জুমবাংলা ডেস্ক : কুড়িগ্রাম সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার ১৪ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বাবার সঙ্গে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফ সদস্যের গুলিতে নিহত হন কিশোরী ফেলানী খাতুন। ১৪ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় আছে নিহতের পরিবার।
জানা যায়, বাংলাদেশের উত্তর সীমান্ত ঘেঁষা রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন নুরুল ইসলাম নুরু। অভাবের সংসার ছিল তার। সংসারের টানাপোড়েন ঘোচাতে ঘটনার প্রায় ১২ বছর আগে দেড় বছরের ফেলানী কোলে নিয়ে স্ত্রী জাহানারাসহ অবৈধ পথে যান ভারতে। সেখানে বঙ্গাইগাঁও গ্রামে বসবাস শুরু করেন তারা। পরে ইটভাটার কাজ করেন নুরু। জাহানারাও মাঝেমধ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন। এরমধ্যে ফেলানী হয়ে যায় ১৩ বছরের কিশোরী। তখন বাংলাদেশে ফেলানীর বিয়ে ঠিক করে পরিবারের লোকজন। বিয়ের জন্য মেয়েকে নিয়ে ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি বঙ্গাইগাও থেকে রওনা দেন বাংলাদেশে বাড়ি উদ্দেশ্যে। আসার সময় মেয়েকে বিয়ের সাজ পড়িয়ে দিয়েছিলেন মা জাহানারা। ওইদিন সন্ধ্যায় সীমান্তে পৌঁছে দালালদের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে কাঁটাতার পাড় করে দেয়ার চুক্তি হয় তাদের। ভারতের অভ্যন্তরে সীমান্তের এক বাড়িতে থাকতে দেন দালালরা।
পরদিন ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে মই বেয়ে প্রথমে কাঁটাতার পাড় হন বাবা নুরুল ইসলাম। এরপর ফেলানী কাঁটাতার পাড় হতে মই বেয়ে উপরে উঠলে ভারতের ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফের এক সদস্য তাকে কাছ থেকে গুলি করলে কাঁটাতারে ঝুলে পড়ে ফেলানীর নিথর দেহ। প্রায় চার ঘণ্টা পর ফেলানীর মরদেহ কাঁটাতার থেকে নামিয়ে নিয়ে যায় বিএসএফ। ময়নাতদন্ত শেষে একদিন পর বিজিবির মাধ্যমে মরদেহ ফেরত দেয় তারা।
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, ‘আমার সামনে কোর্টে অমিয় ঘোষ দোষ স্বীকার করেছে। এরপরও তাকে খালাস দেয় কীভাবে? এটা তো বিচার হলো না। বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষায় আছে। আমি অপেক্ষায় এ সরকার যেন বিচারটা চায়। ভারতের কাছে বিচারের দাবিটা যেন তোলে। এটাই চাই আমি।’
ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘মেয়েকে হারিয়ে ১৪টা বছর ধরে কান্তাছি। কত কান্দি আর। বিচার পাইলাম না। আমার পরিবারের জন্য কেউ কিছু করলো না। খুব কষ্টে চলতাছি। এই সরকার যেন বিষয়টা দেখেন।’
ফেলানী হত্যা মামলায় ফেলানীর বাবাকে আইনি সহায়তাকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে ফেলানীর বাবার রিট পড়ে আছে। তারা চাইলে এটার দ্রুত শুনানি শেষ করে রায় দিতে পারে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তা হচ্ছে না। এতে ভারতের বিচার বিভাগের প্রতি বিশ্ববাসীর একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। এটি ভারত সরকারকে বুঝতে হবে। বাংলাদেশ-ভারত দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতা করে দ্রুত বিচারটা করা উচিত। ফেলানীর বাবা যাতে ন্যায্য বিচার পায় সেটা নিশ্চিত করা উচিত।
তিনি বলেন, ‘পূর্ববর্তী রায়ে ফেলানীর বাবাকে পাঁচ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছিল। সেটাও আপিল করে রুদ্ধ করা হয়েছে। সে ক্ষতিপূরণটা দেয়া দরকার। ৭ জানুয়ারি রিটের শুনানি হওয়ায় কথা রয়েছে। হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। আমরা চাই শুনানি হোক। বিচার দ্রুত শেষ হোক।’
সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, ফেলানীর পর কুড়িগ্রামের বিভিন্ন সীমান্তে দুই ভারতীয়সহ ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত শতাধিক। ফুলাবাড়ী উপজেলার সীমান্তে ২০১১ সালে ফেলানী ছাড়াও মিঠু মিয়া নামে একজন গুলিতে নিহত হয়। ওই উপজেলায় ২০১২ সালে আলমগির হোসেন, ২০১৪ সামছুল হক ও মুকুল মিয়া, ২০১৫ সালে শ্যামল চন্দ্র বাদ্যকার, একই বছর উলিপুর সীমান্তে বায়েজিদ হোসেন, ২০১৯ সালে ভারতীয় নাগরিক সবুর মিয়া, নাগেশ্বরী উপজেলার সীমান্তে ২০১৯ সালে আবুল হাসেম, ২০২০ সালে ছবিল উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, একই বছর রৌমারী উপজেলার সীমান্তে হাসিনুর রহমান, ২০১৬ সালে ফুলু মিয়া, তাহারুল ইসলাম, নুরল আমিন, নুর ইসলাম, বাহারুল ইসলাম, মনসের আলী, ২০২০ সালে খয়বর আলী, শাহিনুর রহমান ফকির চাঁদ, আখিরুল ইসলাম, ২০২১ সালে হাসিবুর রহমান, সহিবর রহমান, রাশেদুল ইসলাম, ভারতীয় নাগরিক মোহাম্মদ আলী, ২০১৬ সালে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সীমান্তে আব্দুল বারেক, ২০১৭ সালে জাহাঙ্গীর আলম ও ২০১৯ সালে ভারতীয় নাগরিক আখেরুল ইসলাম। ২০২২ সালের ৩ জুলাই ভারত থেকে আসার সময় ফুলবাড়ী উপজেলার ধর্মপুর সীমান্তে কাঁটাতার পাড় হওয়ার সময় বিএসএফ ধাওয়া দিলে দুই শিশু নিয়ে নদী পাড় হওয়ার চেষ্টা করে রইচ উদ্দিন ও তার স্ত্রী ছামিনা বেগম। এসময় তাদের দুই শিশুসন্তান পানি পড়ে নিখোঁজ হয়। দু’দিন পর ভাইবোনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রেীমারীর দাঁতভাঙ্গা সীমান্তে সহিবর নামের একজনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার হয়। সহিবর ভারতীয় গরু চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। সবার ধারণা, গরু পাচারের সময় বিএসএফের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।