জুমবাংলা ডেস্ক : লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থানার দূর্গাপুর গ্রামের মৃত মনির হোসেনের ছেলে জাকির হোসেন ব্যাপারি। তার ডাক নাম রাব্বি। তিনি কোনো চাকরি বা ব্যবসা করেন না। তবুও দামি দামি পোশাক পড়ে ব্রান্ডের গাড়িতে চড়ে ভোলাতেন সুন্দরী তরুণীদের। তার বর্তমান ঠিকানা আহসান মোল্লা রোড, আইচপাড়া, টঙ্গী।
বিয়ে আর প্রতারণার মধ্যে দিয়েই চলছিল রাব্বির জীবন। তার বিয়ে করার আসল উদ্দ্যেশ ছিল সঙ্গম ও গোপনে ভিডিও ধারণ করে প্রতারণা করা। তিনি বিয়ে করেছেন ২৮৬টি। রাব্বি যখন প্রথম বিয়ে করেন তখন তার বয়স ছিল একুশ বছর। এখন পয়ত্রিশ। ২১ থেকে ৩৫ এই ১৪ বছরের মধ্যে মোট ২৮৬ বিয়ে করেন তিনি।
রাব্বির বিরুদ্ধে গত বুধবার প্রতারণার অভিযোগে তেজগাঁও থানায় মামলা করেন এক তরুণী। ওই মামলায় রাজধানীর মনিপুরি পাড়া এলাকা থেকে তেজগাঁও থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে দুইদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এতে নিজের প্রতারণার কাহিনী অকপটে স্বীকার করেন রাব্বী।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রাব্বি জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন সময় নিজেকে অবিবাহিত এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। তাদের মধ্যে অনেককে তিনি বিভিন্ন সময় বিয়ে করেন। বিয়ের পর জাকির নববধূর বাসায় থাকতেন এবং কৌশলে তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন। এসব বিয়ের খবর তিনি কোনো স্ত্রীকে জানতে দিতেন না। সবারই ব্যক্তিগত ভিডিও ধারণ করতেন। কেউ প্রতিবাদ করলে ওই সব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখাতেন।
অভিযোগ দেয়া ওই তরুণী জানান, গত ৩১ অক্টোবর ফেসবুকের মাধ্যমে রাব্বির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন রাব্বি। গত ৭ নভেম্বর একজন হুজুর ডেকে তাকে বিয়েও করেন তিনি। বিয়ের পর রাব্বি নানা সমস্যার কথা বলে ওই তরুণীর কাছ থেকে প্রায় ৪৫ হাজার টাকাও হাতিয়ে নেন।
তেজগাঁও থানার ওসি শামীম আরা রশিদ তালুকদার বলেন, রাব্বি একজন প্রতারক। বিয়ে আর প্রতারণার মধ্যে দিয়েই চলছিল রাব্বির জীবন। তিনি ফেসবুকে নিজেকে লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী হিসেবে পরিচয় দিতেন। ২০০৫ সাল মাত্র ২১ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করেন। এরপর থেকে প্রতি মাসেই তিনি একটি করে বিয়ে করেছেন। তার বিয়ে করা এক স্ত্রীসহ ( শাপলা বেগম) একটি চক্র আছে। তারপর শ্বশুর বাড়ি থেকে নানা কায়দায় অর্থ হাতিয়ে নেয়। এটাই তার মূল ব্যবসা।
ওসি বলেন, মিরপুরের এক নারী জাকিরের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করেন , মামলা ২২(১১) ১৮। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই আমরা তাকে গ্রেপ্তার করে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছিলাম। রিমান্ড শেষে গতকাল রোববার দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, প্রতারণার ফাঁদ পেতে তরুণীদের সর্বস্ব লুটে নিতে রাব্বির রয়েছে সিন্ডিকেট চক্র। সংঘবদ্ধ ওই চক্রে রয়েছে নকল কাজী ও মৌলভি। এছাড়া চক্রের কিছু নারী-পুরুষ নিজের মা-বাবা ও ভাইবোন বানিয়ে জাকির তরুণীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। এভাবে বিয়ের নামে গত দুই বছরে জাকির ২২ ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী নারীর সঙ্গে সঙ্গম করেছেন।
তেজগাঁও থানা সূত্র জানায়, ইউটিউবে গান শুনিয়ে সুন্দরী নারীদের আকৃষ্ট করতো এই যুবক। কোনো কোনো সময় মোবাইল ফোনের ম্যাসেঞ্জারে ছবি কিংবা ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়ে নারীদের ঘনিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করতো সে। নারী পুরুষের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি টার্গেটকৃত সুন্দরী নারীদের মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দিতো। গভীর রাতে ফোনে দীর্ঘ সময় কথা বলে নানা কৌশলে নারীদের ফুসলানোর চেষ্টাও করতো এই জাকির।
অনেক সময় বিবাহিত নারীদের স্বামীর সাথে বনিবনা না হলে মধ্যস্ততার কথা বলে ওই নারীকেই বিয়ের প্রস্তাব দিতো সে। আবার আর্থিকভাবে দরিদ্র নারীদের সহায়তার কথা বলেও অসহায় নারীদের দুর্বলতার সুযোগ নিতো সে।
তেজগাঁও থানার ওসি শামীম অর রশিদ তালুকদার জানান, সম্প্রতি ফেসবুকে বিয়ের নামে আরেকটি প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন রাব্বি। অবশ্য এবার তিনি নিজেই ফাঁদে পড়েন, আগে ভাগেই প্রতারণার শিকার নারী বুঝে ফেলেন রাব্বির উদ্দেশ্য।
ওসি জানান, ভুক্তভোগী তরুণীদের মাধ্যমে পাওয়া গেছে রাব্বির তিনটি বিয়ের কাবিনসহ তার প্রতারণায় ব্যবহৃত অসংখ্য ছবি, ফেসবুকের চ্যাটবক্সে কথোপকথনের স্ত্রিনশট ও ভিডিও ক্লিপ।
এদিকে জাকিরের প্রতারণার শিকার হয়ে বিয়ের নামে এ পর্যন্ত যেসব নারী তাদের অর্থ সম্পদ খুঁইয়েছেন তারা এখন জাকিরের সাথে বিয়ের পরিচয়ও গোপন করার চেষ্টা করছেন। বিয়ের নামে জাকির অসংখ্য নারীর সাথে মেলামেশার খবর বিভিন্ন মিডিয়াতে চাউর হওয়ার পর প্রথমে অনেক নারী থানায় স্বশরীরে এসে কিংবা ফোনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দাখিল করলেও এখন তারা নিজেরাই আর পরিচয় দিতে চাচ্ছেন না।
অনেকে লোকলজ্জার ভয়েই জাকিরের সাথে তাদের বিয়ের বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করছেন। দু-একটি গণমাধ্যমে জাকিরের স্ত্রী হিসেবে কয়েকজন নারীর নাম আসায় তারা রীতিমতো নাখোশও হয়েছেন। এসব নারীরা চাননা তাদের নাম বা পরিচয় কোনোভাবে প্রকাশ বা প্রচার হোক। এতে তাদের সামাজিক মর্যাদা বা আগামী দিনের পথ চলায় সমস্যা হবে বলেও তারা আশঙ্কা করছেন। ফলে তারা সবাই চাইছেন তাদের নাম পরিচয় গোপনই থাক।
এ বিষয়ে রোববার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৌফিক আহমেদ জানান, জাকিরের বিরুদ্ধে যেসব নারীরা অভিযোগ করছেন তারা কেউই চান না নিজেদের পরিচয় প্রকাশ হোক। তাই তারা কেউ কোনো মিডিয়াতে কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না। আমরা মামলার তদন্তের স্বার্থে নারীদের পরিচয় গোপন রেখেই তদন্ত কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।