জুমবাংলা ডেস্ক : চলতি বোরো মৌসুমে হাওর এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে আট লাখ টন ধান কিনবে সরকার। লটারির মাধ্যমে এই ধান কেনা হবে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের হাওরে ধান কাটা পরিদর্শন শেষে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেছেন। তিনি জানান, ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে লটারিতে মধ্যস্বত্ব ভোগী, রাজনৈতিক প্রভাব, সামাজিক প্রভাব খাটিয়ে কোনও কিছু করার সুযোগ নেই।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের তালিকা করে দিয়েছি। যারা আমন মৌসুমে ধান দিয়েছেন তারা বোরো মৌসুমে ধান দিতে পারবেন না। বোরো চাষিদের মধ্যে লটারি করে ধান নেওয়া হবে। ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে লটারিতে মধ্যস্বত্ব ভোগী, রাজনৈতিক প্রভাব, সামাজিক প্রভাব কোনও কিছু করার সুযোগ নেই। ২২টি জেলায় কম্পিউটারের মাধ্যমে লটারি করা হবে। সত্যিকারের কৃষক এবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ধান দিতে পারবেন। আমরা সেই ম্যাকানিজম করেছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার কৃষিখাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। দেশের খাদ্য উৎপাদনে হাওর এলাকার কৃষকের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। করোনা সংকটের কারণে হাওর এলাকায় ধান কাটার শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছিল। সরকার প্রশাসনের সহযোগিতায় বাইরের জেলাগুলো থেকে শ্রমিক হাওর এলাকায় নিয়ে আসছে। তারা স্বাস্থ্য বিধি মেনে হাওরে ধান কাটার কাজ করছেন। হাওরের ধান দ্রুত কেটে নেওয়ার জন্য কৃষককে ভর্তুকি দিয়ে সরকার হারভেস্টার মেশিন দিয়েছে। ধান কাটার সময় বজ্রাঘাতে নিহত কৃষকের পরিবারকে এক লাখ টাকা সহযোগিতা করবে। তাদের পরিবারের লোকসংখ্যা বেশি হলে দুই লাখ টাকা দেওয়া হবে। কৃষিখাতকে গতিশীল রাখতে স্বল্প সুদে ঋণ ও প্রণোদনা দেওয়া হবে যাতে কৃষক সর্বোচ্চ উৎপাদন করতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বলছে, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। তাই ওই সব দেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এজন্য আওয়ামী লীগ সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।’
মাঠের কৃষকদের উৎসাহ দিতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মাঠে ধান কাটছেন বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান ফসল ধান। এদেশে আমন, বোরো, আউসসহ তিনটি মৌসুমে ধান উৎপাদন হয়। বোরো মৌসুম হলো দেশের সবচেয়ে বড় মৌসুম। এসময় দুই কোটি টন ধান উৎপাদন হয়। যা দেশের ফসল উৎপাদনের ৬০ ভাগ। দেশের হাওর এলাকায় প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। হাওর এলাকা থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ টন ধান পাওয়া যায়। বোরো ধান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ অনেক সময় উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে হাওর এলাকায় বন্যা হয়। বন্যার কারণে হাওরের পুরো ধান নষ্ট হয়ে যায়। ২০১১ সালে ও ২০১৭ সালে হাওরে ফসল ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। হাওরের ধান হারালে সারা দেশের উৎপাদনের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়বে। এজন্য হাওরের ধান কাটার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।‘
বলেন, ‘সরকার স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য প্রয়োজন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ভালো চিকিৎসার প্রয়োজন। এই দুটি খাতে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সফর উদ্দিনসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।