আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সবশেষ ২০১৯ সালে রাষ্ট্রীয় সফরে ইতালি সফরে গিয়েছিলেন শি জিনপিং। তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে ইতালির যোগদানের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিতের ওই সফরে বেশিরভাগ সময় তিনি কাটিয়েছেন বিভিন্ন রোমান ঐতিহাসিক স্থাপনা পরিদর্শন ও অপেরার আসরে অংশগ্রহণ করে। পাঁচ বছর পর ইউরোপে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি আবহ বিরাজমান থাকা অবস্থায় এই মহাদেশটিতে সফরে যাচ্ছেন চীনা প্রেসিডেন্ট।
রোববার (৫ মে) ফ্রান্স থেকে তার ছয় দিনব্যাপী ইউরোপ সফর শুরু করছেন শি জিনপিং। খবর ডয়চে ভেলে
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে চীনের উইন্ড টারবাইন ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহের ওপর বাণিজ্য তদন্ত শুরু করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ভর্তুকি সংক্রান্ত তদন্তের অংশ হিসেবে চীনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক নাকটেকের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে সংস্থাটি।
সম্প্রতি গুপ্তচরবৃত্তি সংক্রান্ত অপরাধের দায়ে চীনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছয়জন ব্যক্তিকে আটক করেছে জার্মানি ও যুক্তরাজ্য।
গত মার্চ মাসে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একমাত্র জি-সেভেন জোটভুক্ত দেশ হিসেবে শি জিনপিংয়ের এই প্রকল্পটি থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে ইতালি।
বার্লিন ভিত্তিক জার্মান মার্শাল ফান্ড অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেইটসের সিনিয়র ফেলো নোয়াহ বারকিন বলেন, চীনকে অনেক ইউরোপিয়ান দেশে বহুমাত্রিক হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত ক্ষেত্রে চীন সম্পর্কে উদ্বেগ মোকাবিলায় কতটা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, তা নিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স, সার্বিয়া ও হাঙ্গেরিতে শি জিনপিংয়ের সফরকে তার সমালোচকদের প্রতি একটি জবাব হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ইউরোপের কিছু অংশে চায়নার প্রতি কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি থাকা সত্ত্বেও যে বেশ কয়েকটি দেশ চীনের প্রতি উদারতার নীতি গ্রহণ করেছে, শি জিনপিংয়ের ইউরোপ সফর এটাই প্রমাণ করে।
বেইজিং কথিত বাণিজ্য যুদ্ধ মোকাবিলায় ইউরোপের প্রচেষ্টাকে বাধা দেওয়ার পথ বেছে নেবে। আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ইউরোপ যেন যুক্তরাষ্ট্রের আরও ঘনিষ্ঠ না হয়ে পড়ে, এই বিষয়টিও তারা নিশ্চিত করতে চায়।
শি জিনপিং চমক জাগানোর মতো কোনও ছাড় না দিলে চীন কট্টর সমালোচকদের নেওয়া যেকোনো উদ্যোগের সফলতার মুখ দেখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, শি জিনপিংয়ের এই সফরটিকে সাধারণ একটি সফর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না। তাদের ধারণা, এর সফরেই ইউরোপের দেশ হয়েও কারা চীনের পক্ষ নেবে আর কারা নেবে না তা অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
চীনের নেতা শি জিনপিংয়ের সোমবার (৬ মে) ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ছাড়াও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠকে চায়নার সঙ্গে ফ্রান্সের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন ও বিদ্যমান সম্পর্কের উন্নয়নের ওপর জোর দিতে পারেন শি জিনপিং। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বাসভবনের কয়েকটি সূত্র বলছে, কেবল প্যারিসেই নয়, দুই নেতা পাইরেনিস মাউন্টেইনসেও একান্ত আলোচনায় বসতে পারেন।
চীনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করা ইউরোপের জন্য ক্ষতিকর হবে- বৈঠকে শি জিনপিং তার এই বক্তব্য তুলে ধরবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীনের কথিত অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা ও বাণিজ্য ভর্তুকি সম্পর্কে ইউরোপের উদ্বেগ কমাতে জোর দেওয়ার পাশাপাশি বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট কমাতে চীনের ইলেক্ট্রিক যানবাহনগুলোও (ইভি) যে বড় ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে আলোকপাত করবেন শি জিনপিং।
ইউরোপ-চীন সম্পর্কের একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে এই সপ্তাহের শুরুতে বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে থাকতে পারে ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়টি। সেখানে শি জিনপিং চীনের নিরপেক্ষ ও শান্তিপ্রিয় অবস্থান প্রমাণ করার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চলতি মাসে চীন সফরের পরিকল্পনা করছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে চীন আদতে রাশিয়ারই পক্ষ নিচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্রান্স সফরের মতো শি এর সার্বিয়া ও হাঙ্গেরি সফর এতটা গুরুত্ব বহন নাও করতে পারে।
বেলগ্রেডে চীনা অ্যাম্বাসিতে ন্যাটো জোটের বোমা হামলায় তিনজন নিহত হওয়ার ২৫তম বর্ষপূর্তিতে শি জিনপিং সেখানে সফরে যাবেন।
শি জিনপিং তার এই সফরে বেলগ্রেড ও বুদাপেস্ট উভয় জায়গাতেই চীনের বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাইরের দেশ সার্বিয়াকে চলতি সপ্তাহে তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে বেইজিং। প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুচিচের অধীনে দেশটি নিয়মিতই চায়নার সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও জোরদার করেছে।
হাঙ্গেরি সফরে শি জিনপিং দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার উদ্যোগ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।