আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে গত ৭ মাসে দেশে ফিরে এসেছেন ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৮২ জন প্রবাসী বাংলাদেশি। গত ১ এপ্রিল থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে বিশ্বের ২৯টি দেশ থেকে এসব প্রবাসী বাংলাদেশিরা কর্মী দেশে ফিরেছেন। আর মহামারিতে বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের আর্থ-সামাজিক পুর্নবাসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০০ কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও গেলো ৮ মাসে ১৩৫ জন প্রবাসী মাত্র ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে আরও ৪শ’ ৯৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারবেন দেশে ফেরত প্রবাসীরা।
জানা গেছে, করোনার মধ্যে গত ৭ মাসে দেশে ফিরে এসেছেন ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৮২ জন মানুষ দেশে ফিরেছেন। তাদের আর্থ-সামাজিক পুর্নবাসনে ৫০০ কোটি টাকা ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আড়ইশ কোটি টাকা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে জমা হয়েছে। ফেরত আসা প্রবাসীদের কৃষি, মৎস্য ও বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে চাইলে ৪ শতাংশ সরল সুদে ঋণ চালু করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। গেলো ৮ মাসে মাত্র ১৩৭ জন প্রবাসী স্বল্প সুদে ঋণ চেয়ে আবেদন করেছেন। এরমধ্যে ১৩৫ জনকে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। কিছু প্রবাসী ঋণের আবেদন বাতিল করেছেন। করোনাকালীন সময়ে স্বল্প সুদে প্রবাসীদের ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের মধ্যে যারা বৈধভাবে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন এবং করোনায় মৃত প্রবাসীর পরিবারকে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে। প্রবাসীদের অনেকে দেশে ফিরলেও কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় ঋণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকতে পারেন। কারণ দক্ষ ও স্বচ্ছ ঋণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বিভিন্ন অংশীজনকে সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ও এই ঋণ দান কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে।
প্রবাসীদের ৪ শতাংশ সরল সুদে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে ঋণ বিতরণ শুরু করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। ঋণ পাবে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা। বিশেষ করে কৃষি খামার, মাঝারি ধরনের কৃষিনির্ভর শিল্প, মুরগির খামার, মৎস্য চাষ, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, সৌর জ্বালানি, তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ, একটি বাড়ি একটি খামার, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, গরু মোটাতাজাকরণ, দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামার প্রকল্পে ঋণ দেয়া হচ্ছে।
প্রবাসীদের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কম কেন এমন প্রশ্নে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, আর্থ-সামাজিক পুর্নবাসনে প্রবাসীদের অনেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার চেয়ে বিদেশে যাওয়ার আগ্রহ বেশি। এজন্য ঋণ নেওয়ার আবদেন কম পড়ছে। কিছু প্রবাসী ঋণ নেওয়ার জন্য আবেদন করে তা বাতিল করেছেন।
তিনি আরও বলেন, করোনার মধ্যে ৭ হাজার প্রবাসীকে বিভিন্নভাবে কাউন্সিলিং করা হয়েছে। তাদের ফেস টু ফেস তথ্য নিয়েছি। বিশ্বে করোনার স্থিতিশীলতা আসায় প্রবাসীরা ফের বিদেশে ফিরে যাচ্ছেন। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য প্রবাসীদের কিছু আবেদন উপজেলা পর্যায়ে আছে, তা যাচাই-বাছাই চলছে। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে ঋণ নেওয়া হবে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আবেদন ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান এই কর্মকর্তা।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, প্রবাসীদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করে দিয়েছে। কমিটির প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কমিটিতে আরও রয়েছেন সমাজসেবা কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের কর্মকর্তা একজন থাকেন তিনি হচ্ছেন কমিটির সদস্য সচিব। তারা ঋণের আবেদন যাচাই-বাছাই করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে আবেদন পাঠান। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
করোনা মহামারির কারণে ২৬ মার্চ সৌদি আরব থেকে কুমিল্লার ইয়াসিন মোল্লা দেশে ফেরেন। তিনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে স্বল্প সুদে ঋণ চেয়ে ১৩ জুলাই আবেদন করেছিলেন। পরবর্তীতে আবেদন বাতিল করেন। ইয়াসিন মোল্লা আরটিভি নিউজকে বলেন, সৌদি আরবে যে কোম্পানিতে তিনি কাজ করতেন সেই কোম্পানি ফের যেতে বলছে। তাই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে ঋণ চেয়ে আবেদন করে তা বাতিল করেন। এছাড়া ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দেশে পুর্নবাসন সম্ভব নয়। এসব বিবেচনা করে তিনি ঋণ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বেগম শামছুন নাহার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা দ্রুত যাতে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়ে বিকল্প কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে পারেন সে জন্যই এ ঋণ দেয়া হচ্ছে। সহজ শর্তে ও স্বল্প জামানতে তারা ঋণ পাচ্ছেন। ঋণ পরিশোধ পদ্ধতিও সহজ করা হয়েছে। যাতে ব্যবসা করতে তাদের ওপর বাড়তি কোনো চাপ না পড়ে।
বিদেশ ফেরত কর্মীদের মধ্যে ১ লাখ ৯১ হাজার ১৯৪ জন পাসপোর্টধারী বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে কাজ না থাকা, কাজের বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া, আকামা বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় অবৈধ হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে দেশে ফিরে এসেছেন। আবার বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউটপাস নিয়ে ৩৪ হাজার ৩৮৮ জন কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন। ফেরত আসা কর্মীদের অনেকে আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সংশ্লিষ্ট দেশে ফিরে যেতে পারবেন বলে সূত্র জানায়।
দেশে ফেরা কর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছেন সৌদি আরব থেকে। এই সময়ে সৌদি থেকে এসেছেন ৬০ হাজার ৯৬৯ জন প্রবাসী কর্মী। এর মধ্যে পুরুষ ৫০ হাজার ৪৬৬ জন, আর নারী কর্মী রয়েছেন ১০ হাজার ৪০৩ জন। সৌদি ফেরত কর্মীদের মধ্যে বেশিরভাগই বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউটপাস নিয়ে এবং কাজ না থাকায় ছুটি নিয়ে দেশে ফিরেছেন।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ না থাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরেছেন ৫৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ কর্মী ৫৫ হাজার ৮২ জন। আর নারী কর্মী ফিরেছেন ৪ হাজার ৮৩৮ জন। কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা আবার ওই দেশে ফেরত যেতে পারবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।