রাত দুটো। ঢাকার মিরপুরের এক ফ্ল্যাটে রিফাত সাহা জেগে আছেন। কোম্পানির জরুরি প্রজেক্ট ডেডলাইনের চাপ, টানা দশ ঘণ্টা স্ক্রিনের সামনে বসে থাকা। হঠাৎ তার কব্জিতে বাঁধা স্মার্টওয়াচটি কাঁপতে শুরু করলো – হৃদস্পন্দনের হার বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে, শ্বাস-প্রশ্বাসও অনিয়মিত। ওয়াচটি শুধু সতর্কই করলো না, সঙ্গে সঙ্গে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম শুরু করতে গাইড করলো। পাঁচ মিনিটের মধ্যে রিফাতের অবস্থা স্বাভাবিক হলো। স্মার্টওয়াচ শুধু সময় দেখানোর যন্ত্র নয়, এই গল্পটি তারই প্রমাণ। অনেকের কাছেই এটি ফ্যাশন স্টেটমেন্ট বা নোটিফিকেশন চেক করার ডিভাইস। কিন্তু এই ডিজিটাল সঙ্গীর অজানা সুবিধাগুলো আপনার জীবন কতটা গভীরভাবে বদলে দিতে পারে, তা হয়তো আপনি কল্পনাও করেননি। শুধু ফিটনেস ট্র্যাকিং নয়, এটি হয়ে উঠতে পারে আপনার স্বাস্থ্যের প্রহরী, নিরাপত্তার রক্ষাকবচ, এমনকি উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর গোপন হাতিয়ার।
স্মার্টওয়াচের অজানা সুবিধা: শুধু পা গুনানো নয়, জীবন রক্ষাকারী প্রযুক্তি
স্মার্টওয়াচ নিয়ে যখন ভাবি, প্রথমেই চোখে ভাসে ক্যালোরি কাউন্ট, স্টেপ ট্র্যাকিং কিংবা ঘুমের মান বিশ্লেষণ। কিন্তু এই ডিভাইসের ক্ষমতা এর চেয়ে বহুগুণ গভীর এবং জীবন-পরিবর্তনকারী। আসুন জানা-অজানা সেই সুবিধাগুলো একে একে জেনে নেই:
হৃদয়কে বুঝে নেওয়া: শুধু হার্ট রেট নয়, গভীর বিশ্লেষণ:
অধিকাংশ স্মার্টওয়াচই ক্রমাগত হৃদস্পন্দন মাপে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আধুনিক ডিভাইসগুলো (যেমন Apple Watch, Samsung Galaxy Watch, Fitbit Sense) হৃদস্পন্দনের অনিয়ম (Irregular Rhythm Notifications) শনাক্ত করতে পারে। এটি অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন (AFib)-এর মতো গুরুতর অবস্থার প্রাথমিক সতর্ক সংকেত দিতে সক্ষম, যা স্ট্রোকের বড় কারণ। আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) কিছু মডেলকে এই ফিচারের জন্য ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে (সূত্র: FDA.gov)।
আরও আছে হৃদস্পন্দনের তারতম্য (Heart Rate Variability – HRV) মনিটরিং। এইচআরভি আপনার শরীরের চাপের (স্ট্রেস) মাত্রা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। কম এইচআরভি উচ্চ স্ট্রেস বা ক্লান্তির ইঙ্গিত দিতে পারে। ওয়াচটি এই ডেটা ট্র্যাক করে আপনাকে বিশ্রাম নেওয়া বা চাপ কমানোর কৌশল অবলম্বনের জন্য সতর্ক করতে পারে।- বাস্তব উদাহরণ: কলকাতার শিক্ষক মৌসুমী দত্তের ওয়াচটি বারবার হৃদস্পন্দনের অনিয়মের সতর্কতা দিচ্ছিল। অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেল তার প্রি-অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন ধরা পড়েছে। সময়মতো চিকিৎসা শুরু করে তিনি বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে পেরেছেন।
নিঃশ্বাসের গল্প: স্ট্রেস থেকে ভালো ঘুম পর্যন্ত:
স্মার্টওয়াচ শুধু আপনি কতক্ষণ ঘুমালেন তা বলে না, বলে ঘুমের গুণগত মান। এটি ট্র্যাক করে ডিপ স্লিপ, লাইট স্লিপ, REM স্লিপের সময়কাল। খারাপ ঘুমের ধরণ চিনতে পারলে তা উন্নত করার পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
আরেকটি শক্তিশালী অজানা সুবিধা হল স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট। অনেক আধুনিক ওয়াচে ইলেক্ট্রোডার্মাল অ্যাক্টিভিটি (EDA) সেন্সর থাকে, যা আপনার ত্বকের মাইক্রোস্কোপিক ঘাম (তাপমাত্রা পরিবর্তন নয়) মাপে – যা স্ট্রেস বা মানসিক উত্তেজনার সরাসরি সূচক। এই ডেটার ভিত্তিতে ওয়াচটি আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন শুরু করতে উৎসাহিত করতে পারে।- কীভাবে কাজে লাগাবেন: চাকরির ইন্টারভিউ বা গুরুত্বপূর্ণ প্রেজেন্টেশনের আগে অস্থির লাগছে? ওয়াচের স্ট্রেস মনিটর দেখলেন লেভেল লাল হয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে ওয়াচের গাইডেড ব্রিদিং এক্সারসাইজ শুরু করুন। মাত্র ২-৩ মিনিটের মধ্যে দেখবেন হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক হচ্ছে, মনে শান্তি ফিরে আসছে।
অক্সিজেনের মাত্রা জানা: নীরব হুমকিকে চিনতে পারা:
ব্লাড অক্সিজেন স্যাচুরেশন (SpO2) মনিটরিং এখন অনেক স্মার্টওয়াচের স্ট্যান্ডার্ড ফিচার। COVID-19 মহামারীর সময় এর গুরুত্ব আমরা ব্যাপকভাবে বুঝেছি, যখন নীরবে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া একটি বড় ঝুঁকি ছিল। নিয়মিত SpO2 মনিটরিং (বিশেষ করে রাতে) স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা চিহ্নিত করতে সাহায্য করতে পারে। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে পলিসমনোগ্রাফি টেস্ট সহজলভ্য বা সস্তা নয়, এটি একটি মূল্যবান স্ক্রিনিং টুল হতে পারে।- বিশেষজ্ঞের মতামত: ডা. তাহমিনা আক্তার, কার্ডিওলজিস্ট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বলেন, “স্মার্টওয়াচের SpO2 মনিটরিং ডায়াগনস্টিক টুল নয়, কিন্তু ট্রেন্ড বুঝতে খুবই কাজের। রাতে বারবার অক্সিজেন লেভেল ড্রপ দেখলে বা ক্রমাগত নিম্ন মাত্রা দেখলে তা স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ফুসফুস সংক্রান্ত অন্য কোনও সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। এমন লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
নিরাপত্তার রক্ষাকবচ: বিপদে একাকী নন আপনি:
এটি সত্যিই একটি জীবন বদলে দেওয়ার মতো সুবিধা, বিশেষ করে নারী, বয়স্ক বা একা ভ্রমণকারী ব্যক্তিদের জন্য। বেশিরভাগ আধুনিক স্মার্টওয়াচে এসওএস জরুরি কল বা ফল ডিটেকশন ফিচার থাকে।- কীভাবে কাজ করে? হঠাৎ করে জোরে আঘাত পেলে (যেমন পড়ে যাওয়া) বা ওয়াচটি সেন্স করে আপনি দীর্ঘক্ষণ নড়াচড়া করছেন না (যেমন অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়া), তখন এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার পূর্বনির্ধারিত জরুরি যোগাযোগের নম্বরে (পরিবারের সদস্য, বন্ধু) বা স্থানীয় জরুরি সেবার নম্বরে (যেখানে সাপোর্টেড) অ্যালার্ট পাঠাতে পারে। সাথে আপনার লাইভ লোকেশন শেয়ার করবে। Apple Watch-এর ক্র্যাশ ডিটেকশন বা Samsung Watch-এর Fall Detection-এর মতো ফিচারগুলো জীবন রক্ষায় ভূমিকা রাখার নজির রয়েছে।
- বাস্তব প্রয়োগ: একজন একাকী বসবাসকারী বয়স্ক ব্যক্তি বাথরুমে পড়ে গেলেন। তার হাতের ওয়াচটি পড়ে যাওয়া শনাক্ত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ছেলের ফোনে জরুরি বার্তা ও লোকেশন পাঠালো। দ্রুত সাহায্য পৌঁছানোর ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গেল।
- দৈনন্দিন উৎপাদনশীলতা ও সুবিধা: সময় ও শক্তির সেরা ব্যবহার:
স্মার্টওয়াচের সুবিধা শুধু স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাতেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি আপনার দৈনন্দিন জীবনের গুণগত মানও বাড়ায়:- স্মার্ট নোটিফিকেশন: ফোন বারবার খুলে সময় নষ্ট করার দরকার নেই। গুরুত্বপূর্ণ কল, মেসেজ, ইমেইল বা ক্যালেন্ডার রিমাইন্ডার দেখুন কব্জিতেই। অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন ব্লক করে মনোযোগ অটুট রাখুন।
- ওয়ালেট ছাড়াই বেরোনো: NFC টেকনোলজির মাধ্যমে (Apple Pay, Google Pay, Samsung Pay) স্মার্টওয়াচ দিয়ে দোকানে, পরিবহনে সহজেই পেমেন্ট করুন। ঢাকা বা চট্টগ্রামের ব্যস্ত রাস্তায় ওয়ালেট বের করার ঝামেলা এড়ান।
- ঘরের নিয়ন্ত্রণ: যদি আপনার স্মার্ট হোম ডিভাইস (স্মার্ট লাইট, AC, TV) থাকে, স্মার্টওয়াচ থেকেই সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করুন। বিছানা থেকে লাইট জ্বালানো-নেভানো এখন হাতের কাছেই।
- ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট: Google Assistant বা Siri-কে কব্জি থেকেই জিজ্ঞাসা করুন আবহাওয়া, রেসিপি, রাস্তার দিকনির্দেশনা বা সাধারণ জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর। হাত ব্যস্ত থাকলেও সাহায্য পাবেন।
- মিউজিক কন্ট্রোল: ওয়ার্কআউটের সময় বা রান্না করার সময় ফোন হাত না লাগিয়েই হেডফোনে মিউজিক চেঞ্জ করুন, ভলিউম ঠিক করুন।
সঠিক স্মার্টওয়াচ বাছাই: আপনার জীবনযাপনের সাথে মিলিয়ে নিন
সমস্ত স্মার্টওয়াচ একই রকম নয়। আপনার প্রয়োজন এবং বাজেট অনুযায়ী সঠিকটি বেছে নেওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। বিবেচ্য বিষয়গুলো:
- স্বাস্থ্য মনিটরিংয়ের গভীরতা: আপনি যদি ডিটেইলড হেলথ ডেটা (ECG, SpO2, স্ট্রেস, স্লিপ স্টেজ, বডি কম্পোজিশন) চান, তাহলে Apple Watch Series 8/9/Ultra, Samsung Galaxy Watch 5/6 (বিশেষ করে ক্লাসিক বা প্রো মডেল), Fitbit Sense 2, Garmin Venu 3 বা Forerunner সিরিজের মতো এডভান্সড হেলথ ফিচারসমৃদ্ধ মডেল দেখুন। যদি বেসিক ফিটনেস ট্র্যাকিং (স্টেপ, ক্যালোরি, হার্ট রেট) যথেষ্ট হয়, তাহলে Xiaomi Mi Band, Amazfit Bip সিরিজ বা Realme Watch-এর মতো বাজেট অপশনও ভালো।
- ব্যাটারি লাইফ: Apple Watch সাধারণত প্রতিদিন চার্জ দিতে হয়। Samsung Galaxy Watch 4/5/6-ও প্রায় একই। Fitbit, Garmin (বিশেষ করে ফরারানার, ফেনিক্স সিরিজ), Amazfit বা Huawei Watch GT সিরিজের অনেক মডেল ৭-১৪ দিন পর্যন্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ দেয়, যা ভ্রমণকারী বা নিয়মিত চার্জ করতে ভুলে যাওয়া ব্যবহারকারীদের জন্য আদর্শ।
- অপারেটিং সিস্টেম ও স্মার্টফোন কম্প্যাটিবিলিটি: Apple Watch শুধু আইফোনের সাথে কাজ করে। Android ব্যবহারকারীদের জন্য Wear OS (Google) চালিত Samsung, Fossil, Mobvoi (TicWatch), Pixel Watch বা Fitbit (Google-এর মালিকানাধীন) মডেলগুলো ভালো। কিছু ব্র্যান্ডের নিজস্ব OS আছে (Garmin, Fitbit কিছু মডেল, Huawei, Amazfit), যা সাধারণত Android ও iOS-এর সাথে কাজ করে।
- বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইন: আপনি কি স্পোর্টি, ক্লাসিক, প্রিমিয়াম লুক চান? স্টেইনলেস স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, টাইটেনিয়াম বা পলিমার বডি? জলরোধী ক্ষমতা কত? (সাঁতারের জন্য 5ATM বা তার বেশি প্রয়োজন)। স্ক্রিন টাইপ (AMOLED ভালো, কিন্তু বেশি ব্যাটারি খায়; LCD বা MIP স্ক্রিনে ব্যাটারি সেভ হয়)।
- বিশেষ ফিচার: জিপিএস (রানিং/সাইক্লিংয়ে জরুরি), এলটিই/সেলুলার কানেক্টিভিটি (ফোন ছাড়াই কল/ডেটা), স্টোরেজ (মিউজিক অফলাইন শোনার জন্য), স্পিকার ও মাইক্রোফোনের কোয়ালিটি (ওয়াচ থেকে সরাসরি কল করার জন্য)।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যবহার: বাস্তবতা ও সম্ভাবনা
বাংলাদেশে স্মার্টওয়াচের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে, তবে কিছু চ্যালেঞ্জও আছে:
- দাম: হাই-এন্ড মডেলগুলোর দাম অনেকের নাগালের বাইরে। তবে Xiaomi, Amazfit, Realme, Huawei-র বাজেট ও মিড-রেঞ্জ মডেলগুলো ভালো বাজার ধরেছে।
- ডাক্তারি উপদেশের সাথে সংযুক্তি: ওয়াচের ডেটা সরাসরি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত করার সুযোগ এখনও সীমিত। ব্যবহারকারীদেরকে নিজেদের ডেটা মনিটর করে প্রয়োজনে ডাক্তারকে দেখাতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল হেলথ স্ট্র্যাটেজি (সূত্র: dghs.gov.bd) ভবিষ্যতে এধরনের ডেটা ইন্টিগ্রেশনের পথ সুগম করতে পারে।
- ডেটার যথার্থতা: সব স্মার্টওয়াচ মেডিকেল গ্রেড ডিভাইস নয়। রিডিং ১০০% নির্ভুল নাও হতে পারে। অস্বাভাবিক রিডিং বা উপসর্গ দেখা দিলে সর্বদা চিকিৎসককে দেখানো উচিত। ওয়াচকে ডায়াগনস্টিক টুল না ভেবে প্রিভেন্টিভ অ্যালার্ট সিস্টেম ভাবা ভালো।
- চুরির ঝুঁকি: দামী গ্যাজেট হিসেবে এটি চুরির শিকার হতে পারে। সচেতন থাকুন, বিশেষ করে ব্যস্ত পাবলিক প্লেসে।
তবুও, সম্ভাবনা অনেক বেশি:
- প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা: নিয়মিত হৃদস্পন্দন, স্লিপ প্যাটার্ন, অ্যাক্টিভিটি লেভেল মনিটর করে দীর্ঘমেয়াদি রোগ (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ) প্রতিরোধে সচেতন হওয়া যায়।
- বয়স্কদের নিরাপত্তা: ফল ডিটেকশন এবং এসওএস অ্যালার্ট বয়স্ক মা-বাবা বা দাদা-দাদির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দূরবর্তী স্থানে থাকা সন্তানদের জন্য চিন্তা অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে।
- ফিটনেস সংস্কৃতি: যুব সমাজে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে স্মার্টওয়াচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, ফিটনেস গোল সেট করা ও অর্জন করতে অনুপ্রাণিত করছে।
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে: স্মার্টওয়াচের পরবর্তী অধ্যায়
স্মার্টওয়াচ প্রযুক্তি দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ভবিষ্যতে আমরা আরও উন্নত সুবিধা দেখতে পাব:
- নন-ইনভেসিভ ব্লাড গ্লুকোজ মনিটরিং: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রক্ত না নিয়ে সুগার লেভেল ট্র্যাক করার প্রযুক্তি (সবাইকে নাড়া দেওয়ার মতো একটি বিপ্লব) নিয়ে Apple, Samsung সহ অনেক কোম্পানি কাজ করছে। সফল হলে এটি ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্টে আমূল পরিবর্তন আনবে।
- উন্নত ব্লাড প্রেসার মনিটরিং: বর্তমান অপটিক্যাল সেন্সর ভিত্তিক সিস্টেমের চেয়ে আরও নির্ভুলভাবে রক্তচাপ মাপার প্রযুক্তি আসছে।
- বেশি স্বাস্থ্য পরামর্শ ও প্রেডিকশন: আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ব্যবহার করে আপনার ডেটা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যত স্বাস্থ্য ঝুঁকির পূর্বাভাস দেওয়া এবং ব্যক্তিগতকৃত সুপারিশ করা।
- মেন্টাল হেলথ ট্র্যাকিং: স্ট্রেস, মুড ডিসঅর্ডার বা উদ্বেগকে আরও ভালোভাবে শনাক্ত ও ম্যানেজ করার সরঞ্জাম।
- সিম্বায়োটিক ডিভাইস: স্মার্টফোনের পরিপূরক না হয়ে ওয়াচটি স্বাধীন, শক্তিশালী ডিভাইস হিসেবে কাজ করবে, আরও লং লাস্টিং ব্যাটারি নিয়ে।
এই ডিজিটাল কব্জিবন্ধনটি কেবল সময়ই বলে না, সময়কে অর্থপূর্ণ করে তোলে; শুধু নোটিফিকেশন দেখায় না, বিপদের আভাস দিয়ে জীবন বাঁচায়; শুধু ক্যালোরি গোনে না, স্বাস্থ্যকর জীবনের পথ দেখায়। স্মার্টওয়াচের এই অজানা সুবিধাগুলোকে কাজে লাগিয়ে আপনি শুধু তথ্য পাবেন না, পাবেন নিজের শরীর ও মনের গভীরতর বোঝাপড়া, পাবেন নিরাপত্তার আত্মবিশ্বাস, পাবেন দৈনন্দিন জীবনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। এটি সত্যিই একটি শক্তিশালী টুল যা আপনার জীবনযাত্রার মানকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে, আপনার স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিতে এবং আপনাকে আরও সচেতন, সুরক্ষিত ও উৎপাদনশীল ব্যক্তিতে পরিণত করতে সাহায্য করতে পারে। আপনার কব্জিতে বাঁধা এই ছোট্ট যন্ত্রটির অজানা ক্ষমতাগুলোকে আজই আবিষ্কার করুন এবং নিজের জীবনকে ইতিবাচকভাবে বদলে ফেলার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। আপনার জীবনযাত্রাকে এক ধাপ এগিয়ে নিতে এখনই আপনার প্রয়োজন ও বাজেট অনুযায়ী সঠিক স্মার্টওয়াচটি বেছে নিন এবং এর পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগান!
জেনে রাখুন
স্মার্টওয়াচ কি সত্যিই স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে?
হ্যাঁ, তবে পরোক্ষভাবে। এটি আপনাকে আপনার শারীরিক কার্যকলাপ (হাঁটা, দৌড়ানো), হৃদস্পন্দন, ঘুমের ধরণ এবং স্ট্রেস লেভেল সম্পর্কে মূল্যবান ডেটা ও অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। এই সচেতনতা আপনাকে স্বাস্থ্যকর পছন্দ করতে (আরও হাঁটা, ভালো ঘুমানো, স্ট্রেস ম্যানেজ করা) উদ্বুদ্ধ করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। তবে এটি চিকিৎসকের পরামর্শ বা চিকিৎসার বিকল্প নয়।সব স্মার্টওয়াচ কি হৃদরোগ শনাক্ত করতে পারে?
না। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু মডেল (যেমন Apple Watch Series 4 এবং পরবর্তী মডেল, Samsung Galaxy Watch Active2 এবং পরবর্তী কিছু মডেল, Fitbit Sense/Charge 5 ইত্যাদি) অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন (AFib) শনাক্ত করার জন্য FDA ক্লিয়ারেন্স বা সমতুল্য সার্টিফিকেশন পেয়েছে। ECG ফিচার থাকলেও সব ওয়াচ AFib ডিটেকশন করে না। কেনার আগে মডেলটির সক্ষমতা যাচাই করে নিন।স্মার্টওয়াচের ডেটা কতটা নির্ভরযোগ্য?
স্মার্টওয়াচের ডেটা সাধারণত ভালো নির্দেশিকা দেয়, বিশেষ করে ট্রেন্ড বুঝতে (যেমন গত সপ্তাহে আপনার গড় হৃদস্পন্দন কেমন ছিল, ঘুমের সময়কাল কমছে না বাড়ছে)। তবে, এটি মেডিকেল-গ্রেড ডিভাইসের মতো ১০০% নির্ভুল নাও হতে পারে। হৃদস্পন্দন, SpO2 বা ECG রিডিংয়ের মধ্যে সামান্য তারতম্য হতে পারে। অস্বাভাবিক রিডিং বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো উদ্বেগ থাকলে সর্বদা চিকিৎসককে দেখান এবং ওয়াচের রিডিংকে একমাত্র সূত্র হিসেবে বিবেচনা করবেন না।স্মার্টওয়াচের ব্যাটারি কতদিন চলে?
ব্যাটারি লাইফ মডেলভেদে ব্যাপকভাবে ভিন্ন। Apple Watch এবং Wear OS ওয়াচ (Samsung, Google Pixel) সাধারণত সর্বোচ্চ ১-২ দিন চলে। Fitbit, Garmin, Huawei, Amazfit-এর অনেক মডেল ৭ দিন থেকে ২ সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় চার্জ ছাড়াই চলতে পারে। ব্যাটারি লাইফ আপনার ব্যবহারের উপরও নির্ভর করে (জিপিএস, অ্যালওয়েজ-অন ডিসপ্লে, লট অফ নোটিফিকেশন ইত্যাদি ফিচার চালু থাকলে ব্যাটারি দ্রুত ফুরায়)।কোন স্মার্টওয়াচ বাংলাদেশে সবচেয়ে ভালো বিক্রি হয়?
বাংলাদেশে বাজেট সেগমেন্টে Xiaomi (Mi Band সিরিজ), Realme, এবং Amazfit (Bip/U সিরিজ) খুব জনপ্রিয়। মিড-রেঞ্জে Samsung (Galaxy Watch Active/ FE সিরিজ), Huawei (Watch GT সিরিজ), এবং Fitbit (Versa, Charge সিরিজ) ভালো বিক্রি হয়। হাই-এন্ডে Apple Watch এবং Samsung Galaxy Watch (ক্লাসিক/প্রো মডেল) প্রধান।- স্মার্টওয়াচ ব্যবহারে কি কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে?
সাধারণত, স্মার্টওয়াচ ব্যবহারে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা ভালো:- ত্বকের জ্বালাপোড়া: ঘাম, সাবান বা টাইট করে বাঁধার কারণে কিছু মানুষের ত্বকে র্যাশ বা জ্বালাপোড়া হতে পারে। ওয়াচটি পরিষ্কার রাখুন এবং একটু আলগা করে পরুন।
- বিকিরণ: স্মার্টওয়াচ নিম্ন মাত্রার রেডিওফ্রিকোয়েন্সি (RF) বিকিরণ নির্গত করে। তবে এই মাত্রা নিরাপদ সীমার মধ্যে থাকে বলে ধরা হয় (FCC/ICNIRP গাইডলাইন মেনে)। তবুও যারা অতিমাত্রায় সচেতন, তারা রাতে ঘুমানোর সময় ওয়াচ খুলে রাখতে পারেন।
- নির্ভরশীলতা: ওয়াচের ডেটার উপর অত্যধিক নির্ভরশীল না হয়ে নিজের শরীরের সংকেত (সুস্থ বোধ করছি কি না) বুঝতে শেখা গুরুত্বপূর্ণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।