জুমবাংলা ডেস্ক : প্যারামাউন্ট ইন্টারন্যাশনাল। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের স্টেশন রোডের অভিজাত হোটেল। রিয়াজউদ্দিন বাজারে ছিনতাই মিশন শেষে ওই হোটলের ৬০৯ নম্বর কক্ষে ওঠে ১৩ ছিনতাইকারী। ব্যবসায়ী নুর মো. ইয়াছিন কবিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনা ১০ লাখ টাকা ভাগ করতে তারা ভাড়া নেয় কক্ষটি। রাতভর লুটের ১০ লাখ টাকা ভাগ করে ভোরে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যায় ছিনতাইকারীরা।
ব্যবসায়ী ইয়াছিনের দোকানের সাবেক কর্মচারী মুসলিমই এ ছিন তাই কা ণ্ডের ‘নাটের গুরু’। ব্যাগে করে ব্যাংকে টাকা নিয়ে যাওয়ার তথ্য ও টাকা বহনকারী দুই কর্মচারীর ছবিও ছিনতাই চক্রের সদস্যের কাছে পৌঁছে দেয় মুসলিম। পরে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে চক্রটি। মারামারির নাটক সাজিয়ে দুই কর্মচারীকে ঘিরে জটলায় ফেলে ছুরিকাঘাতে ১০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। সম্প্রতি দুই আসামির আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল রোববার বলেন, রিয়াজউদ্দিন বাজার ও আশপাশের এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অপরাধে জড়ানো সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত চক্র এ ছিনতাইয়ে জড়িত। তারা বড় বড় ব্যবসায়ীর ব্যাংকিং লেনদেনের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়। পরে ওই ব্যক্তিকে টার্গেট করা হয়। এরা ইচ্ছা করে মারামারির পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, যাতে পথচারীরা বুঝতে না পারে এখানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। মারামারির এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। তারা বেশিরভাগই ছিনতাইয়ের সময় আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরের কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর রুবেল হাওলাদার বলেন, ঘটনার পরপরই চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে তাদের কাছ থেকে বেশির ভাগ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। কয়েক আসামি আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রে প্তা রে র চেষ্টা চলছে।
আসামি একরামুল আলম ও সাহেদ হোসেন মনা জবানবন্দিতে জানায়, রিয়াজউদ্দিন বাজারের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ইয়াছিন কবিরের দুই কর্মচারী ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে যাবেন– এ তথ্য ফাঁস করেন মুসলিম। সে ইয়াছিনের দোকানের সাবেক কর্মচারী। মুসলিম টাকা বহনকারী দুই কর্মচারী মোহাম্মদ রাশেদ ও ত্রিদীপ বড়ুয়ার ছবি ছিনতাইকারী মিরাজের কাছে পাঠায়। ৯ জুলাই দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ছিনতাই চক্রের সবার কাছে ফোন করে মুসলিম জানায়, দোকান থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংকের উদ্দেশে বের হয়েছেন রাশেদ ও ত্রিদীপ। এ তথ্য পেয়ে ছিনতাইকারী সাহেদ হোসেন মনা, ইকবাল হোসেন, ইয়াসিন এরফান সাব্বির, মিরাজ, রাপ্পি, টনি বড়ুয়া, ইব্রাহিম, শাহ আলম, সাকিন, মিঠু ও রাব্বি রিয়াজুদ্দিন বাজারের রয়েল টাওয়ারের সামনে মারামারির নাটক সাজায়। এক পর্যায়ে টাকা বহনকারী দুই কর্মচারীকে মারামারির জটলার ভেতর ঢুকিয়ে ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী দল।
টাকা ভাগ করতে হোটেল ভাড়া
টাকা লুট হওয়ার পর ছিনতাইকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার অনুরোধ জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় ছিনতাই পরিকল্পনার মূল হোতা একরামুল আলম। দিনদুপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ক্ষোভও প্রকাশ করে সে। হোটেল প্যারামাউন্ট ইন্টারন্যাশনালে বসে স্ট্যাটাস দিলেও সে সেখানে বসেই টাকা ভাগবাটোয়ারা করে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে একরামুল আলম ছিনতাই মিশনের অপর সদস্য মিরাজকে ফোন করে হোটেল প্যারামাউন্টের ৬০৯ নম্বর কক্ষে আসতে বলে। টাকার ব্যাগ নিয়ে ওই হোটেল কক্ষে ১৩ ছিনতাইকারী আসে। সেখানে বসেই সবার মাঝে টাকা বণ্টন করে একরামুল। এর পর ভোরে তারা সবাই যে যার মতো আত্মগোপনে চলে যায়।
ছিনতাই মিশনে যারা
ছিনতাই মিশনে ১৩ জন অংশ নেয়। এর মধ্যে ধরা পড়েছে চারজন। তারা হলো একরামুল, মনা, ইরফান ও রবিউল। মূল হোতা একরামুল পটিয়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের খান বাড়ির মৃত জাফর আহম্মদের ছেলে। তার বিরুদ্ধে থানায় চারটি মামলা রয়েছে। সাহেদ হোসেন মনা মিরসরাইয়ের পূর্ব মায়ানীর শাহ আলমের ছেলে। তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। পলাতক ৯ জন হলো মিরাজ, মুসলিম, রাপ্পি, টনি বড়ুয়া, ইব্রাহিম, শাহ আলম, সাকিন, মিঠু ও রাব্বি। ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনতাই হলেও এখন পর্যন্ত সাত লাখ ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করতে পেরেছে পুলিশ।
ছিনতাই ঘটনার এক দিন আগে ৮ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে মিরাজ, মুসলিম, বাপ্পিদের নিয়ে বৈঠক করে একরামুল পরিকল্পনা সাজায়। সেই পরিকল্পনার কথা মিরাজ মোবাইল ফোনে সাহেদ হোসেন মনাকে জানায়। ছিনতাই পয়েন্ট রয়েল টাওয়ারের সামনে তার লোকজন নিয়ে আসতে বলে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন ৯ জুলাই রিয়াজউদ্দিন বাজার সিডিএ মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় সবাই একত্র হয়। সেখানে নাশতা করে তারা দুপুর ১২টার দিকে ছিনতাই স্পটে চলে যায়। মুসলিম ব্যবসায়ী ইয়াছিন কবিরের দোকান নুর এন্টারপ্রাইজের সামনে ওতপেতে থাকে। যখনই দুই কর্মচারী টাকার ব্যাগ নিয়ে দোকান থেকে বের হন, তখন ফোনে অন্য ছিনতাইকারীদের এ তথ্য জানিয়ে দেয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।