লাইফস্টাইল ডেস্ক : মৌরি খেতে অনেকেই খুব ভালোবাসেন। প্রাচীনকাল থেকেই মৌরির ব্যবহার মশলা আর মুখশুদ্ধি রূপে হয়ে আসছে। পান সাজাবার সময়েও পানের ভেতর মৌরি দেওয়া হয়। মৌরি স্বাদে মিষ্টি বা মধুর। এই মধুরতা গুণের জন্যেই সংস্কৃত ভাষায় মৌরিকে মধুরী বলা হয়। মৌরি সুগন্ধদায়ক বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। মৌরির গ্রীক নাম ম্যারাথন এবং বৈজ্ঞানিক নাম ফেনিকুলাম ভালগ্যার।
আয়ুর্বেদ মতে মৌরি শরীর শীতল রাখে, রুচিকর, শুক্রবর্ধক, মুখদোষ নিবারক, রক্তপিত্ত, জ্বর, পেটের অসুখে, চোখের অসুখে ও শ্লেষ্ম রোগে উপকারী। গো’প’না’ঙ্গ ব্যথা, কোষ্ঠবদ্ধতা (মল না হওয়া), অগ্নিমান্দ্য (খিদে না হওয়া), কৃমি, কাশি, বমি, শূল ও বায়ুনাশ দূর করতে কার্যকরী। তবে এর রয়েছে অনেক গুণ। পুরুষের স্পার্ম কাউন্ট বাড়ানো থেকে ঘনিষ্ঠ হওয়ার ক্ষমতা বাড়ায় মৌরি।
মৌরি খাবারকে কিছু মানুষ তেমন একটা পাত্তা দেন না। এই পরিস্থিতিতে সতর্ক হয়ে যাওয়াটা হল খুবই জরুরি। কারণ এটা মাথায় রাখতে হবে যে পুরুষ কিছু খাবার না খেলে সমস্যা তৈরি হয়ে যেতে পারে। এমনকী মৌরি খেলে পুরুষের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। বাড়ে ফার্টিলিটি।
মৌরি নিয়ে বেশি আলোচনা না হলেও, এতে রয়েছে অনেক গুণ। এই খাবারে আছে কপার, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন সি, আয়রন, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম থেকে শুরু করে অন্যান্য উপকারী উপাদান। এই সমস্ত উপাদান কিন্তু পুরুষের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য খুবই জরুরি। এই বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আসুন জানা যাক শরীরে মৌরি ঠিক কী উপকার করে-
মৌরি বাড়ায় ফার্টিলিটি
পুরুষের মধ্যে এখন বাড়ছে বন্ধ্যাত্ব । সেক্ষেত্রে স্পার্মের মান খারাপ হয়ে যাওয়াটাই মূল কারণ। এবার দেখা গিয়েছে যে ফার্টিলিটি বাড়াতে চাইলে আপনাকে খেতে হবে মৌরি। কারণ মৌরিতে রয়েছে নানা ভিটামিন ও খনিজ। এবার এই ভিটামিন ও খনিজ শরীর সুস্থ রাখতে পারে। এমনকী স্পার্মের সংখ্যা ও মান বাড়ায় এই খাবার।
ঘনিষ্ঠ হওয়ার শক্তি বাড়ায় মৌরি
দেখা গিয়েছে এই খাবারে থাকা নানা উপাদান বাড়াতে পারে ঘনিষ্ঠ হওয়ার শক্তি। আসলে এতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ এই কাজে সাহায্য করে। এমনকী মৌরিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কথা ভুলে গেলেও কিন্তু চলবে না।
ক্যানসার দূর করে
মৌরির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ হচ্ছে এটি ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে। ত্বক, স্তন ও পেটের ক্যানসার তৈরিতে যেসব উপাদান কাজ করে, তা ঠেকাতে পারে মৌরির প্রভাব। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মৌরিকে ‘মঙ্গলকর’ উপাদান হিসেবে বর্ণনা করা হয়। বিভিন্ন খাবারে তাই মৌরি মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ত্বকের সমস্যার জন্য খুব ভালো
মৌরিতে রয়েছে সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং জিঙ্কের মতো খনিজ উপাদান। এগুলি আপনার রক্তের প্রবাহে অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক। এগুলো ত্বকে শীতলতা প্রদান করে। মৌরি বীজ ত্বকের ফুসকুড়ি এবং শুষ্কতা নিরাময়ে সাহায্য করে। মৌরির বীজ থেকে তৈরি পেস্ট ত্বকে লাগাতে পারেন।
হার্ট সুস্থ রাখতে
মৌরি ফাইবারের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এই পুষ্টি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এই বীজগুলিতে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়ামের মতো অন্যান্য পুষ্টিও রয়েছে। এগুলো হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
হাঁপানি প্রতিরোধ করতে পারে মৌরি
মৌরিতে যে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট আছে, তা সাইনাসের সমস্যা দূর করতে পারে। ব্রঙ্কাইটিস ও কফের সমস্যা দূর হয় মৌরির চা খেলে। হাঁপানির সমস্যা সমাধানেও মৌরি থেকে উপকার পাওয়া যাবে।
রক্ত পরিষ্কার করে
মৌরির প্রয়োজনীয় তেল এবং ফাইবার উপাদান এমন কিছু যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এইভাবে এটি আমাদের রক্তকে বিশুদ্ধ করে। মৌরির অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সাহায্য করে।
দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে মৌরি
মৌরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। এটি আমাদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। আপনি আপনার প্রতিদিনের খাবারে এক থেকে দুই চা চামচ মৌরি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
ওজন কমায়
একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করা ছাড়াও, মৌরি খাওয়া ওজন কমাতে অনেক সাহায্য করতে পারে। এই বীজে উপস্থিত অ্যানিথোল ক্ষুধা কমানোর প্রধান কারণ। নিয়মিত মৌরি চা পান করলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে মৌরি
মৌরি অ্যানেথোল, ফেনকোন এবং এস্ট্রাগোলের মতো প্রয়োজনীয় তেলে সমৃদ্ধ। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, ফোলাভাব এবং বদহজম নিরাময়ে সাহায্য করে। এটি আপনার পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
ফুড সায়েন্সে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, মৌরি চিবোলে লালায় নাইট্রেটের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা প্রাকৃতিক উপায়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ ছাড়া এতে পটাশিয়াম থাকায় কোষ ও রক্তরসের জন্য দরকারি উপকরণ হিসেবে ভূমিকা রাখে। হৃৎস্পন্দনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেও মৌরি কার্যকর ভূমিকা রাখে।
শরীর থেকে টক্সিন বের করে মৌরি চা
মৌরির চা নিয়মিত খেলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়ে যায় এবং প্রস্রাবের সমস্যা দূর হয়। এটি মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করতেও উপকারী। এছাড়া দু’বেলা মৌরী দেওয়া চা পান করলে সদ্য মায়েদের ব্রেস্ট-এ দুধের মাত্রা বাড়ে যা সদ্যোজাতের বেড়ে ওঠার জন্য জন্য অত্যন্ত জরুরি।
মহিলাদের পিরিয়ডের সমস্যায় স্বস্তি দেয়
পিরিয়ডের সমস্যা থেকে স্বস্তি দেয় পিরিয়ডের সমস্যা থেকে স্বস্তি দেয় পিরিয়ডের সময় মেয়েদের প্রচুর অস্বস্তিতে কাটাতে হয়। এক্ষেত্রে দুধের সাথে মৌরি মিশিয়ে পান করলে পিরিয়ড সম্পর্কিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এজন্য এক গ্লাস দুধে এক চামচ মৌরি মেশান। এটি ভালো করে ফুটিয়ে তারপর পান করুন।
পেটের সমস্যা দূর করে
মৌরি সারাদিনের যে কোনও সময় খাওয়া যায়। কারণ পেটের সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে এটা দারুণ কার্যকরী। এছাড়া মখসুদ্ধি হিসাবেও দারুণ কাজের জিনিস হল মৌরি। দিনের যে কোনও সময় আপনি মৌরি খেতে পারেন। তবে সবথেকে ভালো হয় রাতে শোয়ার আগে মৌরি খেতে পারলে।
কর্মক্ষমতা বাড়ায়
দুধে মৌরি মিশিয়ে পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। মৌরিতে অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়ায়। রাতের বেলায় দুধের সঙ্গে মৌরি মিশিয়ে খেলে তা আমাদের শরীরে পুষ্টি সরবরাহ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মৌরি সে’ক্স পাওয়ার বাড়ায়। যৌ’ন জীবনের সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পুরুষ এবং মহিলাদের উচিত মৌরি খাওয়া। লো সে’ক্স ড্রাইভ, অকাল বীর্য’পাত এবং দুর্বলতার মতো সমস্যার সমাধান করতে পারে মৌরি। তাই, সে’ক্স ড্রাইভ উন্নত করতে দুধে মৌরি দিয়ে পান করুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।