জুমবাংলা ডেস্ক : দুই ধাপে পরীক্ষা করে হাকিমপুরী জর্দায় ক্ষতিকর মাত্রায় সিসা, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়ায় জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশের জনপ্রিয় হাকিমপুরী জর্দা বাজার থেকে সরিয়ে নিতে আদালতের আদেশ এসেছে।
একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য আদালত সোমবার এই নির্দেশ দেয়।
এই জর্দা বাজার থেকে তুলতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবারই নিরাপদ খাদ্য আদালতে মামলাটি করেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিদর্শক কামরুল হাসান।
তিনি বলেন, সম্প্রতি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ দুই ধাপে বাজার থেকে বিভিন্ন রকম জর্দা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান পায়। এর পরেই কর্তৃপক্ষ এই জর্দার বিরুদ্ধে তৎপর হয়।
“হাকিমপুরী জর্দার কারখানা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে গত ৭ নভেম্বর তা আনবিক শক্তি কমিশনে পরীক্ষা করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথা হচ্ছে- সেখানে মারাত্মক পরিমাণে লেড, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে। এগুলো মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর ফলে কিডনির সমস্যা, মুখ, ফুসফুস ও গলায় ক্যান্সার হতে পারে। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য আইনের ২৩, ২৪ ও ৩১ ধারায় মামলা দায়ের করি।”
কামরুল বলেন, “নিরাপদ খাদ্য আদালতের বিচারক মেহেদী পাভেল সুইট মামলাটি গ্রহণ করে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেন। পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে হাকিমপুরী জর্দার সংশ্লিষ্ট লটের সব মালামাল বাজার থেকে সরাতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে নির্দেশ দেন।”
মামলার বিষয়ে হাকিমপুরী জর্দার কোম্পানি কাউছ কেমিকেল ওয়ার্কস কোম্পানির মালিক কাউছ মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে সোমবার তার মোবাইল নম্বরে ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়।
এই তামাক ব্যবসায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এবারসহ মোট ১৪ বার সর্বোচ্চ করদাতার পুরস্কার পেয়েছেন।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মাহবুব কবির বলেন, জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি বিবেচনায় তারা জর্দার বিরুদ্ধে ‘অ্যাকশন’ শুরু করেছেন। চলতি বছরে অন্তত ২২টি কোম্পানির জর্দার নমুনা সংগ্রহ করে তারা পরীক্ষা করিয়েছেন। এর সবগুলোর মধ্যেই বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে।
যেসব ক্ষতিকর উপাদান নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, তা জর্দায় না থাকলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিমুক্ত হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জর্দার ক্ষেত্রে দেশে কোনো মানদণ্ড দাঁড় করানো হয়নি। এরকম অনেক পণ্যেরই মানদণ্ড নেই। তবুও নিশ্চিত ক্ষতি হবে জেনেই আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি।”
কেবল হাকিমপুরী জর্দার বিষয়েই কেন পদক্ষেপ-এ প্রশ্নে মাহবুব বলেন, “প্রথম দফায় বাজার থেকে জর্দাগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল। তখন আমরা এসব জর্দার কোনো ঠিকানা খুঁজে পাইনি। পরে বিধি অনুযায়ী হাকিমপুরী জর্দার কারখানার সন্ধান পেয়ে তাদের কারখানা থেকেই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রচলিত ব্র্যান্ড বলে বিবেচনা করা হয়। এসব কারণে এই ব্র্যান্ডটির বিরুদ্ধে সবার আগে অ্যাকশন শুরু করা হয়েছে।”
“ধীরে ধীরে সব ধরনের জর্দা, গুল ও খয়েরের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু করা হবে,” বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, প্রথমবার পরীক্ষা করে হাকিমপুরীসহ মোট ১৩ প্রতিষ্ঠানের জর্দা, ছয় প্রতিষ্ঠানের খয়ের ও তিন প্রতিষ্ঠানের গুলের নমুনা পরীক্ষা করে ক্ষতিকর এসব ভারী ধাতু পায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা করা পণ্যগুলোর মধ্যে ছিল গিলা খয়ের, তীর মার্কা খয়ের, মালাই খয়ের, অন্তরা খয়ের, কালো পাথর বাল্ক খয়ের, সাদা বাল্ক খয়ের, ঈগল গুল, মোস্তফা গুল, শাহজাদা গুল, রতন জর্দা, হাকিমপুরী জর্দা, গুরুদেব জর্দা, শাহজাদী জর্দা (নির্মল), মহিউদ্দিন জর্দা, ঢাকা জর্দা, মকিমপুর জর্দা, শাহি হীরা জর্দা, জাফরানী জর্দা, শাহজাদী জর্দা (আলম), বউ শাহজাদী জর্দা এবং চাঁদপুরী জর্দা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।