জুমবাংলা ডেস্ক : দিনমজুর নজরুল ইসলামের মেয়ে সানজিদা। বাড়ি গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী গ্রামে। এক বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় তিনি। পড়াশোনা করছেন ময়মনসিংহ নগরীর মুসলিম গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে। দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে এতদূর এসে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হয় টিউশনি করে। আজ তার সেই কষ্ট ঘোচানোর দিন। কেননা পুলিশ কনস্টেল পদে চূড়ান্ত নিয়োগ তালিকায় এসেছে তার নাম।
বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১২ টায় চূড়ান্ত ফলাফলে ঘোষণার নিজের নামটি শোনার পর চোখ অশ্রুতে ভরে যায় সানজিদা ও তার বাবা নজরুলের।
অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সানজিদা বলেন, আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা সাতজন। বাবা ছাড়া পরিবারে উপার্জনক্ষম কোনো ব্যক্তি নেই। তাই আমার চাকরির খুব প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ঘুষ ছাড়া কোথায় চাকরি পাবো, এমন চিন্তা মাথা থেকে দূর হচ্ছিল না। তবে জানতে পেরেছি কোনো ধরণের তদবির ছাড়াই পুলিশে চাকরি হয়। তাই আবেদন করে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়েছি। অবশেষে সেটিই সত্য হল। আবেদন ফরম ৩ টাকা, ব্যাংক ড্রাফট ১০০ টা ও অনলাইন চার্জ ৩০ টাকা দিয়েই পেয়ে গেছি কাঙ্ক্ষিত পুলিশের চাকরি। এখন আমিই সংসারের হাল ধরতে পারব।
সানজিদার মতোই মোট ১০৭ জন শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতায় মাত্র ১৩৩ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়েছেন। যাদের কারো বাবা কৃষক, কারো বাবা দিনমজুর-শ্রমিক, কারো বাবা রিকশাচালক, কেউবা আবার নিজেরাই গার্মেন্টসকর্মী।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে এবার ২৯৩০ জন পরীক্ষার্থী শারীরিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে এ পরীক্ষায় ৭১৬ জন উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরে লিখিত পরীক্ষায় পাস করে ১৮৫ জন। সেখান থেকে চূড়ান্ত তালিকায় নাম এসেছে ১০৭ জনের। এছাড়াও অপেক্ষমাণ রয়েছে আরও ১৯ জন।
জেলার এসপি মোহা. আহমার উজ্জামান ফলাফল ঘোষণার পর বলেন, আমি অভিভূত এবং নিজেকে গর্বিত মনে করছি ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে পেরে। আইজিপির ঐকান্তিক ইচ্ছা ও চেষ্টার কারণেই শতভাগ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার মাধ্যমে মেধা ও যোগ্যতাভিত্তিক এ নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমবারের মতো প্রার্থীদের অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করে তারা চূড়ান্ত তালিকায় আসতে পেরেছে।
এসপি আরো বলেন, বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে নিয়োগ পরীক্ষার আগে থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা সতর্ক ছিলাম। দালালরা যাতে প্রার্থীদের প্রতারিত করতে না পারে, সেজন্য ডিবি পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করেছে। আমরা বিশ্বাস করি এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা যে পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ দিলাম তারা ২০৪১ এর উন্নত বাংলাদেশের পুলিশ হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে পারবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।