জুমবাংলা ডেস্ক : হৃদরোগীদের একপ্রকার জিম্মি করে এবার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে দেশে হার্টের রিং ব্যবসায় জড়িতদের একটি বড় অংশ।
দাম নির্ধারণ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে আজ শনিবার থেকে সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে স্টেন্ট (হার্টের রিং) সরবরাহ ও ব্যবহার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইউরোপের ২৪টি রিং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানপন্থি বাংলাদেশ মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত ব্যবসায়ীরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রিং সরবরাহকারী তিন প্রতিষ্ঠানপন্থি অ্যাসোসিয়েশনের অপর অংশ এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নয়।
ধর্মঘটে যাওয়া সংগঠনটির একাধিক নেতা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে অ্যাসোসিয়েশনের এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে মূল্য পুনর্নির্ধারণের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও হার্টের রিং বসানো হয় এমন হাসপাতালগুলোতে চিঠি দিয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দাম নিয়ে নৈরাজ্য কমাতে ২৭টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ৪৪ ধরনের হার্টের রিংয়ের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। রিংয়ের খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয় সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ১৪ হাজার টাকা। আজ ১৬ ডিসেম্বর থেকে এ দাম কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু এর মধ্যেই এই দাম নির্ধারণ নিয়ে ধর্মঘটের ডাক দিলেন ইউরোপের প্রতিষ্ঠানপন্থি রিং ব্যবসায়ীরা।
এদিকে রিং ব্যবসায়ীদের বড় অংশের ধর্মঘটের ফলে হাসপাতালগুলোতে জরুরি হৃদরোগীরা ভোগান্তিতে পড়তে যাচ্ছেন। রিং না পাওয়ায় পূর্বনির্ধারিত হার্টের অনেক অস্ত্রোপচার বাতিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনকি মুমূর্ষু রোগীরও অস্ত্রোপচার আটকে যেতে পারে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের একেক হাসপাতালে হার্টের রিংয়ের দাম ছিল একেক রকম। ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিলে দাম সমন্বয়ের জন্য জাতীয় নীতিমালা বা মার্কআপ ফর্মুলা তৈরি করা হয়। সে সময় ১৭ সদস্যের কমিটি করে অধিদপ্তর। ওই কমিটি ২৮ ধরনের রিংয়ের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। এই নির্ধারিত দামেই রোগীদের কাছে রিং বিক্রি করে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে কয়েক দফায় ডলারের দাম বাড়ায় বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্নভাবে দাম বৃদ্ধি করে। এমন পরিস্থিতিতে ঔষধ প্রশাসন নতুন করে হার্টের রিংয়ের দাম সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়।
গত এপ্রিলে মূল্য নির্ধারণে নতুন করে ১৩ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি ও ঔষধ প্রশাসন বৈঠক করে জুন ও আগস্টে দুই দফায় মার্কআপ ফর্মুলা অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাবোট ল্যাবরেটরিজ, বোস্টন সায়েন্টিফিক, মেডট্রোনিক কোম্পানির রিংয়ের মূল্য সমন্বয় করে। তবে গত ১৩ ডিসেম্বর ২৪টি ইউরোপীয় কোম্পানি উৎপাদিত রিংয়ের দাম মার্কআপ ফর্মুলা অনুসারে না নিয়ে কিছু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ইচ্ছামতো নির্ধারণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের।
ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানের রিং সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক কবীর হোসাইন বলেন, প্রশাসন এবং কয়েকজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ পক্ষপাতমূলক আচরণ করে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত রিংয়ের তিন কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে ১ দশমিক ৪২ ফর্মুলা অনুপাতে খুচরা বিক্রিয় মূল্য নির্ধারণ করে। বাকি কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে ফর্মুলা নিয়ম মানা হয়নি। এক প্রকার চাপিয়ে একটা মূল্য দেওয়া হয়েছে। যেটা দিয়ে পণ্য আমদানি করা সম্ভব নয়। তাই শনিবার সকাল থেকে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে স্টেন্ট সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। তবে আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তিন কোম্পানির প্রতিনিধিরা যুক্ত হয়নি।
ইউরোপীয় রিং সরবরাহকারী আরেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘রোগীদের ভোগান্তির জন্য নয় বরং দাম নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে সেটা দূর করতেই এই আন্দোলন। তিনটা কোম্পানি বাদে রিংয়ের দাম আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা একটি রিং যদি ১০ টাকা দিয়ে কিনি এখন ঔষধ প্রশাসন ওই দামেই বিক্রির জন্য মূল্য নির্ধারণ করেছে। এটা সম্ভব না। তাই হাসপাতালগুলোকে আমরা বলেছি, দাম চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন ইউরোপীয় কোম্পানির রিং ব্যবহার না করে। কারণ আমাদের তো নতুন নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে হবে। পুরাতন দামে বিক্রি করা যাবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত রিং সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের মালিক ও মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মেডিকেল ডিভাইস বিক্রির গাইডলাইন ২০১৭ সালে তৈরি হয়। গাইডলাইনে বিদেশ থেকে মেডিকেল সরঞ্জাম আমদানির একটি ফর্মুলা তৈরি করে সরকার। সেই ফর্মুলা অনুযায়ী তিনটি কোম্পানির রিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। বাকিগুলোর মূল্য নির্ধারণ কোন ফর্মুলা অনুসারে কেন করা হলো না এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন ভালো বলতে পারবে। এ জন্য ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা বিক্ষুব্ধ হয়েছে। আমাদের তারা আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু আমরা না করে দিয়েছি। কারণ আমরা মানুষকে জিম্মি করার পক্ষে নই।’
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন বলেন, ‘স্টেন্ট সরবরাহ ও ব্যবহার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো চিঠি হাসপাতালে আসেনি। তাই এ বিষয়ে এখনই মন্তব্য করতে পারব না।’
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল আলম বলেন, ‘হার্টের রিং নিয়ে নৈরাজ্য কমাতে সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছে। সর্বশেষ বৈঠকে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই দাম নির্ধারণ করা হয়। সমস্যা থাকলে বৈঠকেই আলোচনা করা যেত। তবে এখনও আলোচনার সুযোগ রয়েছে। হঠাৎ করে স্টেন্ট সরবরাহ ও ব্যবহার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হয়নি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।