জুমবাংলা ডেস্ক : প্রকৃতির খেয়াল মানুষকে প্রায়ই বিস্মিত করে তোলে। বদলে যায় নানা চিরাচরিত রূপ। যেমন শেয়ালের থাবা থেকে হাঁস মুরগি লুকিয়ে রাখা একটি চিরায়ত নিয়ম। কারণ শেয়াল হাঁস, মুরগি ও ছাগল খেয়ে ফেলে। এ ধরনের ঘটনা সমাজে স্বাভাবিক। কিন্তু যখন ওই শেয়ালই হাঁস মুরগির সঙ্গে গৃহপালিতভাবে বসবাস করে তখন ভাবায় মানুষকে। এমন ঘটনাই ঘটেছে নেত্রকোনার পাহাড়ি সীমান্ত উপজেলা কলমাকান্দায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের নয়নকান্দি গ্রামে আজিজুল হক নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে হাঁস, মুরগি, ছাগলের সঙ্গে পালন করছেন শেয়াল। এটি শুনে কিছুটা আশ্চর্য হলেও অনেকেই বলছেন স্বাভাবিক। সীমান্তের অনেক বাড়িতে বন্যপ্রাণিরা চলে আসে। শূকরসহ শিয়াল, কুকুর এমনকি বানরও থাকে। বিশেষ করে আদিবাসী বাড়িগুলোতে এমন দৃশ্য প্রায় বেশ কয়েকটিতে। কিন্তু বাঙালিরাও এখন আদিবাসীদের মতো করে অভ্যস্ত হয়েছেন সীমান্তের অনেকে। তেমনি আজিজুলের স্ত্রী সুমা আক্তার হাঁস, মুরগি, ছাগল, কুকুর ও শিয়ালের লালন-পালন করছেন।
এদিকে এসব গৃহপালিত হাঁস মুরগির সঙ্গে শেয়ালের একই সঙ্গে বসবাসের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় সীমান্তের বিজিবিসহ আশপাশের মানুষ দেখতে যান। গত বুধবার তিন বিজিবির সদস্য ওই ঘটনা দেখতে গেলে বিষয়টি স্থানীয় সংবাদকর্মীদের নজরেও আসে। ওই বাড়িতে রাখা শেয়ালটিকে তারা ‘লালু’ নামে ডাকেন। যদিও এমন নামে কুকুরকে ডাকা হয়। সে জায়গায় শেয়ালের বিষয়টাতে কিছুটা আশ্চর্য মনে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিবি সদস্য বলেন, ‘শেয়াল সাধারণত জঙ্গলে থাকে। কোনো বাড়িতে আসে হাঁস মুরগি বা ছাগল খেতে। তবে এটি ওইসব প্রাণির সঙ্গে বাড়িতে থাকছে, এটা আশ্চর্য। কিন্তু এটি আসলে শেয়াল কিনা তা বলতে পারবেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারাই। আমরা দেখলাম শিয়ালটির গলায় একটি শিকল বাঁধা রয়েছে। উঠানে ১২টি ছাগল ও বেশ কয়েকটি হাঁস-মুরগি রয়েছে। মনে হচ্ছে সে পাহারা দিচ্ছে।’
শিয়ালের কামড়ে মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলেও জানান তিনি।
পশু পালনকারী সুমা বলেন, ‘গত দেড় বছর আগে তার স্বামী আজিজুল হক নাজিরপুর ইউনিয়নের লোহারগাঁও এলাকায় যান। সেখানে গিয়ে দেখেন একটি জলাশয়ে মাছ ধরছিলেন কয়েকজন আদিবাসী নারী। এসময় তারা পাশের একটি জঙ্গলে তিনটি শেয়ালের বাচ্চা দেখতে পান। তখন তারা এগিয়ে গিয়ে শেয়ালগুলোকে উদ্ধার করে। সেখান থেকে আজিজুল হক একটি শেয়াল নিয়ে আসেন। তখন শেয়ালটির আনুমানিক বয়স ছিল তিন মাস। বাড়িতে আনার পর একটি বোতলে দুধ ভরে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। তারপর থেকে বাড়ির লোকজনের মতো শেয়ালটিও সবধরনের খাবার খায়।’
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘আমরা জানি শেয়াল হচ্ছে মাংসাশী প্রাণি এবং যেসব প্রাণির জলাতঙ্ক বা র্যাবিস (জুনোটিক রোগ) হয় বা জীবাণু বহন করে তাদের মধ্যে শেয়াল অন্যতম। সেক্ষেত্রে জলাতঙ্ক টিকা শেয়াল ও তার পালনকারী দুজনকেই নেয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, শেয়ালের প্রধান খাবার প্রাণির মাংস, খরগোশ, ইঁদুর, টিকটিকি, মুরগি, হাঁস, ইত্যাদি তাই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রচলিত প্রবাদ ‘শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা’ যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।
এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণি রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্যা এনিমেল অব সুসংয়ের সভাপতি রিফাত আহমেদ রাসেল জানান, বন্যপ্রাণি আইনে এসব প্রাণি লালন পালনে কোনো বিধান নেই। বাংলাদেশে হুমকির মুখে থাকা ৩১ টি বন্যপ্রাণির মধ্যে শেয়ালও একটি। মুক্ত পরিবেশে প্রাণিটি যদি তার মতো থাকে, তবে কথা নেই। কিন্তু এখানে দেখা গেছে প্রাণিটির গলায় শিকল বাঁধা। এতে প্রতীয়মান হয় যে, হয়তো শেয়ালটিকে কৌশলে আটকে রাখা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।