প্রাচীনকাল থেকে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পথে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমণ করেছে। কখনো সমুদ্রের বুকে নৌকা বা জাহাজ ডুবে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। অনেকেই দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে বাড়িতে ফিরে আসতে পেরেছে। তবে মেক্সিকোর জেলে হোসেস আলভাদার গল্পটি সবাইকে বিস্মিত করবে।
২০১২ সালে নভেম্বর মাসে মেক্সিকোর উপকূল থেকে ইঞ্জিন চালিত ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে সমুদ্র পথে রওনা হন তিনি। তার উদ্দেশ্য ছিল একটানা 30 ঘন্টা সমুদ্রের পথে থেকে মাছ ধরবেন এবং বাড়িতে ফিরে পুরো এক সপ্তাহ বিশ্রাম নিবেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি কাজ শুরু করে দেন। সঙ্গে একজন সঙ্গীকে রাখেন যিনি এতটা অভিজ্ঞ ছিলেন না। নৌকা ততক্ষণে তীর থেকে ১৫০ মিটার দূরে চলে গিয়েছে। নৌকায় একটি আইস বক্স রাখা হয়েছে। মাছ ধরার জাল এবং অন্যান্য সরঞ্জামও রয়েছে।
হঠাৎ করে কম সময়ের মধ্যে আবহাওয়া বেশ খারাপ হতে শুরু করে। দুপুরের দিকে সমুদ্র একেবারে উত্তাল হয়ে যায়। তিনি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হলেন। সমুদ্রের বিশাল ঝড় দেখে তারা দুই জনই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে নৌকার ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় পাঁচ দিন একটানা ঝড়ের তাণ্ডব চলতে থাকে। ৫ দিন পর আবহাওয়া শান্ত হতে শুরু করে। ততক্ষণে নৌকা তীর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে চলে এসেছে।
নৌকায় খাবার এবং পানির অভাব ছিল। দিনে সূর্যের তাপ এবং রাতে ঠান্ডা আবহাওয়া তাদের শোচনীয় অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে বাধ্য করে। মাঝখানে কিছুদিন বৃষ্টি হয়েছিল। বৃষ্টির পানি তারা খাবার পানি হিসেবে ধরে রেখেছিলেন কিছুদিন।
দীর্ঘ ১১ দিন পর তাদের ভাগ্যে খাবার জুটেছিল। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন কোথায় তারা খাবার পেল। তারা কচ্ছপ এবং মাছ ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন। এগুলো বাধ্য হয়ে কাঁচাই খেতে হয়েছে। বেঁচে থাকার তাগিতে তা প্রয়োজন ছিল।
জেলে হোসেস আলভাদার সঙ্গী কিছুদিন পর মারা যান। সমুদ্রের অত্যাচার তিনি সহ্য করতে পারেননি। আলভাদা একাই টিকে থাকার যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তার দেওয়া সংকেত কোন জাহাজ দেখতে পাচ্ছে না। এভাবে আরও ৮ মাস পেরিয়ে যায়। ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি তিনি উপকূলের দেখা পান। তিনি ৪৩৮ দিন সমুদ্রে ভেসেছিলেন। এ সময় তিনি ৬ হাজার ৭০০ মাইলের বেশি ভ্রমণ করেছেন। ঝড়ের কবলে পরে সমুদ্রের দীর্ঘ সময় একাকী বেঁচে থাকার রেকর্ড এখন তার ঝুলিতে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।