জুমবাংলা ডেস্ক : স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক ভালোবাসা ও মায়া-মমতার উপর প্রতিষ্ঠিত দাম্পত্য জীবন। মহান আল্লাহ তাআলা ভালোবাসা ও সুখ-শান্তিময় এ বন্ধনের কথা তুলে ধরেছেন কুরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, তিনি মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ, পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছ। আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।’ (সুরা রূম : আয়াত ২০-২১)
সংসার জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সুসম্পর্ক ও ভালবাসার মর্যাদা ব্যাপক। কুরআন ও হাদিসের বর্ণনাসহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জীবনে এর অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। দাম্পত্য জীবনে সাধারণ আচার-আচরণে রয়েছে সাওয়াব, কল্যাণ ও ভালোবাসার হাতছানি। যা হতে পারে দুনিয়ার সব মানুষের জন্য গ্রহণীয় ও অনুকরণীয় আদর্শ। তাহলো-
পাস্পরিক ভালোবাসা
– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ তাঁকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। আর প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম সুন্নাত বা আদর্শ হচ্ছে স্ত্রীকে ভালোবাসা। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার কাছে তোমাদের পার্থিব সামগ্রীর মধ্য থেকে প্রিয় করে দেয়া হয়েছে- ‘স্ত্রী ও সুগন্ধিকে। আর নামাজকে আমার জন্য বানানো হয়েছে চক্ষু শীতলকারী।’ (ত্বাবারানি)
- স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের ভালোবাসা যদি আল্লাহর জন্য হয় আবার ঘৃণা করাও যদি তার জন্য হয় তবে তারা আরশের ছায়ায় স্থান পাওয়া ৭ শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত হবে। সুতরাং দাম্পত্য জীবনে দ্বীনদারী, ইবাদত-বন্দেগি, সততা, নৈতিকতা, সচ্চরিত্র, সদাচার ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভালোবাসা এবং ঘৃণা হবে আল্লাহর জন্য।
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর যদি একে অপরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে এবং নিজের জন্য যা পছন্দ করে তার সঙ্গীর জন্যও তাই পছন্দ করে ; তবে তারা উভয়ে ঈমানের প্রকৃত সাধ অস্বাদন পাবে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ অনুভব করবে-- অন্য সবার তুলনায় যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অধিক প্রিয়।
- যে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তাঁর বান্দাকে ভালোবাসে। আর
- যাকে আল্লাহ কুফর থেকে মুক্তি দিয়েছেন, তারপর সে কুফরের দিকে ফিরে যাওয়াকে এমন অপছন্দ করে যেমন আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে।’ (মুসলিম)
পারস্পরিক কথাবার্তা
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরের সঙ্গে সুন্দর ভাষায় কথা বলে তবে হাদিসের পরিভাষায় তাদের জন্য রয়েছে সাদকা করার সাওয়াব। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একটি ভালো কথা হল সাদকা।’ (বুখারি)
হাসি মুখে কথা বলা
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরের সঙ্গে মুচকি হেসে কথা বলে তবে হাদিসের পরিভাষায় তাদের জন্য তাতেও রয়েছে সাদকা করার সাওয়াব। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমার ভাইয়ের (সাক্ষাতে) মুচকি হাসাও একটি সাদকা।’ (তিরমিজি)
পরস্পরিক আনন্দ
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরকে খুশি করা আল্লাহর কাছে নেক আমল হিসেবে বিবেচিত। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় কাজ হলো- কোনো মুসলিমের হৃদয়ে আনন্দ প্রবেশ করানো।’
পরস্পরের উপকার
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরের কোনো উপকার করে বা ভালো কাজ করে তবে এর বিনিময়ে সাদকার সাওয়াব লাভ করবে। আর একজন অপর জনের উপকার করায় আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ ও প্রিয় মানুষ হওয়ার মর্যাদা লাভ করবে তারা। একাধিক হাদিসে এসেছে-
– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজ সাদকা। আর তোমার তোমাদের ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাটাও একটি ভালো কাজ।’ (তিরমিজি)
– ‘যে ব্যক্তি মানুষের বেশি উপকার করে সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ।’ (ইবনে হিব্বান)
– ‘আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি সর্বাধিক প্রিয় যে সর্বাধিক মানুষের উপকার করে।’
পারিবারিক খরচ
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক খরচ বহন ও একে অপরের মুখে খাবার তুলে দেয়ায় রয়েছে শ্রেষ্ঠ সাদকার সাওয়াব পাওয়ার ঘোষণা। হাদিসে এসেছে-
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শ্রেষ্ঠ সাদকা হল, একজন মানুষ তার স্ত্রীর মুখে এক লোকমা খাবার তুলে দেবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
শুধু তা-ই নয়, অন্য হাদিসে ‘স্ত্রী পরিবারের জন্য খরচ করাকেও সাদকার সওয়াব বলা হয়েছে’ যদি সাদকার নিয়তে খরচ করা হয়।’
বিধিনিষেধ মেনে চলা
দাম্পত্য জীবনে আল্লাহর বিধিনিষেধ মেনে চলায় রয়েছে বিশেষ সাওয়াব ও উপকারিতা। স্বামী স্ত্রী যদি একে অপরকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করে, তাতেই তারা সদকার সাওয়াব পাবে। হাদিসে এসেছে-
‘সৎকাজের আদেশ দেয়া, অসৎ কাজ হতে বিরত রাখা সাদকা।’ (মুসলিম)
মনে রাখতে হবে
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সুসম্পর্ক ও স্বাভাবিক কথাবার্তায় শুধু সাওয়াবই নয় বরং পারিবারিকভাবে তা হতে পারে পরস্পরের দাওয়াতি কাজের অংশ। পরিবারে উভয়েই হতে পারে স্বাতন্ত্র দাঈ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জীবনেও এর শুভ সূচনা হয়েছিল। তিনি সর্ব প্রথম নিজ স্ত্রী হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছেই নবুয়তের দাওয়াত দিয়েছিলেন। তার কথা ও কাজের সুন্দর প্রকাশ ও বাস্তবায়ন হয়েছিল আম্মাজান হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার মাঝে। সর্বকালে সর্বযুগে বিশ্বনবি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পারিবারিক জীবন অনুপ্রেরণা ও কল্যাণ লাভের একমাত্র উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে মাঝে সব স্বাভাবিক কথা ও কাজকে সাওয়াবে পরিপূর্ণ করে দিন। হাদিসের আলোকে শান্তিপূর্ণ সুখময় জীবন হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।