২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামিদের খালাসের বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের রায় আজ ঘোষণা করতে যাচ্ছে আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ বহুল প্রত্যাশিত এই রায় দেবেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নারকীয় ওই হামলা চালানো হয়। লক্ষ্য ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। প্রাণ হারান মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন, আহত হন শতাধিক কর্মী-সমর্থক। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এই হামলাকে এখনো কলঙ্কজনক ও ভয়াল অধ্যায় হিসেবে দেখা হয়।
হামলার পর মতিঝিল থানায় দুটি মামলা হয়—একটি হত্যা মামলা, অন্যটি বিস্ফোরক আইনে। শুরু থেকেই তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করা ও তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার অভিযোগ ছিল। পরে এক-এগারোর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সিআইডি নতুন করে তদন্ত শুরু করে এবং ২০০৮ সালে ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর সিআইডি আবারও তদন্ত চালায়। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জন নতুন আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর আদালত রায় ঘোষণা করে। তাতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরও ১৯ জন পান যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এছাড়া ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করলে দীর্ঘ শুনানির পর ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। সেখানে বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে সব আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয় একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর।
হাইকোর্ট তাদের রায়ে স্বীকার করে, ২১ আগস্টের হামলা ছিল ভয়াবহ ও মর্মান্তিক। তবে তদন্তে স্বাধীনতা ও যথার্থতা ছিল না, বরং দুর্বলতা ও অসঙ্গতি ছিল। এমন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত না হওয়ায় ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। আদালত আরও বলেন, নতুন করে পেশাদার সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এজন্য মামলার নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের খালাসের রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। তারা দাবি তোলে, বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজাই যথাযথ ছিল এবং সেটিই বহাল রাখা উচিত। অপরদিকে আসামিপক্ষ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার পক্ষে সওয়াল করে।
আপিল বিভাগে গত ১৭ জুলাই থেকে এ মামলার শুনানি শুরু হয়। এরপর ৩১ জুলাই, ১৯, ২০ ও ২১ আগস্ট পাঁচ দিন শুনানি চলে। শুনানি শেষে আদালত আজকের দিনটি রায় ঘোষণার জন্য নির্ধারণ করে।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সাদাত মো. সায়েম ভূঞা ও সাদিয়া আফরিন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের হয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও শিশির মনির।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।