নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের ভাদার্ত্তী গ্রাম। গ্রামটি খুবই জন বহুল। গ্রামের পাশ দিয়ে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিস থেকে পুরাতন সাব রেজিষ্ট্রি অফিস পর্যন্ত একটি সড়ক চলে গেছে। সড়কটি দীর্ঘদিন খানাখন্দে থাকায় স্থানীয়দের ব্যবহারের অনপুযোগী হয়ে পড়ে ছিল। অবশেষে স্থানীয় সাংসদ মেহের আফরোজ চুমকি এমপি’র হস্তক্ষেপে সড়কটি সংস্কারের সুযোগ পায়। খবরে গ্রামবাসীর মনে আনন্দের জোয়ার নেমে আসে। কিন্তু সেই আনন্দকে ছাপিয়ে বেড়েছে ওই সড়কে দূর্ঘটনার আশঙ্কা। কারণ ১ কিলোমিটারের বেশী লস্বা সড়কটিতে নেই কোন গতিরোধক বা স্পিড বেকার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নটিকে ২০১০ সালে পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পৌরসভা ঘোষণার পর ওই রাস্তাটির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। পরে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে পূনরায় মনোনীত হয়ে স্থানীয় মানুষের ভালবাসায় তাদের ভোটে সাংসদ নির্বাচিত হন শহীদ ময়েজউদ্দিন কন্যা মেহের আফরোজ চুমকি। ওই সময় পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিস থেকে পুরাতন সাব রেজিষ্ট্রি অফিস পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। পরে এমপি’র নির্দেশনায় ২০১৪ সালে সড়কটি কার্পেটিং করা হয়। কিন্তু ওই সড়ক দিয়ে লড়ি, ট্রাকসহ ভারি যান চলাচল এবং সড়কে পানি ঝমে থাকার কারণে এক বছর গুরতেই সড়কটি আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এর পর থেকে বাড়তে থাকে ওই সড়কের পাশে বসবাসকারী এবং সড়ক দিয়ে চলাচলকারী মানুষের দুর্ভোগ। ২০১৪ সালের পর ২০২১ সালে জুনে আবারও সড়কটি সংস্কারে অনুমতি পায় কালীগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ। এবারও স্থানীয় সাংসদের হস্তক্ষেপ লাগে রাস্তাটি সংস্কার করতে। স্থানীয় এক ছাত্র নেতা আমির হামজার নামে সড়কটি নাম করণ করা হয়। ৪২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুরমা এন্টারপ্রাইজ।
স্থানীয় আরো কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে সোজা রাস্তা হচ্ছে এই আমির হামজা সড়ক। সড়কটির এক পাশে দাঁড়ালে আরেক পাশ দেখা যায়। তাই খুব দ্রুত গতি নিয়ে এই সড়কে যান চলাচল করে। বিশেষ করে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মোটরসাইকেল আরোহীরা বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। যে কারণে হরহামেশাই সড়কে ঘটছে দূর্ঘটনা। খালি হচ্ছে বাবা-মায়ের কোল। কিংবা এতিম হচ্ছে সন্তান। অনেকে আবার পঙ্গুত্ব বরণও করেছেন।
তারা আরো জানান, এ সড়কে আগে থেকেই কিছু গতিরোধক বা স্পিড বেকার ছিল। কিন্তু নতুন করে সংস্কার করার সময় তা বাদ দেওয়া হয়েছে। তারা মনে করছেন আগে গতিরোধক বা স্পিড বেকার থাকা সত্বেও ওই সড়কে দূর্ঘটনা ঘটেছে, এখন তা না থাকায় আগেরও চেয়ে দূর্ঘটনা বাড়বে বলে মনে করছেন। তাই আর যেন কোন সন্তান বাবা-মা হারা না হয় কিংবা আর যেন কোন বাবা-মা সন্তান হারা না হয় সেজন্য বিষয়টির ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
সড়কের পাশে বাড়ী ভাদার্ত্তী গ্রামের বাসিন্দা মো. মুজিবুর রহমান (৫৫)। কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, তার মা জোবেদা খাতুন রাস্তায় চলাচল করতে খুবই ভয় পেতেন। নিজে চলতেন রাস্তার সাইড দিয়ে আবার তাদেরকেও পরামর্শ দিতেস একইভাবে চলাচলের। কিন্তু সচেতন সেই মানুষটিকে হার মানতে হয়েছে মোটরসাইকেলে বেপরোয়া গতির কাছে। একদিন রাস্তার সাইড দিয়ে নিজ বাড়ী থেকে পাশের বাড়ী যাচ্ছিলেন। এ সময় বেপরোয়া গতির একটি মোটরসাইকেল তাকে ধাক্কা দিয়ে পাশের খাদে ফিলে দেয়। সেখান থেকে স্থানীয় হাসপাতাল ও পরে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান।
ভাদার্ত্তী গ্রামের একই সড়কের পাশে বাড়ীর বাসিন্দা মো. নুরু উদ্দিন (৪৫)। কথা হয় তার সাথেও। তিনি জানান, একদিন তার ৬/৭ বছরের ছেলে রাস্তার পাশে খেলাধুলা করছিল। হঠাৎ অপ্রাপ্ত বয়স্ক এক মোটরসাইকেল আরোহীর বেপরোয়ার গতি গাড়ীটি তার সন্তানকে চাপা দেয়। ঘটাস্থলেই তার ছেলে মারা যায়।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুরমা এন্টারপ্রাইজ সত্বাধীকারী মেজবাউদ্দিন মাসুম বলেন, আসলে সড়কটি সংস্কার কাজ করার দায়িত্ব আমি পেলেও যা করা হয়েছে তা পৌরসভার কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাকে বললে সড়কে কয়েকটি গতিরোধক বা স্পিড বেকার দেওয়া কোন বিষয় ছিল না। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলারও অনুরোধ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির জানান, আসলে কোন সড়কে গতিরোধক বা স্পিড বেকার দিতে হলে ওই সড়কে লোক সমাগম বেশি থাকতে হয়। যেমন বাজার, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা। যেহেতু এগুলো নেই তাই গতিরোধক বা স্পিড বেকার দেওয়ারও সুযোগ নেই। রাস্তার পাশে বাড়ী থাকলে সবাইকে সচেতন হওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
কালীগঞ্জ পৌরসভার সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র এস.এম রবীন হোসেন বলেন, আসলে এ ব্যাপারে আমার জানা নেই। আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি মাত্র। তবে বিষয়টি নিয়ে তিনি পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক জানান, প্রয়োজন এবং দূর্ঘটনা আশঙ্কা থাকলে অবশ্যই গতিরোধক বা স্পিড বেকার দেওয়া দরকার। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা করবেন বলেও জানান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।