জুমবাংলা ডেস্ক : গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ডালেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাহাবউদ্দিনের বিরুদ্ধে ১৪ বছর বয়স জালিয়াতি করে চাকরি চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসএসসি সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৬০ সালের ৩১ জানুয়ারি। সেই হিসেবে এ বছর ৩১ জানুয়ারি তার ৬০ বছর বয়স পূর্ণ হয়েছে। অথচ সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সর্বোচ্চ ৫৯ বছর পর্যন্ত চাকরি করতে পারেন। অর্থাৎ গত বছর তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল, তবে বয়স জালিয়াতি করে এখনো তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাহাবউদ্দিন ১৯৭৪ সালে উপজেলার সাতখামাইর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঢাকা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি সনদে তার জন্ম সাল দেওয়া আছে ১৯৬০ সন। তার এসএসসি রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৩৬৬৭৪/১৯৭২ এবং রোল নম্বর ৩২৩৪২। পরবর্তীতে তিনি একই বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন।
সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের পড়ালেখা শেষে তিনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীন ১৯৮৮ সালে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেন। যেখানে নিজের জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে ১ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৩ সাল উল্লেখ করেন সাহাবউদ্দিন। এভাবে নিজের বয়স ১৩ বছর কমিয়ে আনেন এই শিক্ষক।
পরবর্তীতে এই জন্ম তারিখই তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লেখ করেন, যার ফলে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে তার এসসি সনদের সাল মেলালে দাঁড়ায় যে, তিনি মাত্র এক বছর বয়সে এসএসসি পাস করেছেন।
শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, সাহাবউদ্দিন ১৯৯৭ সালে ডালেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। সেসময় দাখিল পরীক্ষার সনদের জন্ম তারিখ অনুযায়ী তার বয়স উল্লেখ করা হয় ২৪ বছর। অথচ এসএসসি সনদ অনুযায়ী তখন তার বয়স হয়েছিল ৩৭ বছর।
পরবর্তীতে ২০১৩ সালে দাখিল পাসের সনদ অনুযায়ী চাকরি জাতীয়করণ করেন সাহাবউদ্দিন। যার ফলে ২০৩৩ সালে তার অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে। এসএসসি সনদ অনুযায়ী তখন তার বয়স হবে ৭৩ বছর। প্রকৃত বয়সের তথ্য আড়াল করেই ১৪ বছরর সরকারি সুযোগ নিতে যাচ্ছেন সাহাবউদ্দিন।
সাতখামাইর উচ্চবিদ্যালয় থেকে সাহাবউদ্দিনের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন একই এলাকার মনসুর আলম নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘১৯৭৪ সালে একই সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করলাম। পরবর্তীতে পড়ালেখা শেষে আমার চাকরি হয় পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে। আমার চাকরি শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। অথচ সমবয়সী সাহাবউদ্দিনের চাকরি নাকি রয়েছে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। এভাবে বয়স জালিয়াতি করার অর্থই হচ্ছে সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা নেওয়া।’
অভিযুক্ত শিক্ষক সাহাবউদ্দিন বয়স জালিয়াতির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমার প্রকৃত বয়স বেশি হলেও মানুষ বাঁচার তাগিদে অনেক কিছুই করে। ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়ায় বিষয়টি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি।’
স্থানীয় শিক্ষাবিদ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘একজন ব্যক্তি দুটো মাধ্যমে শিক্ষা অর্জন করতেই পারেন। তবে তথ্য বিভ্রাট করা একটি বিরাট প্রতারণা। দুটি মাধ্যমের পরীক্ষায় তিনি বয়সের বিরাট ব্যবধান করেছেন। তিনি সরকারি চাকরি লাভের জন্যই এখানে প্রকৃত বয়সের তথ্য গোপন করে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধাদি নিচ্ছেন। একজন শিক্ষকের এমন ভূমিকা লজ্জাজনক।’
গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন জানান, তিনি মাদ্রাসা বোর্ডের সনদ দিয়ে মূলত চাকরিতে যোগদান করেছেন। বিধি অনুযায়ী তার কাগজপত্র সঠিক থাকলেও ১৯৭৪ সালে অভিযুক্ত এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাসের বিষয়ে তার জানা নেই। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।