন্টিন কোসাচেভ। তার ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, ‘এই ভুল সিদ্ধান্তের জন্য পরিণামে ভুগতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে এবং ইরানের পারমাণব্কি চুক্তি রক্ষায় তার সব প্রচেষ্টাকে ভেস্তে দেবে।’
‘একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে খতম করে দেয়ার আত্মতুষ্টির চেয়ে এটি একটি বড় ভুল বলে আমি মনে করি। আর এ ভুলের কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের একটি অভ্যাস-কোনো সমস্যাকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে আসা। যেমন, সাদ্দামকে (বা গাদ্দাফি, লাদেন) সরাও, তাহলে সব সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু এ ধরনের যুক্তি শুধু বাইরেই দেখানো যায়, রাজনীতিতে চলে না। এর ফল দীর্ঘস্থায়ী হয় না’-যোগ করেন কোসাচেভ।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বজায় রাখতে এ ঘটনায় সব পক্ষকে শান্ত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে চীন। একই সঙ্গে, জাতিসংঘ চার্টারের উদ্দেশ্য ও নীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষায় মৌলিক আদর্শ মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে দেশটি।
এক ব্রিফিংয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেং সুয়াং বলেন, ‘আমরা সাম্প্রতিক ঘটনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। চীন বরাবরই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তির প্রয়োগের বিরোধিতা করে আসছে। আমরা উভয় পক্ষকে আহ্বান জানাব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে, যেন তারা সংযত হন এবং আর উত্তেজনা না বাড়ায়।’
সুলাইমানির ওপর হামলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার বীজ বপন করা হলো বলে মন্তব্য করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী ও কট্টর ইসলামী সংগঠন হামাস। একই সঙ্গে, সোলাইমানিকে ইরানের সামরিক বাহিনীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একজন বলে উল্লেখ করেছে দলটি।
শুক্রবার ভোরে গাড়িতে করে বাগদাদ বিমানবন্দর ত্যাগ করার সময় মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন জেনারেল সোলাইমানি। এ হামলায় আরও সাতজন নিহত হন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন।
এক বিবৃতিতে পেন্টাগন জানায়, জেনারেল সোলেইমানি ইরাকে মার্কিন কূটনীতিক এবং কর্মকর্তাদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। জেনারেল সোলেইমানি এবং তার কুদস বাহিনী শত শত মার্কিনি এবং জোটের সদস্যের হতাহতের পেছনে দায়ী।
ইরানের ভবিষ্যৎ হামলা প্রতিহত করতেই এই অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আমাদের লোকজনকে রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাবে।
ইরানের গণমাধ্যমেও জেনারেল সোলেইমানির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ইরান-সমর্থিত ইরাকি মিলিশিয়া পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্স বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, হামলায় জেনারেল সোলেইমানি এবং ইরাকি মিলিশিয়া নেতা আবু মাহদি আল মুহানদিস নিহত হয়েছেন।
জেনারেল সোলেইমানিকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে নতুন করে আরও উত্তেজনা বাড়বে বলে আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। জেনারেল সোলাইমানি নিজ দেশ ইরানে হাজি কাসেম নামে পরিচিত। তিনি রেভল্যুশনারি গার্ডের একজন কমান্ডার হলেও অলিখিতভাবে তার পদমর্যাদা দেশটির যেকোনো সামরিক কর্মকর্তার ওপরে ছিল।
রেভল্যুশনারি গার্ডের ‘কুদস ফোর্স’ পরিচালিত হচ্ছিল সোলাইমানির নিয়ন্ত্রণে। ২১-২২ বছর ধরে বাহিনীটি গড়ে তোলেন তিনি।
‘কুদস ফোর্স’ অপ্রচলিত যুদ্ধের জন্য তৈরি একটা বৃহৎ ‘স্পেশাল অপারেশান ইউনিট’। এই ফোর্সের প্রধান কর্মক্ষেত্র মূলত ইরানের বাইরে। কুদস ফোর্স ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন সোলাইমানি।
সোলাইমানি তার বাহিনীর পুরো কাজকর্মের জন্য দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে জবাবদিহি করতেন।
হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর সর্বোচ্চ প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি বলেছেন, যেসব অপরাধী তাদের নোংরা হাত দিয়ে গতরাতে জেনারেল সোলায়মানির রক্ত ঝরিয়েছে তাদের জন্য ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।