মহাকাশ গবেষণায় ২০২৪ সাল ছিল বেশ ঘটনাবহুল। প্রযুক্তিগত সক্ষমতার কারণে মানুষ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও ভালো করে দেখতে পারছে মহাবিশ্ব। জানতে পারছে মহাকাশের অজানা ইতিহাস, মিলছে জটিল সব প্রশ্নের উত্তর। মহাকাশ নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে এ বছর।
মঙ্গলের সবচেয়ে নিখুঁত মানচিত্র
চলতি বছর লাল গ্রহ মঙ্গলের রঙিন মানচিত্র প্রকাশ করেছে চীনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা সিএনএসএ। তাদের পরিচালিত মঙ্গল অভিযান তিয়ানওয়েন-১-এর মাধ্যমে ছবি সংগ্রহ করে এ মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। মঙ্গলের নতুন এ মানচিত্রের প্রতি পিক্সেল ধারণ করছে মঙ্গলের প্রায় ৭৬ মিটার জায়গা।
এর আগে প্রতি পিক্সেলে গ্রহটির ১ কিলোমিটার বা তার বেশি অঞ্চল দেখাতে পেরেছিলেন বিজ্ঞানীরা। ১ পিক্সেলে ১ কিলোমিটার জায়গা দেখানোকে বলা হয়, ১ কিলোমিটার স্থানগত বা স্পেসিয়াল রেজ্যুলুশন। সেদিক থেকে এটা মঙ্গলের সবচেয়ে বেশি রেজ্যুলুশনের মানচিত্র। তিয়ানওয়েন-১ অভিযানের মূল মহাকাশযানে ছিল একটি অরবিটার বা কক্ষপথযান, দুটি ডিপ্লয়েবল ক্যামেরা, একটি রিমোট ক্যামেরা, একটি ল্যান্ডার ও ঝাউরং রোভার। এসবের পাশাপাশি ছিল ১৪টি অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি।
চাঁদে জাপানের ‘মুন স্নাইপার’
চলতি বছর শুরুর দিকে চাঁদে সফলভাবে অবতরণ করে জাপানের মুন স্নাইপার। ১৯ জানুয়ারি চাঁদের মাটিতে ল্যান্ডার অবতরণ করার সঙ্গে সঙ্গে একটা নতুন রেকর্ড করেছে জাপান। এর আগে যে চারটি দেশ চাঁদে ‘সফলভাবে’ অবতরণ করেছে, তাদের কেউ নিজেদের ইচ্ছেমতো নির্দিষ্ট স্থানে ল্যান্ডিং করাতে পারেনি। বরং তাদের ল্যান্ডার নির্দিষ্ট লক্ষ্যের কাছাকাছি কোনো জায়গায় অবতরণ করেছে। ঠিক কাছাকাছি কোন জায়গায় অবতরণ করবে, তা আগে বোঝার উপায় ছিল না। কিন্তু জাপান এই প্রথম নিজেদের ইচ্ছায় নির্দিষ্ট স্থানে ল্যান্ডার অবতরণ করাতে পেরেছে।
মহাবিশ্বের বিশদতম মানচিত্র
চলতি বছর মহাকাশের সবচেয়ে বিস্তারিত এক্সরে মানচিত্র প্রকাশ করেছেন জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক সোসাইটির জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। এ জন্য ইরোসিটা এক্সরে টেলিস্কোপ ব্যবহার করে প্রচুর ডেটা সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। এ মানচিত্রে স্থান পেয়েছে ৭ লাখের বেশি অতি ভারী কৃষ্ণগহ্বর এবং গভীর মহাকাশের লাখো ‘এক্সোটিক’ বা দুর্দান্ত বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তু। সঙ্গে গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে দেখা গেছে অদ্ভুত রহস্যময় গ্যাসসেতু।
‘ইরোসিটা অল স্কাই সার্ভে’ নামের এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ সময় গবেষকেরা আকাশে ১৭০ মিলিয়ন বা ১৭ কোটির বেশি উচ্চশক্তির ফোটন কণা—যেগুলো আসলে এক্স-রশ্মির ফোটন—শনাক্ত করেন। পরে এ থেকে থেকে দূর মহাকাশের প্রায় ৯ লাখ বস্তু চিহ্নিত করেন তাঁরা।
চাঁদের অন্ধকার পাশের নমুনা সংগ্রহ
চাঁদ থেকে হরহামেশা নমুনা নিয়ে ফেরে নানা দেশের নভোযান। তবে সবই চাঁদের উত্তর মেরু থেকে। ১৯৬৯-৭২ সালের মধ্যে যে ১২ নভোচারী চাঁদে গেছেন, তাঁরাও চাঁদের উত্তর মেরুতে নেমেছিলেন। তবে এই প্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে চীন। ২৫ জুন চাঙ-ই ৬ মিশনে চীন এ সফলতা অর্জন করেছে। সাধারণরত চাঁদের একপাশ সবসময় থাকে আলোকিত এবং একপাশ অন্ধকার। আমরা সমসময় আলোকিত অংশই দেখি। ফলে অন্ধকার পাশে কি আছে, সেখানে পানি থাকার সম্ভাবনা কতটা, তা সঠিকভাবে জানা ছিল না। চাঁদের উল্টো বরফ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।