নীলফামারী প্রতিনিধি: মাত্র ১০০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়েছেন নীলফামারী সদর উপজেলার সুমন রানা। তিনি উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বাহালিপাড়া চৌধুরীবাজার এলাকার মিজানুর রহমানের ছেলে। বাবা পেশায় একজন রিকসা চালক।
নীলফামারী কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর নীলফামারী সরকারী কলেজে গণিত বিভাগের অনার্স পড়ছেন তিনি।
সুমন জানান, আমি টিউশনি করে চলি। আমরা তিন ভাই দুই বোন। এভাবে যে চাকরিটা পাবো কল্পনাই করিনি। আমার চাকরির জন্য ১০০ টাকা ছাড়া একটি টাকাও কোথাও খরচ করতে হয়নি।
চাকরি পাওয়া আরেকজন হলেন মাসুদা আখতার। জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের ভবনচুর এলাকার গোলাম মাসুদের বড় মেয়ে তিনি। জলঢাকা ডিগ্রী কলেজ থেকে এবারে (২০১৯ সাল) উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন মাসুদা।
মাসুদা জানান, বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১ টাকা দিয়ে ট্রেজারী চালান ফরম সংগ্রহ করে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি খাতে ১০০ টাকা জমা করি। এরপর ২২ জুন শারীরিক পরীক্ষার দিনে পুলিশ লাইন্সে গিয়ে দাঁড়িয়ে প্রথম স্তরে সফলতা পাই। এরপর লিখিত পরীক্ষা এবং সাক্ষাৎকার শেষে আমি চাকরির জন্য নির্বাচিত হই।
তিনি বলেন, আমার ইচ্ছে ছিলো পুলিশে চাকরি করবো। সেটি পূরণ হয়েছে। এর পেছনে আমার বাবার সবচেয়ে বড় অবদান রয়েছে।
মাসুদা বলেন, যেভাবে স্বচ্ছ পদ্ধতির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এজন্য পুলিশ বিভাগের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
শুধু সুমন বা মাসুদা নয় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নীলফামারীতে মাত্র ১০০ টাকায় চাকরি হয়েছে ১২৯ জনের। এদের মধ্যে এবারই প্রথম এতিম কোটায় চাকরি পেয়েছেন একজন।
তবে ডোপ টেস্টে মাদকাসক্ত প্রমাণ হলে চাকরি থেকে বাদ পড়ারও শংকা রয়েছে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতদের। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।
সূত্র জানায়, সারাদেশে পুলিশে নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নীলফামারীতে প্রথম ধাপে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২২ জুন। এদিন নীলফামারী পুলিশ লাইন্স মাঠে প্রায় ২ হাজার ৫’শ জনের মধ্য থেকে শারীরীক বাছাই শেষে (প্রাথমিক বাছাই) ৭৭৮ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচন করা হয়।
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৩৪৬ জনকে নির্বাচন করা হয় সাক্ষাৎকারের জন্য। সাক্ষাৎকার শেষে ২৭ জুন সকালে প্রকাশ করা হয় চূড়ান্ত তালিকা। নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে পুলিশ মহাপরিদর্শকের প্রতিনিধি হিসেবে নীলফামারীতে ছিলেন এসপি ও অতিরিক্ত এসপি পর্যায়ের দু’জন কর্মকর্তা।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, নীলফামারীতে ২৯ জনকে নেওয়ার কথা থাকলেও ১২৯ জনকে নির্বাচিত করা হয়। দীর্ঘদিন থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পূরণ না হওয়ায় সেগুলো পূরণ করেও অবশিষ্ঠ অপুর্ণ পদগুলো পূরণ করতে মেধাবীদের নেয়া হয়েছে এবারে। বাদ যায়নি আনসার ভিডিপি, এমনকি এতিম কোটাও।
জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। যোগ্য ও মেধাবীদের মুল্যায়ন করা হয়েছে চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে।
তিনি বলেন, যারা চাকরি পেয়েছেন বেশির ভাগই দরিদ্র ঘরের সন্তান। চাকরি প্রদানের ক্ষেত্রে কোনও সুপারিশ গ্রহণ করা হয়নি এমনকি সরকারি কোনও নিয়মকে উপেক্ষা করা হয়নি।
তবে তিনি বলেন, ডোপ টেস্টে কেউ মাদকাসক্ত প্রমাণ হলে সে চাকরিতে প্রবেশ করতে পারবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।